নিজস্ব প্রতিবেদক: আমানত সংগ্রহে বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা পূরণে মরিয়া হয়ে উঠেছে যশোরের ব্যাংক কর্মরতরা। নিজেদের ব্যাংকে জেলা পরিষদের হিসাব খোলাতে স্থানীয় সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যানের সাথে দেখা করে দেনদরবার করছেন। সুদহার বেশি দেয়ার পাশাপাশি বিভিন্ন সুযোগ সুবিধার কথা বলছেন। ধনী ব্যবসায়ী ও যেসব প্রতিষ্ঠানের নগদ টাকা রয়েছে সেখানেই ছুটছেন।
যশোরের সরকারি-বেসরকারি ব্যাংকগুলোয় নগদ টাকার সংকট থাকায় আমানত সংগ্রহের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন ব্যাংকাররা। একেক ব্যাংক গ্রাহকের একেক রকম মুনাফা ‘অফার’ দিচ্ছে। যারা বেশি টাকা রাখছেন তাদেরকে দেয়া হচ্ছে বেশি মুনাফা। আর যারা কম পরিমাণে রাখছেন তারা কম মুনাফা পাচ্ছেন।
এক্ষেত্রে ঋণ দেয়ার চেয়ে আমানত সংগ্রহে আগ্রহ বেশি ব্যাংকগুলোর। ফলে ঋণপ্রাপ্তি থেকে ব্যবসায়ীরা বঞ্চিত হওয়ায় জেলার অর্থনীতিতে গতি ফিরছে না। এমনটি মনে করছেন আমদানিকারক ও ব্যবসায়ীরা।
ব্যবসায়ীদের ভাষ্য, ডলার সংকট থাকায় ছোট ব্যবসায়ীরা এলসি করতে পারছেন না। অনেক দোকানী তাদের কর্মী ছাটাই করেছেন। সব মিলিয়ে জেলার অর্থনীতিতে শ্লথ অবস্থা বিরাজ করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনার পর থেকে সারাদেশের মতো যশোরের অর্থনীতি শ্লথ গতিতে চলছে। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ এই অবস্থা আরও নাজুক করে তুলেছে। ডলার সংকটে সরকার আমদানিকে নিরুৎসাহিত করতে এলসি বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে কিছু বড় ব্যবসায়ীকে এলসি সুবিধা দেয়া হলেও বেশিরভাগ ব্যবসায়ী এলসি করতে পারছেন না। আবার ব্যবসায়ীক মন্দা থাকায় উৎপাদনমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানও চাহিদা অনুযায়ী পণ্য উৎপাদন করছে না।
যশোর শহরের মোটরপার্টস আমদানিকারক রোজোয়ান আহমদ জানান, ডলার সংকটে অনেক আগে থেকেই এলসি করতে পারিছ না। তার ওপর ব্যাংকগুলোতে ঋণ দিতে চাইছে না। তারা আমানত সংগ্রহের দিকে বেশি নজর দিচ্ছে। ব্যাংক যদি ঋণ বিতরণ স্বাভাবিক না করে তাহলে অর্থনীতিতে গতি ফিরবে না।
বিসিকে অবস্থিত এনায়েত ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানার স্বত্ত্বাধিকারী আকতার হোসেন বলেন, বাজারে টাকার অবাধ প্রবাহ না থাকলে সব ব্যবসায় মন্দাভাব থাকে। সুতরাং ব্যাংক ঋণ স্বাভাবিক না হলে অর্থনীতিতে গতি ফিরবে না।
রূপালি ব্যাংক যশোর কর্পোরেট শাখার ব্যবস্থাপক ও এজিএম শহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা আমানত সংগ্রহে বেশি নজর দিচ্ছি। তারপরও ঋণও দেয়া হচ্ছে। অর্থনীতিতে ব্যাংক ব্যবস্থা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর সব ধরণের কার্যক্রম স্বাভাবিক না হলে ব্যবসায় বাণিজ্য গতি আসবে না।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক শাকিল আলম বলেন, ব্যবসায় মন্দাভাব বিরাজ করায় আমরা ঋণ বিতরণের চেয়ে আমানত সংগ্রহ করছি। তবে ভালো ব্যবসায়ীদের ঋণ দেয়া হচ্ছে।
ঢাকা ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক হুময়ান কবীর জানান, ব্যাংকগুলো আমানত সংগ্রহের দিকে বেশি ঝুঁকেছে। সুদহার বাড়ার কারণে গ্রাহকদের জন্য সুবিধা হয়েছে। তবে দেখে শুনে ঋণ বিতরণ করা হচ্ছে বলে তিনি জানান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাংকের ব্যবস্থাপক জানান, বেশিরভাগ ব্যাংকে নগদ টাকার সংকট দেখা দিয়েছে। যে কারণে তারা আমানত সংগ্রহ করছেন অনেকটা প্রতিযোগিতা করে। কোন ব্যাংক ১২ শতাংশ, আবার কোন ব্যাংক সর্বোচ্চ ১৪ শতাংশ সুদ দিচ্ছে।
এ ব্যাপারে যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, সারা দেশে অর্থনৈতিক মন্দাভাব চলছে। বিশেষ করে আমদানি নির্ভর প্রতিষ্ঠানগুলো ডলার সংকটে পণ্য আনতে পারছে না। এতে তারা চরমভাবে লোকসানের শিকার হচ্ছেন। ব্যাংকগুলো যদি তাদের ঋণ প্রবাহ ধরে রাখতে না পারে, তাহলে শক্ত অবস্থানে থাকতে পারবে না। সংগৃহীত আমানতের ৮০ ভাগ ঋণ হিসেবে বিতরণ করতে হবে। তা না হলে অর্থনীতিতে গতি ফিরবে না। শুধু কেউ আমানত সংগ্রহ করবে, আর ঋণ বিতরণ করবে না, তাহলে সেই ব্যাংক প্রশ্নবিদ্ধ হবে।