কালিগঞ্জে ৬৪ চেয়ারম্যান প্রার্থীর ৩২জনই জামানত হারালেন

এখন সময়: শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:০৯:৩৬ এম

কালিগঞ্জ (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি : কালিগঞ্জের ১২ ইউনিয়নের বিজয়ী প্রার্থীসহ কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে রবিবার রাত থেকে চলছে আনন্দ উল্লাস। ভিন্ন চিত্র দেখা গেছে পরাজিত প্রার্থী ও তাদের কর্মী সমর্থকদের মাঝে। পরাজয়ের কারণ নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ তারা। ১২ ইউনিয়নে এবার চেয়ারম্যান পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন ৬৪ প্রার্থী। এর মধ্যে পরাজিত কিছু প্রার্থী সম্মানজনক জনসমর্থন পেলেও ৩২জন প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় জামানত হারাচ্ছেন। এরমধ্যে কৃষ্ণনগর ও মথুরেশপুর ইউনয়নে নৌকা মার্কার প্রার্থীরা জামানত হারিয়েছেন। 
উপজেলা নির্বাচন অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত ফলাফল যাচাই করে দেখা গেছে, উপজেলার ১নং কৃষ্ণনগর ইউনিয়নে মোট ভোটার ছিল ২২১০৯। এর মধ্যে ১৬১৯১ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এখানে ২৫১ টি ব্যালট বাতিল হওয়ায় বৈধ ভোটের সংখ্যা ছিল ১৫৯৪০। চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামেন ৮ প্রার্থী। নির্বাচনে বিএনপি’র স্বতন্ত্র প্রার্থী জিএম রবিউল্যা বাহার (ঘোড়া) ও জাপা’র মনোনীত প্রার্থী সাফিয়া পারভীন (লাঙ্গল) এর মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হলেও শেষ পর্যন্ত বিজয়ের মালা পরলেন প্রয়াত চেয়ারম্যান একেএম মোশাররফ হোসেনের বড় মেয়ে সাফিয়া পারভীন (৭২৩৮ ভোট)। জিএম রবিউল্যা বাহার পেয়েছেন ৬৮৭৫ ভোট। এখানে নৌকার প্রার্থী শ্যামলী রানী অধিকারীসহ অপর ৬ প্রার্থী তাদের জামানত হারিয়েছেন। তারা হলেন শ্যামলী রানী অধিকারী ৩৮২ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী রওশন আলী কাগুচি (মোটরসাইকেল) ৬৪৩ ভোট, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শাহাজান কবির (হাতপাখা) ৮৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী নজরুল ইসলাম (চশমা) ৩৯ ভোট, আসানুর রহমান (অটোরিক্সা) ৪০ ভোট, আব্দুর রহমান মোল্যা (আনারস) ৬৩৪ ভোট।
২নং বিষ্ণুপুরে আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ রিয়াজ উদ্দীন ৬২২৭ ভোট পেয়ে পরাজিত হয়েছেন। এখানে বিএনপি’র স্বতন্ত্র প্রার্থী জাহাঙ্গীর আলম (আনারস) ৬৮৯৯ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এখানে ১৮১৪৬ ভোটারের মধ্যে ১৩১২৬ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ২৭৯ টি ব্যালট বাতিল হয়।
৩নং চাম্পাফুল ইউনিয়নে মোট ভোটার ছিল ১৩৮৩৩। এর মধ্যে ১০৭৬৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে ১২১ টি ব্যালট বাতিল হয়। এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক গাইন ৫৬৫৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ মোড়ল (আনারস) পেয়েছেন ৪৯০২ ভোট। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল হান্নান গাইন (মোটরসাইকেল) ২১২ ভোট পেয়ে জামানত হারিয়েছেন।
৪নং দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নে মোট ১৪৯৬৮ ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১১২০৭ জন। বাতিল ব্যালটের সংখ্যা ১৩৫। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী গোবিন্দ মন্ডল ৪৯৪৬ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকট প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী জুলফিকার আলী সাপুই (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ৩৬১০ ভোট। এখানে জামানত হারিয়েছেন বর্তমান চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার সরকার (ঘোড়া) ৯৭৭ ভোট, সাবেক চেয়ারম্যান দিদারুল ইসলাম (চশমা) ১২৮৪ ভোট, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শফিকুল ইসলাম (হাতপাখা) ৩৯০ ভোট।
৫নং কুশুলিয়া ইউনিয়নে মোট ১৯২১২ জন ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন ১৪২২৯ জন। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ১৮৪ টি ব্যালট। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী শেখ আবুল কাশেম মোহাম্মদ আব্দুল্যাহ ৭২৩৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী লতিফুর রহমান খান বাবলু (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ৩৩২৪ ভোট। এখানে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপি’র স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ এবাদুল ইসলাম (ঘোড়া) পেয়েছেন ২৮৮৭ ভোট। জামানত হারানো প্রার্থীরা হলেন এমএ আসফউদ্দ্যেলা খান (আনারস) ৭৩ ভোট, ইসলামী আন্দোলনের কাজী তাজুল ইসলাম (হাতপাখা) ৬৫২ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল করিম (চশমা) ৬০ ভোট।
