বাগেরহাট প্রতিনিধি: খুলনা বিভাগীয় মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের আউটসোসিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এবছর গফফার সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের লাইসেন্স জালিয়াতির মাধ্যমে দরপত্রে অংশ নিয়ে কাজ পায়। তারা জনবল নিয়োগের কথা বলে প্রার্থীদের কাছে দেড় লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছে। একদিকে লাইসেন্স জালিয়াতির মাধ্যমে দরপত্রে অংশ নেয়া, অপরদিকে নিয়োগ প্রত্যাশীদের কাছে ঘুষ দাবি করায় ভুক্তভোগীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এবিষয়ের প্রতিকার পেতে ভুক্তভোগীরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সুপারিশসহ বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছেন।
জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন সুত্রে জানা গেছে, বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জে অবস্থিত খুলনা বিভাগীয় মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ৯ পদে আউটসোসিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগ দেয়া হয়ে থাকে। প্রতিবছর জুন মাসে এই টেন্ডার অনুষ্ঠিত হয়। এবছর টেন্ডারে অংশ নিয়ে আউটসোর্সিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগে দায়িত্ব পায় ঢাকার গফফার সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। কাজ পাওয়ার পর গত ১০ আগস্ট মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর থেকে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ে ঠিকাদারী সংস্থার লাইসেন্স যাচাইয়ের জন্য চিঠি দেয়া হয়। এই চিঠির জবাবে গত ২৭ আগস্ট শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের যুগ্ম মহাপরিদর্শক বুলবুল আহম্মেদ সাক্ষরিত পত্রে জানানো হয়, ‘লাইসেন্সটি অত্র দপ্তর থেকে ইস্যকৃত নয়। লাইসেন্স জালিয়াতির মাধ্যমে দরপত্রে অংশগ্রহণ করেছে।’
এদিকে আউটসোসিং পদ্ধতিতে জনবল নিয়োগে দায়িত্ব পাওয়া গফফার সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেডের পক্ষ থেকে এই প্রতিষ্ঠানে একই পদে কর্মরত ব্যক্তিদের সাথে যোগাযোগ করে তাদের ৬ বছরের জন্য নিয়োগ দেয়া হবে এমন মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে দেড় লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করা হয়। এবিষয়ে ওই প্রতিষ্ঠানের আয়া (আউটসোসিং) হাফিজা আক্তার জানান, দীর্ঘদিন তিনি মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে কাজ করছেন। যখন যে প্রতিষ্ঠান কাজ পেয়েছে তাদের দিয়েই কাজ করিয়েছে। গফফার সিকিউরিটি সার্ভিস লিমিটেড নামের এই প্রতিষ্ঠান তাদের কাছে ঘুষ দাবি করেছে।
ফিসারিজ কর্মী সোহাগ মোল্লা বলেন, মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে প্রতিবছর টেন্ডারের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। এখানে যেসব আউটসোর্সিং কর্মী আছে তাদের দিয়ে তারা কাজ করিয়ে থাকেন। কিন্তু এবছর যারা কাজ পেয়েছে তারা ৬ বছরের জন্য নিয়োগ দিবে এমন মিথ্যা কথা বলে দেড় লক্ষ টাকা ঘুষ দাবি করছে। তারা বিভিন্ন দালালের মাধ্যমে ঘুষ নিচ্ছে। ঘুষ লেনদেনের কয়েকটি কথোপোকথোনের অডিও ক্লিপসহ জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
দৈবজ্ঞহাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সামছুর রহমান মল্লিক জানান, মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের প্রশিক্ষার্থীরা নারী এবং তারা আবাসিক থাকায় এখানে ভালো লোক নিয়োগ হওয়া প্রয়োজন। যারা দীর্ঘদিন এখানে কাজ করছে তাদের নেয়া উচিৎ। ঘুষ দাবির বিষয়টি তিনি শুনেছেন জানিয়ে এই জনপ্রতিনিধি বলেন, জেলা প্রশাসককে ব্যবস্থা নেয় এজন্য তিনি সুপারিশ করেছেন।
মহিলা কৃষি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ড. মোখলেসুর রহমান বলেন, আউটসোসিং এ লোক নেয়ার ক্ষেত্রে পুরাতন যারা আছেন তাদের রাখার জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের মৌখিক নির্দেশনা রয়েছে। তাছাড়া যেহেতু এটি আবাসিক মহিলা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র সেহেতু পুরাতন কর্মচারী যারা দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন তাদের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ না থাকলে টেন্ডারের পর বিভিন্ন কোম্পানি তাদেরকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে।
এবিষয়ে বাগেরহাট মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ফরিদা পারভীন জানান, জালিয়াতির মাধ্যমে টেন্ডারে অংশগ্রহণ করা অপরাধ। অধিদপ্তর বিষয়টি নিয়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছে, জালিয়াতি প্রমাণিত হলে টেন্ডার বাতিলসহ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।