অভয়নগর (যশোর) প্রতিনিধি : সম্প্রতি দুই দফা টানা বৃষ্টিপাত ও নদ-নদীর পানি ঢুকে পড়ায় যশোরের অভয়নগরে ভবদহ এলাকায় ব্যাপক জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। জলাবদ্ধতায় কৃষি ও মৎসে প্রায় ১২৯ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির ধান ও ১৪৭ হেক্টর জমির সবজি সম্পূর্ণ নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে ছোট-বড় ৪ হাজার ৯শ’ মাছের ঘের। পানিবাহিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ও ঘের মালিকরা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, দুই দফা টানা বৃষ্টির কারণে অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। আর এই জলাবদ্ধতার কারণে উপজেলার প্রেমবাগ ইউনিয়নে ৫৩৩ হেক্টর জমির আমন ধান ও ৪৭ হেক্টর জমির সবজি নষ্ট হয়েছে। সুন্দলী ইউনিয়নে ৮৩৫ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১৯ হেক্টর জমির সবজি পানির নিচে তলিয়ে থাকা অবস্থায় পচতে শুরু করেছে। চলিশিয়া ইউনিয়নে ৬০ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২৮ হেক্টর সবজি ক্ষেত নষ্ট হয়ে গেছে। পায়রা ইউনিয়নে ৮৮ হেক্টর জমির আমন ধান ও ১৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত এখনো পানির নিচে তলিয়ে রয়েছে। এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে ১৪ হেক্টর জমির গ্রীষ্মকালীন পেয়াজ ও ৫ হেক্টর জমির কাঁচা মরিচ নষ্ট হয়েছে। নওয়াপাড়া পৌর এলাকার ৩১০ হেক্টর জমির আমন ধান ও ২০ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেতে ক্ষতি হয়েছে। সব মিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৩৮ কোটি ৩৬ লাখ টাকা।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, জলাবদ্ধতার কারণে ভেসে যাওয়া ৪ ইউনিয়নের পুকুর, দিঘি ও খামারের সংখ্যা ১ হাজার ২৫০টি। ক্ষতিগ্রস্ত মাছের ঘেরের সংখ্যা ৩ হাজার ৬৫০টি। যার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা।
চলিশিয়া ইউনিয়নের কোটা গ্রামের মৎস্যঘের মালিক কামরুজ্জামান তরফদার বলেন, কোটা গ্রামের চাতরা বিলে ২টি ও সুন্দলী ইউনিয়নে ৩টি মাছের ঘের রয়েছে তার। এ ৫টি ঘেরের জমির পরিমাণ ১১০ বিঘা (৫২ শতক)। ঘেরগুলো থেকে প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া ঘেরপাড়ের সবজি ক্ষেতও নষ্ট হয়েছে। এ ক্ষতি মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে। জলাবদ্ধতার স্থায়ী সমাধান না হলে প্রতি বছর আমার মত অসংখ্য ঘের মালিক ও কৃষক চাষাবাদ ছেড়ে অন্য ব্যবসা করতে বাধ্য হবে।
গুয়াখোলা গ্রামের কৃষক মহর আলী বলেন, বাড়ির পাশে ৬ বিঘা (৪২ শতক) জমিতে আমন ধান রোপন করা হয়েছিল। দুই দফা টানা বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ধানগাছ মরতে শুরু করেছে। এনজিও থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করব কিভাবে।
এ ব্যাপারে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা লাভলী খাতুন বলেন, ‘অভয়নগরের ভবদহ অঞ্চলের ৪টি ইউনিয়ন ও নওয়াপাড়া পৌরসভার কয়েকটি ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতার কারণে কৃষিতে ব্যাপক ক্ষতি রয়েছে। গত মৌসুমে আমন ধানের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হলেও এবার জলাবদ্ধতার কারণে তা সম্ভব হবে না। কারণ ৭ হাজার ৬৪০ হেক্টর জমিতে আবাদ করা আমন ধানের মধ্যে ১ হাজার ৮২৬ হেক্টর জমির ধান নষ্ট হতে শুরু করেছে। তিনি আরো বলেন, চরম এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সরকারিভাবে ৪৭৫ জন কৃষককে বিনামূল্যে টমেটো, বেগুন, শিম, লাউ, মিষ্টিকুমড়া, লাল শাক, গিমা কলমি শাকের বীজ ও নগদ এক হাজার করে টাকা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের কাছে মোবাইল ব্যাংকিং একাউন্টের মাধ্যমে দেয়া হবে।’
উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আমিনুল হক বলেন, ‘চলতি মাসের প্রথম দিকে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ভারী বৃষ্টিসহ নদ-নদীর পানি বেড়ে যাওয়ার কারণে অভয়নগরে মাছের ঘের মালিকরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। পায়রা, চলিশিয়া, সুন্দলী ও প্রেমবাগ ইউনিয়নসহ নওয়াপাড়া পৌর এলাকার ১ হাজার ২৫০টি পুকুর, দিঘি ও খামারের মাছ ভেসে গেছে। এছাড়া ৩ হাজার ৬৫০টি ছোট-বড় মাছের ঘেরের একই অবস্থা হয়েছে। সবমিলিয়ে ক্ষতির পরিমাণ ৯০ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। এ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিকট পাঠানো হয়েছে। তাদের নির্দেশনা মোতাবেক পরবর্তী করণীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’