৬নং নলতা ইউনিয়নে ২৯১৯৩ ভোটারের মধ্যে ২১৮২৩ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ১৯৯ টি ব্যালট। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আজিজুর রহমান (চশমা) ১৬১০৭ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। তার নিকটমত প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল হোসেন পেয়েছেন ৩৫৯৪ ভোট। এখানে জামানত হারিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম আসাদুর রহমান (মোটরসাইকেল) ১৫৬৩ ভোট, আজমির জামান (আনারস) ১২৫ ভোট, শাহিনুর রহমান (অটোরিক্সা) ১৯০ ভোট, সাইদুর রহমান (ঘোড়া) ৩৫ ভোট, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শাহাদাত হোসেন (হাতপাখা) ২০৯ ভোট।
৭নং তারালী ইউনিয়নে ১৮১৬৭ ভোটারের মধ্যে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন ১৪০৪৯ জন। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ২১০ টি ব্যালট। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান এনামুল হোসেন ছোট ৬৫৯৫ ভোট পেয়ে পুনরায় নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী একেএম সফিকুজ্জামান (আনারস) ৫২৪৪ ভোট পেয়েছেন। জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল গফুর (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ১৯৪০ ভোট। এখানে জামানত হারিয়েছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মহাব্বত গাইন (হাতপাখা) ২৭০ ভোট।
৮নং ভাড়াশিমলা ইউনিয়নে ২০৬৫৮ জন ভোটারের মধ্যে ১৫৯৯৭ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এখানে বাতিল হয় ২২৭ টি ব্যালট। আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হাসান নাঈম (আনারস) ৮৩২৮ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আবুল হোসেন পেয়েছেন ৪১৬০ ভোট। বিএনপি’র স্বতন্ত্র প্রার্থী আফছার আলী গাজী (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ৩০৮০ ভোট। এখানে জামানত হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল কুদ্দুস (ঘোড়া) ২০২ ভোট, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শওকাত আলী বিশ^াস (হাতপাখা) ২২৭ ভোট।
৯নং মথুরেশপুর ইউনিয়নে ২২৬৮৮ জন ভোটারের মধ্যে ১৬৭২৬ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এখানে বাতিল হয় ৩৮৯ টি ব্যালট। স্বতন্ত্র প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাকিম (রজনীগন্ধা) ৫০০৩ ভোট পেয়ে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ মারুফ (আনারস) ৩০৮১ ভোট পেয়েছেন। বর্তমান চেয়ারম্যান স্বতন্ত্র প্রার্থী মিজানুর রহমান গাইন (ঢোল) পেয়েছেন ২৫৩৬ ভোট। এখানে জামানত হারিয়েছেন নৌকা প্রতীকের প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মাস্টার নরীম আলী মুন্সীর ছেলে ফিরোজ আহম্মেদ ১৩৯৪ ভোট, বিএনপি’র স্বতন্ত্র প্রার্থী নাজমুল ইসলাম (টেবিল ফ্যান) ১৮৯৮ ভোট, আকুঞ্জি বাবলুর রহমান (টেলিফোন) ২১৪ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাজান সিরাজ খান (মোটরসাইকেল) ১৪৪ ভোট, রমেশ চন্দ্র বিশ^াস (অটোরিক্সা) ১৭৭৮ ভোট, উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক শেখ আলাউদ্দীন (ঘোড়া) ২৭৪ ভোট, সাম্যবাদী দলের তারিকুল ইসলাম (চাকা) ২৬৯ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ মোজাফফর হোসেন (চশমা) ১৩৫ ভোট।
১০নং ধলবাড়িয়া ইউনিয়নে ১৭৫২৩ জন ভোটারের মধ্যে ১৩৪৯০ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ১২৯ টি ব্যালট। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান গাজী শওকাত হোসেন (ঘোড়া) ৫৩৮৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ্আওয়ামী লীগের প্রার্থী সজল মুখার্জী পেয়েছেন ৪২৬৬ ভোট। স্বতন্ত্র প্রার্থী আনোয়ার উস সাদাত (চশমা) পেয়েছেন ২৬৭৮ ভোট। এখানে জামানত হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ ফিরোজ আলম (মোটরসাইকেল) ৭৬৬ ভোট, আব্দুল করিম (আনারস) ৩৯৭ ভোট।
১১নং রতনপুর ইউনিয়নে ১৯২১৫ জন ভোটারের মধ্যে ১৪৪০৩ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ১৮৪ টি ব্যালট। এখানে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী এম আলিম আল রাজি টোকন ৮৩৩৪ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল ওয়াহেদ (আনারস) পেয়েছেন ৭৯৭৮ ভোট। এখানে জামানত ্হারিয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী এসএম আনোয়ার হোসেন (ঘোড়া) ৯১ ভোট।
১২নং মৌতলা ইউনিয়নে ১৬১৫২ জন ভোটারের মধ্যে ১২২৯৮ জন ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। এর মধ্যে বাতিল হয়েছে ২০৭ টি ব্যালট। এখানে স্বতন্ত্র প্রার্থী ফেরদাউস মোড়ল (ঘোড়া) ৫৪৩৩ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি’র স্বতন্ত্র প্রার্থী আলমগীর হোসেন (মোটরসাইকেল) পেয়েছেন ৩৫১৩ ভোট। আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী রুহুল আমিন পেয়েছেন ২০৬৩ ভোট। এখানে জামানত হারিয়েছেন সাবেক চেয়ারম্যান শেখ খোরশেদ আলম (চশমা) ১০৫০ ভোট, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী শেখ অয়ায়েজুর রহমান (হাতপাখা) ২৩৯ ভোট।