রাজয় রাব্বি, অভয়নগর (যশোর) : যশোরের অভয়নগরে টেকা নদীর ওপর নির্মিত বিকল্প কাঠের সাঁকো ভেঙে পড়ায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে নড়বড়ে হয়ে পড়া সাঁকোটি গত সপ্তাহে যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ সহ্য করতে না পেরে ভেঙে গেলে যাতায়াত কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এতে শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ দৈনন্দিন কার্যক্রমে মারাত্মক স্থবিরতা দেখা দেয়। ভোগান্তি নিরসনে উপজেলা প্রশাসন প্রকল্পের অর্থ বরাদ্দ দিয়ে দ্রুত সাঁকোটি মেরামতের উদ্যোগ নিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, সাঁকো ভেঙে পড়ায় উপায়ন্তর না পেয়ে অনেক মানুষ নৌকায় করে নদী পার হচ্ছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা মোটরসাইকেল আরোহীরা বাধ্য হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। আবার কেউ কেউ ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার ঘুরে বিকল্প পথে গন্তব্যে পৌঁছাচ্ছেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীরা জানান, অভয়নগরের বারান্দী ও দিঘলিয়া গ্রামের শতাধিক শিক্ষার্থী মণিরামপুর টেকারঘাট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। সাঁকো ভেঙে পড়ায় তারা এখন বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না। নওয়াপাড়া-মণিরামপুর সড়ক ব্যবহার করে দুই উপজেলার অন্তত ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের মানুষ এই কাঠের সাঁকো দিয়ে নিয়মিত যাতায়াত করতেন। সড়কটি আড়াআড়িভাবে বিভিন্ন উপজেলার মানুষ সময় বাঁচাতে এই পথ ব্যবহার করতেন। একইভাবে জরুরি রোগীদের হাসপাতালে নেয়াও দুষ্কর হয়ে পড়েছে।
পায়রা বাজার এলাকার বাসিন্দা ভ্যানচালক সোলাইমান হোসেন বলেন, ‘এই সড়কের কাঠের সাঁকো দিয়ে ভ্যান চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করতাম। কদিন ধরে সাঁকো ভেঙে যাওয়ায় চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। এখন স্কুল-কলেজে যাওয়া বন্ধ প্রায়। বাধ্য হয়ে মানুষ নৌকায় পারাপার হচ্ছে।’
বারান্দী গ্রামের বাসিন্দা রাজমিস্ত্রি রায়হান উদ্দিন বলেন, ‘অসুস্থ স্ত্রীকে অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ি। পরে বাধ্য হয়ে প্রায় ২০ কিলোমিটার ঘুরে হাসপাতালে পৌঁছাতে হয়।’
উপজেলার পায়রা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ফিরোজ আহমেদ বলেন, ‘একমাত্র সংযোগ সেতুটি ভেঙে পড়ায় কর্মজীবী মানুষের স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হয়েছে। প্রতিদিন স্কুলগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ভাঙা সেতু পারাপার হচ্ছে। ফলে দুর্ঘটনার আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে।’
এ বিষয়ে অভয়নগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ সালাউদ্দিন দিপু বলেন, ‘খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই জনদুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সাঁকো সংস্কারের জন্য প্রকল্প থেকে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। দ্রুত সংস্কারকাজ শেষ হবে বলে আমরা আশাবাদী।’
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর টেকা নদীর ওপর ৭ কোটি ৫৭ লাখ ২৮ হাজার ৫০৭ টাকা ব্যয়ে একটি সেতু নির্মাণকাজ শুরু হয়। তবে সেতুর প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ শেষ হলেও আইনি জটিলতার কারণে চার বছর ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ রয়েছে। সেতু নির্মাণ শুরু হলে দুই উপজেলার লাখো মানুষের যাতায়াতের কথা বিবেচনায় নিয়ে এর পাশেই একটি বিকল্প কাঠের সাঁকো নির্মাণ করা হয়েছিল।