বাবুল আক্তার, চৌগাছা: যশোরের চৌগাছা উপজেলায় ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় ক্রমশ কমছে সবজি আবাদের জমির পরিমাণ। এতে উপজেলার বাজারগুলোয় সবজির দামের ওপর প্রভাব পড়েছে। উৎপাদন কমে যাওয়ায় সব ধরণের সবজির বাজার দর বেড়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চৌগাছায় মোট জমির পরিমাণ ২৬ হাজার ৯১৯ হেক্টর। এর মধ্যে ফসলি জমি ২২ হাজার ৫০০ হেক্টর। সবজি উৎপাদন হয় ৩৯০০ হেক্টর জমিতে। ফল উৎপাদন হয় ১৮৬৪ হেক্টর জমিতে। সবচেয়ে বেশি উৎপাদন হয় আম; ৬৬০ হেক্টর জমিতে।
সূত্রমতে, কয়েক বছর আগে উপজেলায় ড্রাগন চাষির ছিল হাতে গোনা কয়েকজন। বর্তমানে প্রায় ৪০০ হেক্টর জমিতে ড্রাগন চাষ হচ্ছে। চাষিদের দেয়া তথ্যমতে পরিমাণ আরো অনেক বেশি। উপজেলায় লিচু বাগান রয়েছে ৮৫ হেক্টর ও কুল ৮৫ হেক্টর। এ ছাড়া অন্যান্য ফলের চাষ হয় আরো প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে।
চাষিরা বলছেন, যেসব জমিতে ড্রাগন, মাল্টা, পেঁয়ারা, লিচু ও কুল চাষ হচ্ছে; সেসব জমিতে একসময় সবজি চাষ হতো। উপজেলার চাষিরা বর্তমানে মাল্টা এবং ড্রাগন চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। যার কারণে উপজেলায় সবজি উৎপাদনে প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ৫/৬ বছর আগে উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে ব্যাপক পরিমাণ বাউকুল চাষ শুরু হয়। শুরুতে বাউকুল চাষ লাভজনক ছিল। পরে বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় বাউকুল চাষ কমে শুরু হয় পেঁয়ারা চাষ। এর পরেই শুরু হয় ড্রাগন চাষ।
জানা গেছে, ৫/৬ বছর আগে উপজেলার আড়সিংড়া গ্রামের শিক্ষিত যুবক ইসমাইল এই উপজেলায় প্রথম বিদেশি ফল ড্রাগন চাষ শুরু করেন। এর পর থেকেই বেশ কিছু ব্যক্তি শখের বশে ড্রাগনের চাষ শুরু করেন। প্রথম দিকে বাড়ির আঙিনা কিংবা পতিত জমিতে এই ফলের চাষ শুরু হলেও ধীরে ধীরে ফসলি জমিতে পরিকল্পিত ভাবে চাষ শুরু করা হয়। দিন যত যায় বাড়তে থাকে ড্রাগন চাষের পরিধি। এ ছাড়া উপলোয় বেশ আগের থেকেই অল্প পরিমাণ জমিতে লিচু ও আমের চাষ হচ্ছে।
চাষিরা বলছেন, লিচু, পেঁয়ারা, মাল্টা, ড্রাগন ও কুল এসব ফল চাষের জন্য একটু উঁচু জমির প্রয়োজন হয়। লাভজনক হওয়ায় সবাই উঁচু জমিতে ফলের চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। সবজি চাষেও উঁচু জমি দরকার হয়। কিন্তু ফল চাষের কারণে কমে গেছে। একটা জমিতে একবার ফলের বাগান করলে কমপক্ষে ১০/১২ বছর ধরে ফল পাওয়া যায। এতে সবজি চাষের জমির ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
জানা গেছে, সবজি উৎপাদনের রাজধানী খ্যাত চৌগাছায় এখন যে কোনো সবজি ৫০/৬০ টাকার নিচে কেজিতে কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। যার অন্যতম কারণ হচ্ছে উৎপাদন কমে যাওয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার বহু বেকার যুবক, কিংবা ব্যবসায়ী ও প্রবাসী ব্যক্তিরা ড্রাগনসহ বিভিন্ন ফলের চাষে ঝুঁকে পড়ছেন। এক একজন ব্যক্তি ২ বিঘা থেকে শুরু করে ১০/১৫ বিঘা পর্যন্ত ফলের বাগান করেছেন। যেসব জমিতে ফলের বাগান করা হয়েছে; সেসব জমির বেশির ভাগে আগে বেগুন, কাঁচা মরিচ, উচ্ছে, পটল, মুলা, শিম ও টমেটোসহ হরেক রকমের সবজি চাষ হতো।
রামকৃষ্ণপুর গ্রামের মাহাবুবুর রহমান বলেন, তিনি দীর্ঘ ৫/৭ বছর প্রবাসে ছিলেন। এখন দেশে এসে বসে না থেকে নিজের ৭ বিঘা জমিতে ড্রাগন ও মাল্টা চাষ করেছেন। এসব জমিতে আগে সবজি উৎপাদন হতো।
চৌগাছা বাজারের বিশিষ্ট চারা ব্যবসায়ি হাবিবুর রহমান বলেন, তিনি চারা ব্যবসার পাশাপাশি ১০ বিঘা জমি লিজ নিয়ে ড্রাগন ও মাল্টা চাষ করেছেন। তিনি জানান, এর আগে এই জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির সবজি উৎপাদন হতো।
চৌগাছা বাজারের সবজির আড়তদার কবির হোসেন, আইনাল হোসেন, বিএম সিদ্দিকুর রহমান বলেন, গত কয়েক বছর ধরে সবজির উৎপাদন কমে গেছে। সবজি চাষের জমিতে ফলের চাষ করায় এমনটি হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুসাব্বির হোসেন বলেন, ফলের চাষ বাড়াতে আমরা চাষিদের উদ্বুদ্ধ করছি। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। ফলের চাষ বেড়ে যাওয়ায় সবজির চাষের ক্ষেত্রে জমি কমতে শুরু করেছে সত্যি। কিন্তু সবজি চাষ বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে চাষিদের পরামর্শও দেয়া হচ্ছে।