নিজস্ব প্রতিবেদক: সাতক্ষীরার উপকূলীয় শ্যামনগর উপজেলার নকিপুর হরিচরন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত ইকোর উদ্যোগে ফ্রি চক্ষু মেডিকেল ক্যাম্প করা হয়েছে। ওই ক্যাম্পে উপকুলীয় এলাকার শতাধিক দরিদ্র নারী ও পুরুষ রোগীকে চোখের বিনা মুল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ প্রদান করা হয়। এসব চোখের রোগীর মধ্যে ১০ জনকে বাছাই করে পরবর্তীতে অপারেশনের মাধ্যমে চোখে আমেরিকান লেন্স লাগানো হবে।
উপজেলার মুন্সিগঞ্জ গ্রামের বৃদ্ধা ফাতেমা খাতুন (৭০) জানান, ১৮ থেকে ২০ বছর যাবৎ চোখে ঠিকমত দেখতে পাইনা। দুই চোখেই ঝাপশা দেখার পাশাপাশি সবসময় পানি ঝরে। গ্রামের এক ব্যক্তির মাধ্যমে জানতে পারলাম শ্যামনগর হরিচরণ হাইস্কুলে ইকোর উদ্যোগে ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে চোখের চিকিৎসা করানো হবে। গতকাল সোমবার ফ্রি মেডিকেল ক্যাম্পে এসে চোখের চিকিৎসা করার পর বিনামূল্যে প্রয়োজনীয় ওষুধ নিয়ে আমি অনেক উপকৃত হয়েছি। আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইকোসহ সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি দোয়া রইলো, তারা যেন এভাবে তাদের কার্যক্রম অব্যাহত রাখেন। তাহলে দরিদ্র মানুষ অনেক উপকৃত হবে।
একই ধরনের অনুভূতি ব্যক্ত করে উপজেলার দুর্গাবাটি গ্রামের বাবু রাম মন্ডল (৬৫) জানান, প্রায় ১৫ থেকে ১৬ বছর যাবৎ চোখের সমস্যায় ভুগছিলেন। অর্থাভাবে ভালো কোনো ডাক্তার দেখিয়ে চোখের চিকিৎসা করতে পারেননি। গতকাল লোকমুখে জানতে পারলাম শ্যামনগর উপজেলায় মেডিকেল ক্যাম্প হবে চোখের বিনামুল্যে চিকিৎসার জন্য। এরপর ক্যাম্পে এসে সাতক্ষীরা গ্রামীণ চক্ষু হাসপাতালের চোখের ডাক্তার সোহানুর রহমান আমার চোখ পরিক্ষা করে কিছু ওষুধ দিয়েছেন এবং আগামী সপ্তাহে চোখের অপারেশন করে লেন্স স্থাপন করে দিবেন বলে জানিয়েছেন। আমি অনেক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি আয়োজক প্রতিষ্ঠান ইকোর প্রতি।
সোমবার হরিচরণ মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে দিনব্যাপী এই বিনামুল্যে চক্ষু মেডিকেল ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থা ইকোর আয়োজনে এই উপকূলীয় উপজেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আগত শতাধিক দরিদ্র নারী ও পুরুষ তারা বিনামুল্যে চিকিৎসা ও ওষুধ পেয়ে অনেক খুশি হয়েছেন। সাতক্ষীরা গ্রামীণ চক্ষু হাসাপাতালের চোখের ডাক্তার সোহানুর রহমানের নেতৃত্বে ১০ জনের একটি মেডিকেল টিম শতাধিক চক্ষু রোগীর চিকিৎসা এবং বিনামুল্যে ওষুধ দেয়া শেষে সেখান থেকে বাছাই করে ১০ জন রোগীকে আগামী সপ্তাহে ফ্রি ছানি অপারেশন ও আমেরিকান লেন্স স্থাপন করবেন।
ইকোর প্রজেক্ট অফিসার আবদুল কাদের জানান. চলতি মাসে আমরা যশোর শহরের চাঁচড়ায় ইকো ট্রেনিং সেন্টার ও মণিরামপুরে ফি চক্ষু ক্যাম্প করেছিলাম। পরবর্তীতে ২০ জনকে ফ্রি ছানি অপারেশন করে আমেরিকান লেন্স লাগানো হয়েছে। ইকোর অর্থায়নে সমাজে পিছিয়ে পড়া হতদরিদ্রদের সচেতন করতে এবং আর্থসামাজিক ভাবে স্বচ্ছল করতে সংগঠনটি কাজ করছে। পাশাপাশি সমাজের হতদরিদ্র মানুষকে প্রতিষ্ঠা করা এবং তাদের কর্মক্ষেত্র তৈরী করতে যশোরের চাঁচড়াস্থ ইকো ট্রেনিং সেন্টার কাজ করছে। একই সাথে সেখানে গড়ে তোলা হয়েছে ইকো জিএল ইন্সটিটিউট। এই প্রতিষ্ঠানে এতিম শিশু ও হতদরিদ্ররা বিনামুল্যে থাকা খাওয়াসহ লেখাপড়ার সুযোগ পাচ্ছে। পাশাপাশি সংস্থাটি দেশের বিভিন্ন জেলায় ফ্রি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজ ও সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে অধ্যায়নরত মেধাবী শিক্ষার্থীদের উচ্চতর শিক্ষা নিশ্চিত করতে শিক্ষাবৃত্তি প্রদানের মত কার্যক্রম করে আসছে।