বিল্লাল হোসেন: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে লাশের ময়নাতদন্ত হয় দুপুর ২টার পর। পুলিশ মরদেহের ময়নাতদন্তের কাগজপত্র সকালে জমা দিলেও চিকিৎসক আসেননা। অফিস শেষে বাসায় যাওয়ার পথে চিকিৎসকেরা লাশের ময়নাতদন্ত করেন। আর লাশ নিতে আসা স্বজনেরা ঘন্টার পর ঘন্টা ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় থাকেন। প্রতিনিয়ত এভাবে তাদের ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে। ভুক্তভোগীরা বলছেন, লাশ নিতে এসে মানুষের ভোগান্তি কমবে কবে।
হাসপাতালের প্রশাসনকি সূত্রে জানা গেছে, প্রতিদিন সকাল ৮ টা থেকে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত লাশের ময়না তদন্তের নির্দেশনা রয়েছে। এজন্য ময়নাতদন্তের কাজে মর্গে দায়িত্ব ভাগ করা আছে মোট ৬ জন চিকিৎসকের। তারা হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দায়িত্বরত মেডিকেল অফিসার ও মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের চিকিৎসক।
সরেজমিনে দেখা গেছে, নিয়ম না মেনে দুপুর ২টা পর মর্গে লাশের ময়নাতদন্ত কার্যক্রম শুরু হয়। আবার বিকেল ৪টার পর আর কোন লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়না। মর্গ থেকে লাশ নিতে আসা স্বজনেরা সকাল থেকে মর্গের সামনে ভিড় করতে থাকেন। তারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে রীতিমতো অতিষ্ট হন। ময়নাতদন্তকারী ডাক্তারদের উদাসীনতায় এই অনিয়ম ও দুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে।
গত ২৩ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ১০টার দিকে বাঘারপাড়া উপজেলার জামদিয়ায় সিটি ব্রিকস-১ ইটভাটার শ্রমিক ও খুলনার পাইকগাছা উপজেলার বাহিরডাঙ্গা গ্রামের সোহরাব সরদারের ছেলে আলআমিন (২৫) ছুরিকাঘাতে খুন হন। রাতেই তার মরদেহ পাঠানো হয় যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে। কিন্তু পরের দিন দুপুর দুইটা পর্যন্ত লাশের ময়নাতদন্তের জন্য চিকিৎসক আসেননি। অথচ লাশের জন্য দুর দুরান্ত থেকে আসা স্বজনরা সকাল থেকেই মর্গের সামনে অপেক্ষায় ছিলেন। দুপুর আড়াইটার পর শুরু হয় লাশের ময়নাতদন্ত।
গত ২৮ ডিসেম্বর রাতে অভয়নগর উপজেলার সাবেক কাউন্সিলর জিয়াউদ্দিন পলাশকে (৪৫) কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। পুলিশ তার মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ২৯ ডিসেম্বর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। লাশ নিতে মর্গের সামনে আসে তার স্বজনেরা। এরপর তাদের অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয়না। লাশ পেতে অপেক্ষা করতে হয় প্রায় ৩ টা পর্যন্ত।
মাদক সেবনের প্রতিবাদ করা নিয়ে দ্বন্দ্বে গত ৩০ ডিসেম্বর বাঘারপাড়া উপজেলার বুধোপুর গ্রামের মৃত ইজাজ মোল্যার ছেলে ইখলাস মোল্যা (৫০) আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। মাদকসেবী ছেলে তারেক বাঁশ দিয়ে ইখলাসের মাথায় আঘাত করে। রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০ টার দিকে মারা যান ইখলাস মোল্যা। সার্জারী ওয়ার্ড থেকে রাতেই মরদেহ নেয়া হয় মর্গে। পরের দিন সকাল ১০টার দিকে পুলিশ কর্তৃপক্ষের কাছে সুরতহাল প্রতিবেদন জমা দিলেও দুপুর ২টার লাশের ময়নাতদন্ত করা হয়নি। লাশ নিতে আসা লোকজন চিকিৎসকের এই অনিয়মে ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হিমাদ্রী শেখর সরকার জানান, লাশের ময়নাতদন্তের অপেক্ষায় মানুষের ঘন্টার পর ঘন্টা অপেক্ষা করার বিষয়টি কষ্টদায়ক। মানুষের এই অপেক্ষা কমিয়ে আনতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হবে।