মোরেলগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ডিজিটাল হাজিরা ক্রয়ে ৪০ লক্ষাধিক টাকা আত্মসাতের অভিযোগ

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১১:২৫:১৯ পিএম

মোরেলগঞ্জ (বাগেরহাট) প্রতিনিধি : বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৩০৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা কেনার নামে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন সংসদ সদস্য সংসদ সদস্য অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন। মন্ত্রণালয়ে পাঠনো এমপির অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদপ্তর। অভিযোগ অনুযায়ী ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের স্লিপ প্রকল্পের বরাদ্দ থেকে ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যমে প্রায় ৪০ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে চক্রটি। উপজেলার স্ব-ঘোষিত কতিপয় শিক্ষক নেতাও এ চক্রের সদস্য বলে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে। বলা হয়েছে শিক্ষা অফিসের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজসে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন না কিনেই ভুয়া বিল ভাউচারের মাধ্যেমে এ টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। পরে বিভিন্ন দিক থেকে অভিযোগ উঠলে অবস্থা বেগতিক দেখে সম্প্রতি উপজেলার বিভিন্ন প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন কেনার হিড়িক পড়ে। নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে ইচ্ছেমত নিম্নমানের হাজিরা মেশিন কেনার উদ্যোগ নেয় ওই চক্রটি। আর এ মর্মে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী বরাবর একটি অভিযোগ করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। তার এ অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অভিযোগের তদন্ত শেষে এর সত্যতা পেয়ে অসন্তোস প্রকাশ করেন।
উপজেলার অন্তত ২০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ঘুরে কোথাও ডিজিটাল হাজিরা মেশিন বসানো দেখা যায়নি। অধিকাংশ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছাড়া অন্য শিক্ষকরা ডিজিটাল মেশিন কিনে বিল ভাউচারের মাধ্যমে টাকা উত্তোলন করা হয়েছে এ তথ্যই জানেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও কয়েকজন শিক্ষক বলেন, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরের পরেও তিনটি অর্থ বছর পেরিয়ে গেছে, ডিজিটাল হাজিরা মেশিন কেনা হয়নি। এমনকি বরাদ্দ ফেরতও দেওয়া হয়নি। অনেক প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে বদলী হয়ে অন্যত্র চলে গেছেন। কোনো কোনো প্রধান শিক্ষক অবসরে চলে গেছেন।
সরকারি কোনো টাকা উত্তোলনের পরে খরচ করতে জটিলতা তৈরি হলে সঙ্গে সঙ্গে তা সরকারি কোষাগারে ফেরৎ দেয়ার বিধান রয়েছে। কিন্তু তিন অর্থ বছর পেরিয়ে গেলেও ওই টাকা ফেরত দেয়া হয়নি। এ ব্যাপারে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের পক্ষে সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার শেখ আব্দুল গনি সাক্ষরিত ২৬/৭/২০২১ তারিখের পত্রে ২৯ জুলাই ২০২১ এর মধ্যে বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় বাবদ উত্তেলিত অব্যয়িত অর্থ চালানের মাধ্যমে জমাদান করতে বলা হয়েছে।  
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষা অফিসার বায়োমেট্রিক হাজিরা মেশিন ক্রয় করে বসানোর জন্য চিঠি দিয়ে শিক্ষকদের অবহিত করেন। তবে অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকরা অবহিত নন।
এদিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, ওই তারিখের পরে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক বায়োমেট্রিকের ক্যাশমেমো সংগ্রহ করেছেন। কারো কারো ভাউচার রয়েছে তারিখ বিহীন। অনেকের ধারণা ওই ভাউচারে পরবর্তীতে সুবিধাজনক তারিখ বসানো হবে।
এদিকে অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকরা জানান, উপজেলা শিক্ষা অফিসে আধিপত্য বিস্তারকারী কতিপয় শিক্ষক নেতারা তাদের কথিত ইউনিয়ন ভিত্তিক গুচ্ছ শিক্ষক নেতাদের মাধ্যমে  প্রতিষ্ঠানে মেশিন পৌঁছে দিয়ে টাকা গ্রহণ করেন।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মেমোতে উল্লেখ আছে ডিভাইস ‘আইক্লক ৯০০জি’ যার মূল্য দেখানো হয়েছে ১০ হাজার ৫০০ টাকা। অথচ যার বাজার মূল্য রয়েছে সাড়ে ৫ হাজার টাকা। প্যাকেট খুললে দেখা গেছে ‘জেডকে টেকো বায়োটাইম ৮.০’ ।
বায়োমেট্রিক মেশিন না কিনে কিভাবে ভাউচার জমা হলো এবং তা পাশ করানো হলো- এ প্রশ্নের উত্তরে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ জালাল উদ্দিন বলেন, স্টারভিংসে (নির্দেশনা) ঝামেলা ছিল যার সংশোধনী
এসেছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এবং তার পরের বিলম্বের কারণ হিসেবে তিনি ‘করোনাকে’ সামনে আনলেন। তবে মেশিনের মান নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী-ই তারা কিনেছেন এবং কেনার কথা।’
এ ব্যাপারে উপজেলা শিক্ষক নেতা হারুন অর রশিদ বলেন, সরবরাহকৃত মেশিনের এক-তৃতীয়াংশ টাকা উত্তোলন করেছে বলে জানাগেছে।
বাগেরহাট-৪ মোরেলগঞ্জ-শরণখোলা) আসনের সংসদ সদস্য অ্যাড. আমিরুল আলম মিলন এর সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে লিখিত এক অভিযোগের ভিত্তিত্বে বৃহস্পতিবার প্রথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (প্রকিউরমেন্ট) শেখ মোঃ রায়হান উদ্দিন বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ শাহ আলমকে সঙ্গে নিয়ে এ অভিযোগের তদন্তে আসেন।