নিজস্ব প্রতিবেদক: ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে তার আগের বছরের চেয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি বাড়লেও কমেছে গম, ডাল পেঁয়াজ ও মরিচসহ বেশ কয়েকটি নিত্য পণ্যের আমদানি। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমদানির পরিমান ১ লাখ ৮ হাজার ৫৯ মেট্রিক টন আর ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি ছিল ৩৪ হাজার ৮৬০ টন। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চাইতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ভোগ্য পণ্যের আমদানি কমেছে ৭৩ হাজার ১৯৯ মোট্রিক টন। এতে গেল অর্থ বছর খাদ্যদ্রব্য বা জাতীয় ভোগ্য পণ্যের বানিজ্য ঘাটতি ৭৩ হাজার ২০০ মেট্রিক টন।
বানিজ্য সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অনেক পণ্যের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল, রফতানি মূল্য বৃদ্ধি ও নানান শর্তের কারনে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এদিকে ভারতের সাথে নিত্য প্রয়োজনীয় ৮টি ভোগ্য পণ্য আমদানিতে কোটা চুক্তি ৩ বছরেও বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। এতে খাদ্য আমদানিতে ঘাটতি দিন দিন বেড়ে চলেছে। যার প্রভাবে বছর জুড়ে নিত্য পণ্যের বাজার থাকছে চড়া। এ অবস্থা থেকে উত্তরনে অন্তবর্তীকালিন সরকারের হস্তপেক্ষ কামনা করেছেন ব্যবসায়ীরা।
বাণিজ্যিক সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে প্রতিবছর যে পরিমাণে ভোগ্য পণ্যের চাহিদা রয়েছে সব পণ্যের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের উৎপাদন সক্ষমতা না থাকায় আমদানি উপর নির্ভর করতে হয়। আর এসব পণ্যের বড় অংশ আসে পাশ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। তবে নানান কারণ জানিয়ে দেশটি হঠাৎ আমদানি বানিজ্যে নিষেধাজ্ঞা, রফতানি মুল্য ও কঠিন কঠিন শর্ত দেওয়ায় দিন দিন বানিজ্য ঘাটতি বেড়ে চলেছে। সরবরাহ ঘাটতির কারণ দেখিয়ে দাম বৃদ্ধি করে সুযোগ নিচ্ছে অসৎ ব্যবসায়ীরা। যার খেসারত গুনতে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষের।
এ অবস্থা থেকে উত্তরনে ২০২২ সালের ২২ ও ২৩ ডিসেম্বর নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য মন্ত্রী পর্যায়ে বৈঠকে কোটা চুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়। এতে বার্ষিক ভারতের কাছে গম ৪৫ লাখ টন, চাল ২০ লাখ টন, পেঁয়াজ ৭ লাখ টন, চিনি ১৫ লাখ টন, আদা দেড় লাখ টন, ডাল ৩০ হাজার টন ও ১০ হাজার টন রসুনের অনুরোধ করা হয়। শর্ত অনুযায়ী কোটা পাওয়া গেলে যখন-তখন ভারত এসব পণ্যের রপ্তানি বন্ধ বা মূল্য বৃদ্ধি করতে পারবেনা। এতে দ্রব্যমূল্যের দাম অনেকটা সহনশীল পর্যায়ে ও খাদ্য সংকট কমে আসবে। তবে আজও পর্যন্ত চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় খাদ্যদ্রব্য আমদানিতে প্রতি বছর ঘাটতি বাড়ছে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম জানান, সরকার পরিবর্তন স্বাভাবিক। তবে আমরা আশা করবো রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনে ভারত সরকার তাদের বানিজ্য নীতির জায়গায় যেন অটুট থাকে।
বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক জানান, সরকার পরিবর্তন আর আমদানি জটিলতায় বেনাপোল বন্দরে বানিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।
যশোর চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইনডাস্ট্রির সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, ভোগ্য পণ্য আমদানিতে ভারতের সাথে বাংলাদেশ সরকারের কোটা চুক্তি বাস্তবায়ন হলে বানিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। এজন্য দুই দেশের সরকার পর্যায়ে আলোচনা অব্যাহত রাখা প্রয়োজন। তানাহলে বাণিজ্য ঘাটতি বেশি হলে দেশের বাজারে তার প্রভাব দেখা দেবে।
বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভীদ সংগনিরোধ কেন্দ্রর উপপরিচালক মোঃ আবু তালহা জানান, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের চাইতে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আমদানি কমেছে বন্দরে। আমদানিকৃত পণ্য মান পরীক্ষা শেষে বন্দর থেকে খালাসের অনুমতি দেওয়া হয়।
বেনাপোল স্থলবন্দর উদ্ভীদ সংগনিরোধ কেন্দ্রের তথ্য বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারত থেকে চাল আমদানি হয় ২১ হাজার ৩৮৪ টন, ডাল ৭৮ হাজার ৯৪৭ টন, পেঁয়াজ ২০০ টন, আদা ৪৩১ টন, মরিচ ৭১৫২ টন, আলু ৪ হাজার ৯৬৩ টন।
অপরদিকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে চাল আমদানি হয়েছে ১ হাজার ১৫০ টন, ডাল এক হাজার টন, পেঁয়াজ ১৫ হাজার ২৯৫ টন, আদা ৬০ টন, মরিচ ৯ হাজার ৪৪৭ টন, আলু ৩ হাজার ০৮৪ টন। ওই বছরেও চিনি ও গম আমদানি হয়নি।
কৃষি অধিদপ্তর সূত্রমতে, বর্তমানে দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা ৩২ লাখ মেট্রিক টনের বিপরীতে উৎপাদন হয় ২৭ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদা মেটাতে বাকিটা আমদানি করতে হয়। চালের চাহিদা ৩ কোটি ৬০ লাখ মেট্রিক টনের মতো। সেখানে উৎপাদন হয় ৪ কোটি ১৫ লাখ টন। চিনির চাহিদা ১৮ থেকে ২০ লাখ টনের বিপরীতে উৎপাদন মাত্র ১ লাখ টন। গমের চাহিদা ৭০ লাখ টন আর উৎপাদন ১২ লাখ টন। আলুর চাহিদা ৯০ লাখ টন আর গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ১২৯ লাখ টন। আদার চাহিদা ৩ লাখ টন আর উৎপাদন ২ লাখ টনের মত। রসুনের চাহিদা ৬ লাখ টন আর গত বছর উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ ৯ হাজার ৯০০ লাখ টন।