Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

ফুলের রাজ্যে নতুন আকর্ষণ ‘নন্দিনী’

এখন সময়: রবিবার, ১১ মে , ২০২৫, ০৯:০৯:৪৭ এম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরের ঝিকরগাছার গদখালীতে যেসব ফুল প্রেমী আসেন, তাদের জন্য নতুন আকর্ষণ ‘নন্দিনী’। ফুল প্রেমীদের বিমোহিত করতে এবং আনন্দ আরও বাড়িয়ে দিতে যুক্ত হলো এই নতুন ফুল। এর উৎপত্তি স্থল যুক্তরাষ্ট্র। তবে এর মান ও বিস্তৃতি বাড়াতে বিস্তর গবেষণা হয়েছে জাপানে।

‘নন্দিনী’ দেখতে গোলাপের মতো হলেও এর কোনো কাঁটা নেই। গোলাপ ফুল শীতের সময় ভালো ফোটে, আর জাপানি এই ফুল ফোটে শীত, গ্রীষ্ম, বর্ষা- সব ঋতুতেই। এই ফুলের সংরক্ষণকালও গোলাপের চেয়ে বেশি। ‘নন্দিনী’ ফুল ৪৫টি রঙে পাওয়া যায়।

যশোরের ঝিকরগাছায় চাষ হচ্ছে ‘নন্দিনী’ নামের এই ফুল। আমদানি নির্ভর এই ফুলের আছে বাণিজ্যিক সম্ভাবনা।

পানিসারা গ্রামে দুই শতক জমিতে ‘নন্দিনী’ ফুলের চাষ করেছেন মিন্টু সরদার নামের এক ফুল চাষি। এরই মধ্যে তিন-চারটা রঙের নন্দিনী ফুল ফুটেছে। একটি গাছে একটি করে ডাঁটা (স্টিক), প্রতি ডাঁটায় ৮ থেকে ১০টি করে কুঁড়ি। কয়েক দিনের মধ্যে এই ফুল কাটা হবে, জানালেন মিন্টু সরদার। তিনি বলেন, দুই শতক জমিতে সাড়ে তিন হাজারের মতো চারা রোপণ করেছিলাম। তার মধ্যে কিছু চারা মারা যায়। আড়াই থেকে তিন হাজার গাছে ফুল পাওয়া যাবে বলে আশা করছি। প্রতিটি স্টিক ২২০ থেকে ২৫০ টাকা করে বিক্রি হবে।

মিন্টু সরদার জানান, চারাসহ প্রায় ২ লাখ টাকার মতো খরচ হয়েছে। প্রথম বছরেই ছয় লাখ টাকার ফুল বিক্রির আশা করছেন তিনি। ‘নন্দিনী’ ফুল গাছের চারা একবার রোপণ করে দুইবার ফুল সংগ্রহ করা যায়।

বাংলাদেশে ‘নন্দিনী’ ফুল অনেক বেশি দামে আমদানি করা হয়ে থাকে। নন্দিনী ফুল জারবেরা ও গোলাপের মাঝামাঝি, এ ফুলের সংরক্ষণকাল দীর্ঘ হওয়ায় বেশি জনপ্রিয়। এ ফুলের বীজ থেকে চারা উৎপাদন বেশ কঠিন। চারার দামও বেশি। যার ফলে কৃষক পর্যায়ে আগ্রহ কম। নন্দিনীর চারা থেকে ফুল উৎপাদন সহজ, কিন্তু বীজ থেকে চারা উৎপাদন করা বেশ কঠিন কাজ। নন্দিনী গাছের গোড়ায় দু-তিন দিন পানি জমে থাকলেও ক্ষতি হয় না। আবার খরায়ও তেমন ক্ষতি হয় না। নন্দিনী ফুল গাছ ২০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। একটি গাছে ৮০ থেকে ১২০টি ফুল ফোটে। গোলাপ ফুল গাছ থেকে সংগ্রহ করার পর তিনদিনের বেশি থাকে না। কিন্তু নন্দিনী ফুল ১৫ থেকে ২০ দিন পর্যন্ত রাখা যায় এবং গাছ এ ফুল ৩৫ থেকে ৪০ দিন পর্যন্ত সতেজ থাকে। বাংলাদেশে আগামী দিনে গোলাপ ও জারবেরার জায়গা দখল করবে নন্দিনী ফুল, আশা করছেন স্থানীয়রা।

শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. এ ফয়েজ এম জামালউদ্দিন দীর্ঘ ১০ বছর যাবত বাংলাদেশের আবহাওয়ায় নন্দিনী উৎপাদনের জন্য গবেষণা চালিয়েছেন। ব্যক্তিগত উদ্যোগে জাপান থেকে সংগ্রহকৃত নন্দিনী গাছে বর্তমানে ১৫ থেকে ২০টি ফুল ফুটছে। তবে একটি গাছে সর্বোচচ ৬০টি ফুল উৎপাদন করা সম্ভব।

নতুন প্রজাতির এ ফুল সম্পর্কে ড. জামাল বলেন, ফুলটি যে শুধু সৌন্দর্যের দিক থেকে অনন্য তা-ই নয়, অর্থনৈতিক দিক থেকে এটি গুরুত্ব বহন করে। বাংলাদেশের আবহাওয়া এ ফুলের জন্য উপযোগী। তা ছাড়া আমাদের দেশের বেশিরভাগ ফুল শীতকালে ফোটে। কিন্তু গ্রীষ্মকালসহ সারাবছরই এ ফুল উৎপাদন সম্ভব। তবে একটি গাছে সর্বোচ্চ ৬০টি ফুল হবে। ড. জামাল আরও বলেন, ফুলপ্রেমীরা তাদের বাসায় ফুলদানিতে ১০ থেকে ১৫ দিন পর্যন্ত শুধু পানিতে ভিজিয়ে সংরক্ষণ করতে পারবেন। সে দিক থেকে আমাদের দেশের ক্রমবর্ধমান ফুলের চাহিদার প্রেক্ষিতে এটি খুবই উপযোগী। আমাদের দেশের আবহাওয়া এবং মাটির জন্যও মানানসই।

ড. জামাল জানান, ইতোমধ্যে দেশের একটি খ্যাতনামা কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী কোম্পানি এ ফুলের চারা বাজারজাত করতে যোগাযোগ করেছে। সব ঠিকঠাক থাকলে খুব শিগগিরই এ ফুলের চারা কৃষকের জন্য সরবরাহ করা সম্ভব হবে। দাম অবশ্যই ১০ টাকার বেশি হবে না।

যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুর রহিম বলেন, দেশে বিভিন্ন উৎসবে যে পরিমাণ ফুল বেচাকেনা হয়, তার ৭৫ শতাংশ উৎপাদিত হয় যশোরে। জেলাটিতে বছরে দেড় হাজার কোটি টাকার ফুল উৎপাদন হয়ে থাকে।

উল্লেখ্য, কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরের প্রায় ৬ হাজার চাষি দেড় হাজার হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ১৫ ধরনের ফুলের চাষ করছেন।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)