Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

যশোর জেনারেল হাসপাতালে এতদিন তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারী পরিচালক পদ চলছে যেভাবে

এখন সময়: শনিবার, ১২ অক্টোবর , ২০২৪, ১০:০০:১৩ পিএম

 

বিল্লাল হোসেন: যশোর জেনারেল হাসপাতালে এখনো তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারী পরিচালকের পদ সৃষ্টি হয়নি। বর্তমানে ডা. হারুন অর রশিদকে এখানে সংযুক্তি দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক পদটি পরিচালনা করা হচ্ছে। তবে সহকারী পরিচালকের স্থানে কেউ নেই। আবার তত্ত্বাবধায়কের অর্ডারে আবাসিক মেডিকেল অফিসারের (অফিসার আরএমও) একটি পদ ভারপ্রাপ্তকে দিয়ে পরিচালনা হচ্ছে। প্রধান প্রধান পদে জোড়াতালি থাকায় হাসপাতালের চেইন অব কমান্ড নেই বললেই চলে। ফলে চিকিৎসা কার্যক্রমে হযবরল অবস্থা বিরাজ করছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চেইন অব কমান্ড দুর্বল থাকায় বর্তমানে সরকারি এই হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় রয়েছে নানা অনিয়ম। কর্মরত বিশেষজ্ঞরা শুধু খাতা কলমে রয়েছেন। বাস্তবে তারা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। মাঝে মাঝে ওয়ার্ড রাউন্ডে গেলেও তড়িঘড়ির কারণে রোগীরা ঠিকমতো কথা বলতে পারেন না। এ ছাড়া যশোর মেডিকেল কলেজের ডাক্তাররা হাসপাতালে ঠিকমতো চেম্বারে বসেন না। তারা ইচ্ছামতো আসেন আর যান। তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশনাও তারা কর্ণপাত করেন না।

মেডিকেল কলেজের অধীনে থাকায় হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক  তাদের বিরুদ্ধে জোরালোভাবে ব্যবস্থা নিতে পারেন না। তাদের অনিয়মের কারণে রোগীরা সরকারি হাসপাতালে সঠিক চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ফলে অনেকেই সরকারি হাসপাতাল ছেড়ে ক্লিনিকে চলে যেতে বাধ্য হন। এতে চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত বাণিজ্য আরও বেড়ে যায়। ক্লিনিক বানিজ্য জমজমাট করার জন্য চিকিৎসকরা সরকারি হাসপাতালে দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেন।  হাসপাতাল চলছে ইন্টার্ন ও অনারারি দিয়ে। সাধারণ রোগীদের সাথে তারাও খুব খারাপ আচরণ করেন।

সূত্র জানায়, ডা. আবুল কালাম আজাদ হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক পদে দায়িত্ব পালনকালীন ঘোষণা দিয়ে বন্ধ করা হয়েছিলো কোনো ইন্টার্ন ডাক্তার রোগীর মৃত্যু ঘোষণা দিতে পারবেন না। এ ছাড়া রোগীকে রেফার ও ছাড়পত্র  দেবেন না তারা। কিন্তু বর্তমানে সব কিছু চলছে আগের মতোই।

গত ৫ সেপ্টেম্বর রাতে ছুরিকাহত হয়ে ভর্তি হন যশোর শহরের বেজপাড়া মেইন রোডের পারভেজ আহমেদের ছেলে ইসতিয়াক আহমেদ (২৬)। তার বুকের আঘাতটি গুরুতর হলেও কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক তাকে দেখতে আসেননি। একজন ইন্টার্ন তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করে দেন। ওই রোগীর স্বজনরা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন এক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে আরেক মেডিকেলে রেফার করা সত্যিই দুঃখজনক। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অনিয়মের কারণে রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না। এতে আর্থিক ক্ষতির সাথে দুর্ভোগ বাড়ে। ইসতিয়াকের মতো একাধিক রোগীকে প্রতিদিন রেফার করছেন ইন্টার্নরা। 

চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ছাতিয়ানতলা গ্রামের সবজি বিক্রেতা রোকনুজ্জামান জানান, তার এক আত্মীয় কীটনাশক পান করে জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন। দুই দিন হাসপাতালে থাকলেও রোগী উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। কারণ হিসেবে তিনি জানান, দুই দিনই  ইন্টার্নরা তাকে চিকিৎসা দিয়েছেন। কোনো বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগীর কাছে আসেননি।

