Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒# উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে ভদ্রা পাড়ের বাসিন্দারা

নদী খননের সীমানায় পড়েছে আবাসন প্রকল্পের ১৩৯ ঘর

এখন সময়: মঙ্গলবার, ১৮ নভেম্বর , ২০২৫, ০৯:৪৮:৪১ এম

সুব্রত কুমার ফৌজদার, ডুমুরিয়া: না পাওয়ার কষ্ট যতটা না যন্ত্রণা দেয়, তার চেয়ে বেশি যন্ত্রণা দেয় পেয়ে হারানোর কষ্ট। ঠিক এমনি একটি পরিস্থিতির মধ্যে চরম আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছে ডুমুরিয়ার ভদ্রা পাড়ের আবাসন প্রকল্পের প্রায় দেড়’শ পরিবার। গোটা ঘরগুলো রয়েছে নদী খননের সীমানায়। অপরিকল্পিতভাবে সরকার নদীর জায়গায় ঘর নির্মাণ করার ফলে এখন বিপাকের দ্বারপ্রান্তে প্রকল্প বাসিন্দারা!

জানা যায়, যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা নিরসনে ১৪০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৬ নদীর ৮১ কিলোমিটার খনন কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মধ্যেই রয়েছে ভদ্রা নদী খনন। যে নদীর পাড়ে রয়েছে সরকারের আবাসন প্রকল্প। ২০২১-২২ ও ২০২৩ অর্থ বছরে ডুমুরিয়া উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গৃহহীন ও বাস্তচ্যুত অসহায় মানুষের জন্য নদীর চর ভরাটি জায়গায় সরকারিভাবে গড়ে তোলা হয় আশ্রয়ণ প্রকল্প। ১ হাজার ১৫৫ পরিবার মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে পায়। তারা নিজেদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে অব্যাহত রাখে আপ্রাণ চেষ্টা। ছিন্নমূল মানুষের জীবনে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা সরকারের বৃহত্তর প্রচেষ্টা থাকলেও সঠিক পরিকল্পনায় ঘর নির্মাণ না করায় বিফলে যেতে বসেছে গরীবের স্বপ্ন। সম্প্রতি চুকনগর, কাঁঠালতলা ও বরাতিয়ার ১৩৯ ঘর ভদ্রা নদী খননের হুমকিতে পড়েছে।

মুজিবশত বর্ষ উপলক্ষে নদীর জায়গা শ্রেণি পরিবর্তন করে ঘরগুলো নির্মাণ করা হয়। অপরিকল্পিতভাবে প্রবাহমান নদীর চরে ঘর তৈরি করায় নদীর সীমানা সংকুচিত হয়ে পড়ে। সাড়ে ৩ বছর আগে গৃহহীনদের মাঝে ঘর উপহার দিলেও আজো তারা বিদ্যুৎ সংযোগ থেকে বঞ্চিত রয়েছে। সারাদেশে বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত থাকলেও আশ্রয়ণের এসব ঘরগুলোতে দেয়া হয়নি বিদ্যুতের সংযোগ। এরই মধ্যে খবর এসেছে ঘর উচ্ছেদের। এযেন ‘মরার উপর খাঁড়ার ঘা’! এমনিতেই দ্রব্যমূল্যের বাজারে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছে প্রকল্প অধিবাসীরা। ঘর ছেড়ে অন্যত্র বাসা ভাড়া করা তাদের জন্য যেমন কঠিন হয়ে পড়বে তেমনি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করাও দূরহ ব্যাপার হবে। এমন দুশ্চিন্তায় চরম আতংকে দিন কাটছে ভদ্রা পাড়ের আবাসনের বাসিন্দারা। 

চুকনগর আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দা হযরত গাজী বলেন, আমরা প্রায় সাড়ে ৩ বছর হবে এখানে এসেছি। ৬ মাস আগে পিলার পুঁতেছে এখনো কারেন্ট আসেনি। অন্ধকার জীবন-যাপন আমাদের। এরই মধ্যে লাল প্লাগ টানিয়ে দিয়েছে। আমাদের ঘর যদি না থাকে তাহলে কোথায় যাবো, কোথায় থাকবো? অন্য জায়গায় যেয়ে বাসা ভাড়া করে থাকা এবং সংসার সামলানো আমাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়বে। মরা ছাড়া আর কোনো উপায় থাকবে না। আবাসনের অধিবাসী সরস্বতী নন্দী জানায়, তার শ্বশুরবাড়ি কোন জায়গা জমি নেই। বিয়ের পর মামা শ্বশুরবাড়িতে থাকতেন। এরপর বাবার বাড়ি চুকনগর এলাকায় এসে আবাসনে একটা ঘর পেয়েছি। স্বামী সন্তান নিয়ে খুবই ভালো ছিলাম। ১৫/২০দিন আগে নদীর সীমানা নির্ধারণ করে লাল প্লাগ টানিয়ে দিয়েছে। নদী খননে মাথা গোঁজার ঠাঁই টুকু যদি হারিয়ে যায় তাহলে চরম বিপাকে পড়তে হবে আমাদের। এমন আতংকে দিন কাটাচ্ছে আবাসনের বাসিন্দারা।

আবাসনের ৪ নম্বর ঘরের বাসিন্দা কমল সরকার জানান, দেশ স্বাধীনের আগে থেকেই নদীর চর ভরাটি জায়গায় বসবাস করে আসছেন। তিনি একটা সময় পিতার সূত্র ধরে চুকনগর খেয়াঘাটের পাটনি গিরি করেছেন। এরপর সরকারে দেয়া ঘর পেয়ে বেশ স্বাচ্ছন্দে পরিবার পরিজন নিয়ে জীবন যাপন কাটাচ্ছেন তিনি। আইনগতভাবে তারা ঘরের বৈধ মালিক। সুতরাং পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করে ঘর ভেঙে নদী খননের চেষ্টা করলে তিনি বাধা দিবেন বলে জানিয়েছেন।  

এ বিষয়ে আটলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ হেলাল উদ্দিন জানান, সম্পূর্ণ অপরিকল্পিতভাবে এবং প্রবাহমান নদীর চর ভরাটি জায়গা শ্রেণি পরিবর্তন করে আবাসন প্রকল্প তৈরি করা হয়। প্রকল্পের ঘরগুলো নির্মাণের সময় বা কোন ধরনের সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়নি। একক সিদ্ধান্তে এবং নিজের তত্ত্বাবধায়নে তৎকালীন ইউএনও সাহেব নদীর জায়গায় ঘরগুলো করে গেছেন। ঘরগুলো নির্মাণে অত্যন্ত নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়েছে। অনেক ঘর ভেঙে পড়ছে। অধিকাংশ ঘরের অবকাঠামো ভঙ্গুর দশায় পরিণত হয়েছে। যতটা না সুনাম কুড়িয়েছিলো আওয়ামী লীগ সরকার, এখন তার চেয়ে দুর্নামের খাতায় শীর্ষ তালিকায় উঠে আসছে তাদের নাম। তিনি আরো বলেন, ভদ্রা নদীর তীরে চুকনগর গরুর হাটের পাশে ৬৫, কাঁঠালতলায় ২নম্বর পেজে ২৬ ও বরাতিয়া ৪৮ ঘর নদী খননের সীমানায় পড়েছে। 

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আল-আমিন জানান, যেহেতু সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে নদী খনন হচ্ছে। সুতরাং সঠিক নিয়মে খনন হবে। তবে নদী খননের নির্দিষ্ট সীমানায় ঘর পড়লে অবশ্যই খননের আগে সামাজিক পুনর্বাসন বা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া হবে।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)