বিল্লাল হোসেন : যশোরে শীতের দাপট বেড়েছে। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দেখা নেই সূর্যের। ইতোমধ্যে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার রেকর্ড গড়েছে। ৯ থেকে ১১ ডিগ্রির মধ্যে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। ফলে শীত জেঁকে বসেছে। কনকনে ঠাণ্ডায় মানুষের হাত পা অবশ হয়ে যাচ্ছে। হিমেল বাতাস কুয়াশা আর মৃদু শৈত্যপ্রবাহে প্রাণীকুল কাহিল। শীতের তীব্রতায় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে মানুষ। গরম কাপড়ের দোকানে ক্রেতার ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে।
যশোর বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার যশোরে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে বৃহস্পতিবার ছিল ৯ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস, বুধবার ছিল ৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস, মঙ্গলবার ছিল ১০ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সোমবার ছিল ১১ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, রোববার ছিল ১২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও শনিবার ছিল ১৪ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এবার পৌঁষের শুরু থেকে শীত জেঁকে বসেছে। ঘন কুয়াশা পড়ছে। ফলে সড়ক-মহাসড়কে হেডলাইট জালিয়ে অল্প গতিতে চলাচল করছে বিভিন্ন যানবাহন। হাড়কাঁপানো শীতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। প্রচণ্ড ঠাণ্ডার মধ্যে তারা উপার্জনের সন্ধানে যেতে পারছেন না। তারপরও অনেকেই বাঁধ্য হয়ে কাজের উদ্দেশ্যে ছুটছেন।
যশোর শহরের রায়পাড়া এলাকার রিকশাচালক জোহর আলী জানান, শীতে রিকশা চালাতে গিয়ে হাত-পা জমে যাচ্ছে। ব্রেকও ঠিকমতো ধরা যাচ্ছে না। আর বাসাতে মনে হচ্ছে গায়ে সুঁচ ফোটাচ্ছে।
সদর উপজেলার শ্যামনগর গ্রামের রবিউল ইসলাম জানান, ভোরে ঘুম থেকে উঠে কাজের জন্য চুড়ামনকাটি বাজারে আসতে হয়। এত শীতে সাইকেল চালানো কষ্টের ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়। হাত অবাস হয়ে পড়ে। শীতে কাজও তেমন একটা নেই। মানুষ ঘর থেকে বের হচ্ছেন না। সেই জন্য কাজও পাচ্ছি না। দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করে কাজ না পেয়ে খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হচ্ছে।
চুড়ামনকাটি গ্রামের উত্তর পাড়ার এমদাদ হোসেন জানান, প্রতিদিন নিচের দিকে নামছে পারদের কাঁটা। প্রচণ্ড শীতে তার মতো অনেকেই কাহিল হয়ে পড়ছেন। এতো শীতে মোটরসাইকেল চালাতে কষ্ট, হাত-পা ঠাণ্ডা হয়ে যায়।
কাশিমপুর গ্রামের কৃষক রেজাউল ইসলাম জানান, এমন শীত পড়তে থাকলে কৃষকের দুর্ভোগের শেষ নেই। কুয়াশায় ধানের চারা নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। খোলা মাঠের বাতাসে শরীর ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
মথুরাপুর গ্রামের মোজাফফর হোসেন জানান, শীত জেঁকে বসায় বাড়ির সামনে খড়খুটোতে আগুন জ্বালিয়ে কয়েকজন মিলে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছি।
এদিকে, শীত নিবারণে যশোরে চাহিদা বেড়েছে গরম কাপড়ের। বেলা ওঠার পর থেকে রাত পর্যন্ত চলছে ক্রয়বিক্রয়। যশোর শহরের দড়াটানায়, মুজিব সড়ক, এইচএমএম আলী সড়ক, স্টেডিয়ামপাড়ার হকার্স মার্কেট, কালেক্টরেট মার্কেট ও জিলা পরিষদ মার্কেট ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। ফুটপাত ও ভ্যান গাড়ি থেকেও আয়ের মানুষেরা সোয়েটার, জ্যাকেট , মাফলার , হুডি, গরম মোজা, উলের টুপি কিনছেন।
যশোরে বিমানবন্দর আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, বায়ুমণ্ডলের উপরিভাগে জলীয় বাষ্প বা কুয়াশার পরিমাণ বেড়েছে। তাই এ সময়ে সূর্যের আলোর প্রখরতা বা দাপট অনেকটাই কম থাকবে। চলতি সপ্তাহ জুড়ে এমন অবস্থা বিরাজ করতে পারে ।