পুরুষ সার্জারী চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বজন আতিকুর রহমান জানান, গত বৃহস্পতিবার তার রোগীকে ভর্তি করা হয়। জরুরি বিভাগ থেকে চিকিৎসা ছাড়া সারদিনে কোনো চিকিৎসক রোগীর কাছে যাননি। পরের দিন শুক্রবারও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা রাউন্ডে আসেননি। ইন্টার্ন চিকিৎসক ছাড়া কোন চিকিৎসককে দেখা পাননি। আতিকুর রহমানসহ অনেকেই জানান, সরকারি এই হাসপাতাল চিকিৎসা নেই বললেই চলে। জরুরি মুহূর্তে রোগীর চিকিৎসাসেবায় ডাক্তার পাওয়া যায়না। কিছু কিছু সময় সিনিয়র সেবিকারা রোগীর কাছে আসেন না। ডাকলেও রুঢ় আচরণ করেন।

অভিযোগ উঠেছে,  বিশেষজ্ঞরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করেন না। তারা ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ব্যক্তিগত বাণিজ্য নিয়ে ব্যস্ত। বিশেষজ্ঞরা শুধু খাতা কলমে রয়েছে। ইন্টানরা এখন মূল ভূমিকায় রয়েছেন। ইন্টার্নরা ছাড়াও ওয়ার্ডবয় আয়া ও ঝাঁড়ুদার রোগীর চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন। ভর্তি ওয়ার্ডে কাটা ছেড়া রোগী আসলেই এগিয়ে আসেন ওয়ার্ডবয়, আয়া নতুবা ঝাড়ুদার। রোগীর স্বজনদের হাতে চিকিৎসা সামগ্রী কেনার শর্ট স্লিপ ধরিয়ে দেন। এরপর ইনজেকশন সিরিঞ্জ, স্যালাইন, সুই সুতো নিয়ে তারাই করেন চিকিৎসা। আবার ক্যানোলা, ইউরিন ব্যাগ, খাদ্য গ্রহণের পাইপ লাগানো কাজও তারা করেন। এতে তারা লাভবান হন। কেননা প্রতি রোগীর স্বজনদের জিম্মি করে হাসপাতালের কর্মীরা অর্থবাণিজ্য করেন। সার্জারী, মেডিসিন, গাইনী ওয়ার্ডে অধিকাংশ সময় চিকিৎসকের ভূমিকায় ওয়ার্ডবয় ও ঝাঁড়ুদারকে দেখা যায়। অর্থ ছাড়া কোন কাজই করছেন না তারা। কাজ করেই তারা বলেন আমরা বিনা বেতনে কাজ করি। এই বলেই টাকা দাবি করেন। দাবির চেয়ে টাকার পরিমাণ কম হলেই তার বেকে বসেন।

হাসপাতালের একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে হাসপাতালের চেইন অব কমান্ড দুর্বল হয়ে পড়ায় চিকিৎসক সেবিকা কর্মচারীরা যা ইচ্ছা তাই করছেন। সঠিকভাবে তদারকি ব্যবস্থা ও জবাবদিহিতা না থাকায় হাসপাতালে অনিয়ম বেড়েই চলেছে। সূত্রটি আরও জানায়, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংকটের অজুহাতে রোগীদের চিকিৎসাসেবা বঞ্চিত করা হচ্ছে। আর যেসব বিশেষজ্ঞ হাসপাতালে কর্মরত তারা রোগীর প্রতি চরম উদাসিন। হাসপাতালে সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন না করে ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিকে ব্যস্ত থাকেন তারা।

হাসপাতালের প্রশাসনিক সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালের প্রধান দুটি পদ স্থায়ী না করার ব্যাপারে মন্ত্রণালয়ের কোনো সাড়া নেই। বছরের পর বছর পদ দুটিতে ওএসডি কোনো কর্মকর্তাকে সংযুক্তি করে কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। তত্ত্বাবধায়ক পদে একজন সংযুক্ত থাকলেও ৪ বছরেরও বেশি সময় ধরে  সহকারী পরিচালক পদে কেউ নেই।  ২০০৯ সালে হাসান আল মামুনকে তত্ত্বাবধায়ক (উন্নয়ন) পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়। এরপর থেকে আর কেউ এই পদে আসেননি। পরে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয় উন্নয়নের তত্ত্বাবধায়ক পদটি বিলুপ্ত করে। এছাড়া সহকারি পরিচালক পদ সৃষ্টি করা হয়নি। বর্তমানে তত্ত্বাবধায়ক ও সহকারি পরিচালক পদটি পরিচালনা করা হয় অন্য কাউকে সংযুক্তি করে। প্রশাসনিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দুটি পদ সৃষ্টির জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে একাধিকবার চিঠি পাঠানো হয়েছে। কিন্তু সাড়া মেলেনি।

হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, অনিয়ম দূর করে সঠিকভাবে হাসপাতাল পরিচালনা করার জন্য নানাভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে। দায়িত্বে অবহেলা করা চিকিৎসক-সেবিকাদের সতর্ক করা হয়। তারপরও কিছু চিকিৎসক নিজেদের ইচ্ছামতো চলাফেরা করেন। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করার জন্য চেষ্টা অব্যাহত আছে।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)