নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশি তৈরি পোশাকসহ ছয় ধরনের পণ্য আমদানিতে ভারত সরকারের নিষেধাজ্ঞায় প্রথম দুই দিনে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে দুই দেশের রপ্তানি কমে এসেছে ৫০ শতাংশ। রোববার সবশেষ ভারতে রপ্তানির পরিমাণ ছিল ১০৮ ট্রাক বিভিন্ন ধরনের পণ্য। সোমবার আমদানি হয়েছে (রাত ৮টা পর্যন্ত) ৩২৬ ট্রাক ও রফতানি হয়েছে ১৬৩ ট্রাক পণ্য। তবে এগুলো সবই আগে এলসি করা মালামাল। নিষেধাজ্ঞার আগের দিন রপ্তানি হয়েছিল ২২৮ ট্রাক পণ্য।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম বলেন, হঠাৎ নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত দুই দেশের মধ্য বাণিজ্য সম্পর্ক দুর্বল হচ্ছে। এতে দুই দেশের ব্যবসায়ীই ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
এদিকে আটকে পড়া গার্মেন্টসের কোনো ট্রাক গতকালও ঢুকতে পারেনি ভারতে। নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকা শতাধিক ট্রাক পণ্য রপ্তানিতে অনিশ্চয়তায় শেষ পর্যন্ত বেনাপোল বন্দর থেকে ফিরতে শুরু করেছে। গত এক মাসে রপ্তানিতে পর পর দুবার নিষেধাজ্ঞা আসায় অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন দুই দেশের ব্যবসায়ীরা।
বাণিজ্যসংশিষ্টরা জানান, প্রতিবছর ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ১৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের বাণিজ্য হয়ে থাকে। এর মধ্যে প্রায় ১৪ বিলিয়ন ডলারের পণ্য ভারত থেকে আমদানি হয়, আর মাত্র ২ বিলিয়র ডলারের পণ্য রপ্তানি হয় ভারতে।
দেশে ২৪টি স্থলবন্দরের মধ্যে ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য হয় ১৬টি বন্দর দিয়ে। তবে যোগাযোগব্যবস্থা সহজ হওয়ায় সবচেয়ে বেশি বাণিজ্য হয় ভারতের সঙ্গে। স্বাভাবিক সময়ে বেনাপোল বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ভারতে ২০০ থেকে ২৫০ ট্রাক পণ্য রপ্তানি হয়। এর মধ্যে প্রায় অর্ধেক থাকে গার্মেন্টসশিল্পের তৈরি পোশাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে রাজনৈতিক আশ্রয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর থেকে দেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা ও ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে নানান প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়।
বাণিজ্যসংশিষ্টরা আরও জানান, গত ৮ এপ্রিল ভারতের নিষেধাজ্ঞায় সড়কপথে বন্ধ হয় ভারতের বিমানবন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় কোনো দেশে গার্মেন্টস রপ্তানি। এর এক মাস যেতে না যেতে ১৭ মে আরেকটি প্রজ্ঞাপনে স্থলবন্দর দিয়ে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টসশিল্পের তৈরি পোশাক, সুতা, প্লাস্টিক, কাটের তৈরি পণ্য, ফল ও ফলজাতীয় পণ্য আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয় ভারত।
তবে সড়কপথে রপ্তানিসেবা বন্ধ করলেও কলকাতা ও নবসেবা সমুদ্রবন্দর দিয়ে খোলা থাকলেও যোগাযোগব্যবস্থা কঠিন ও ব্যয়বহুল হওয়ায় রপ্তানিতে ব্যবসায়ীদের আগ্রহ কম। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে বাণিজ্য সহজ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেছেন ব্যবসাসংশ্লিষ্টরা।
রপ্তানি পণ্যবাহী ট্রাকচালক কামরুল জানান, আটকে পড়া রপ্তানি পণ্য নিয়ে তিনি দুই দিন ধরে বিপাকে পড়েছেন। তবে আবার অনেকেই ট্রাক নিয়ে ফিরে যাচ্ছেন ঢাকায়।
এ বিষয়ে বেনাপোল আমদানি-রপ্তানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, ‘১৭ মে ভারত সরকারের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অজয় ভদ্র সাক্ষরিত এক চিঠিতে বাংলাদেশ থেকে গার্মেন্টস, তুলা, সুতির বর্জ্য, কাঠ ও প্লাস্টিক ও কাঠের তৈরি আসবাবপত্র, ফলজাতীয় পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে বাণিজ্য সহজ করার দাবি জানাচ্ছি।’
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, বিষয়টি সরকারকে কূটনৈতিকভাবে সমাধান করতে হবে। তানাহলে আমাদের দেশের রফতানিকারকদের ব্যয় বাড়বে। এতে করে তারা ব্যবসা হারাবে।
বেনাপোল স্থলবন্দরের উপ-পরিচালক মামুন কবির তরফদার জানান, স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেনাপোল থেতে ভারতে রফতানি কমেছে। নিষেধাজ্ঞার কারণে শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক আটকা রয়েছে। সোমবার রফতানি হয়েছে ১৬৩ পণ্যবাহী ট্রাক।