বারবার ব্লাকমেইলিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে খুন

যশোরে বুকভরা বাঁওড় পাড়ে নারীর মরদেহ উদ্ধার, সাবেক স্বামী আটক

এখন সময়: সোমবার, ৬ মে , ২০২৪, ০৯:৪৪:৪৩ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক : সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থেকে যশোরে এনে সাবেক স্ত্রীকে হত্যার ঘটনায় মৃন্ময় ভদ্র ওরফে নিলয় (৩২) নামে এক ব্যক্তি আটক হয়েছে। সাবেক স্ত্রী খাদিজা ওরফে মিতুকে (২৫) শ্বাসরোধে হত্যার পর সদরের বুকভর বাঁওড়ের পাস ফেলে রাখে নিলয়। মরদেহ উদ্ধারের পর তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিলয়কে আটক করে ডিবি পুলিশ। বুধবার সকালে বাঁওড়টির বেড়িবাঁধ সংলগ্ন একটি ধান ক্ষেতের পাশ থেকে ওই নারীর মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থল থেকে ভাঙা দুইটি মোবাইল ফোন ও একটি হাতপাখা উদ্ধার এবং মৃন্ময়ের মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।
আটকের পর ডিবি পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের কাছে হত্যার কারণ সম্পর্কে দেয়া বিবরণে নিলয় উল্লেখ করেন, একের পর এক ব্লাকমেইলিং এর শিকার হয়ে সাবেক স্ত্রী খাদিজা ওরফে মিতুকে হত্যা করেন।
নিহত নিতু সাতক্ষীরার পাটকেলঘাটা থানার ধানদিয়া চৌরাস্তা এলাকার আজগর আলী সরদারের মেয়ে। নিলয় ওরফে মৃন্ময় সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার দামোদারকাঠি গ্রামের মদন ভদ্রের ছেলে। বর্তমানে তিনি যশোর সদর উপজেলার চান্দুটিয়া গ্রামে বসবাস করেন।
ডিবি পুলিশ জানায়, বুধবার সকালে বুকভরা বাঁওড়ের বেড়িবাঁধ সংলগ্ন একটি ধান ক্ষেতের পাশে এক নারীর মরদেহ পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা পুলিশের কাছে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরনে নতুন শাড়ি ও হাতে শাঁখা ছিল। মরদেহের পাশে দুৃইটি ভাঙা মোবাইল ফোন পাওয়া যায়। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ওই নারীর পরিচয় ও হত্যাকারী মৃন্ময়কে শনাক্ত করে তার চান্দুটিয়ার বাড়ি থেকে আটক করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে পুলিশের কাছে হত্যার কথা স্বীকার ও কারণ বর্ণনা করে।
পুলিশ জানিয়েছে, খাদিজা একজন মুসলিম পরিবারের সন্তান। সে সাতক্ষীরা এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ-গান করতো। এক সময় ধর্মান্তরিত হয়ে সনাতন ধর্ম গ্রহণ করে। খাদিজা থেকে হয় মিতু কর্মকার। ধর্মান্তরিত হওয়ার পর সে একাধিক বিয়ে করে। আর প্রত্যেকবার প্রতিজনের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেয়।
পুলিশ আরো জানায়, সাতক্ষীরার স্থানীয় একটি পার্কে মিতুর সাথে নিলয়ের বছর চারেক আগে পরিচয় হয়। সেখান থেকে প্রেম ও বিয়ে। বিয়ের পর তাদের অনেক অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও মোবাইল ফোনে ধারণ করে মিতু। একই ভাবে অন্তরঙ্গ সব ছবি দেখিয়ে আগের স্বামীদের ব্লাকমেইলিং করে টাকা আদায় করতো। ফলে বছর তিনেক আগে তাদের বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। পরে ফের একাধিক বিয়ে করে মিতু। তাদের প্রত্যেকের কাছ মিতু থেকে মোটা অংকের টাকা নেয়।
এরপর একের পর এক ব্লাকমেইলিংয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেন মৃন্ময়। বাধ্য হয়ে তাকে খুনের পরিকল্পনা করে। টাকা দেয়ার কথা বলে গত মঙ্গলবার রাতে পাটকেলঘাটা থেকে মিতুকে মোটরসাইকেলে করে যশোরের চান্দুটিয়া গ্রামের নিয়ে আসে। এরপর বাড়ির পাশে বাঁওড়ে তারা রাতের বেলায় ঘুরতে যায়। রাত ১১টার দিকে বাঁওড়ের বেড়িবাঁধের পাশে বসে বুকের কাছে টেনে নিয়ে নিলয় শ্বাসরোধে মিতুকে হত্যা করে। এরপরর মিতুর কাছে থাকা দুইটি ফোন ভেঙে ফেলে মৃন্ময় বাড়িতে চলে যায়।