আটক আনোয়ারুল কবীরের বিরুদ্ধে যশোরে তিন মামলা, কারাগারে

এখন সময়: শুক্রবার, ২৯ মার্চ , ২০২৪, ০৪:৩৭:০৮ পিএম

 

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর শহরের খড়কী এলাকার বাসিন্দা এবং বর্তমানে ঢাকার মিরপুর থানার মধ্যপীরের বাগ শেওড়া পাড়ায় বসবাসকারী পুলিশের হাতে আটক বহু বিতর্কিত ও সমালোচিত সেই আনোয়ারুল কবীরের বিরুদ্ধে যশোর কোতয়ালি থানায় তিনটি মামলা হয়েছে।

দুইটি মামলা হয়েছে চাঁদাদাবি ও মানহানি করাসহ হুমকি দেয়ার অপরাধে। অপরটি হয়েছে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে। মামলা গুলো করেছেন যথাক্রমে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধ শহিদুল ইসলাম মিলন (৭০), সদর উপজেলার নরেন্দ্রপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ (৩৬) এবং চাঁচড়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক ফুলের মেয়ে জেলা যুব মহিলা লীগের নেতা শেখ সাদিয়া মৌরিন। তবে মৌরিনের দায়েরকরা মামলায় আনোয়ারুল কবীর ছাড়াও সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের মৃত শাহাদত হোসেন বিশ্বাসের ছেলে শহিদুজ্জামান (৪৮)কে তার সহযোগি হিসাবে আসামি করা হয়েছে।

শহিদুল ইসলাম মিলন এজাহারে উল্লেখ করছেন, আনোয়ারুল কবীর নিজের নামে ফেসবুক আইডি খুলে গত ১০ মার্চ ভিত্তিহীন ও মানহানিকর তথ্য সম্বলিত পোস্ট আপলোড করে। তাতে ৮৯জন ব্যক্তি লাইক দেয়। বাঘারপাড়া আওয়ামী লীগ ফেসবুক পেইজ থেকে মানহানিকর কমেন্টস লিখেছে। এছাড়া খোরশেদ ও বাবলু নামে ফেসবুক আইডি থেকে লেখা হয়েছে, ‘বাংলাদেশের রাজনীতিকরা অতিত ইতিহাস ভুলে যায়। তারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, যশোরের তথাকথিত দুর্নীতিবাজ নীতিহীন, আদর্শহীন রাজনীতিকরা যতবড় ক্ষমতাধর হোক না কেন হিসেব নিকাশ একদিন দুনিয়ায় দিয়ে যেতেই হবে। সে দিন বেশি দুরে নয়।’

এরপর ২০ মার্চ দেয়া একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘যশোর আওয়ামী লীগ বলে আর কিছু নেই বলে মনে হয়, সব আত্মীয় লীগ।’ ২১ মার্চ বেলা ১১টার দিকে জেলা আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়ে অবস্থানকালে আনোয়ারুল কবীর তার মুঠোফোনের হোয়াটসঅ্যাপ মাসেঞ্জারে কল করে। বলে ‘আপনি একজন অকৃতজ্ঞ বেঈমান লোক। আমি আপনাকে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে সাহায্য করেছিলাম। বিভিন্ন জায়গায় তদবির করে আমি আপনাকে সভাপতি হতে সাহায্য করেছি। কিন্তু আপনি সভাপতি হয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন জায়গায় ষড়যন্ত্র শুরু করেছিলেন। ইতোমধ্যে দেখেছেন আমি আপনার সম্পর্কে বিভিন্ন মানহানিকর তথ্য দিয়ে জনসাধারনের মনে আপনার সম্পর্কে বিরুপ ধারনা পোষন করাতে সক্ষম। আমার লেখা পড়ে না এমন কোন লোক নেই। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আপনি এমপি হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। আপনি আমার ক্ষমতা সম্পর্কে অবগত আছেন। কিছু করলে তো কিছু করতে হয়। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আপনি প্রতিমাসে আমাকে বাজার খরচ হিসাবে ৫০ হাজার টাকা করে দিবেন। আমি আপনার সম্পর্কে ফেসবুকে ভাল ভাল কথা লিখে জনসাধারনের কাছে আপনার গ্রহনযোগ্যতা বৃদ্ধি পাবে। আপনি আমার প্রস্তাবে রাজি হলে দ্রুত জানাবেন। না হলে আপনার বিরুদ্ধে আমি লিখতেই থাকবো।’ সেখানে উপস্থিত লোকজন আনোয়ারুল কবীরের চাঁদা চাওয়ার বিষয়টি শুনেছেন। তার বিরুদ্ধে অসত্য তথ্য ফেসবুক পেইজে উল্লেখ করে চাঁদা দাবি করে। এছাড়া গত ৯ মার্চ একটি এবং গত বছরের ২১ নভেম্বর তার বিরুদ্ধে আরো দুইটি পোস্ট দেয়। এতে তার ৫ কোটি টাকার মানহানি ঘটেছে বলে তিনি এজাহারে উল্লেখ করেছেন।

চেয়ারম্যান রাজু আহমেদ এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তিনি জনগনের প্রত্যক্ষ ভোটে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন এবং জেলা যুবলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। আসামি আনোয়ারুল কবীর তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে নানা বিভ্রান্তিকর প্রপাকান্ডা চালাচ্ছে। গত ১৩ মে বিকেল ৩টার দিকে তিনি ইউনিয়ন পরিষদের বসেছিলেন। সে সময় আনোয়ারুল কবীর তার হোয়াটসঅ্যাপে কল করে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। চাঁদা না দিলে তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ ফেসবুকে চালিয়ে যাবে বলে হুমকি দেয়।

শেখ সাদিয়া মৌরিন এজাহারে উল্লেখ করেছেন, আনোয়ারল কবীর ছাড়াও তার মামলার আসামি দুইজন। অন্যজন হলো, সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া গ্রামের মৃত শাহাদত হোসেন বিশ্বাসের ছেলে শহিদুজ্জামান (৪৮)। তার নামে একটি ফেসবুক আছে। সেই ফেসবুক আইডি থেকে তার ব্যক্তিগত ছবি সংগ্রহ করে সেগুলো এডিট করে গত ২১ মে থেকে ২৪ মে পর্যন্ত ফেসবুকে আপলোড করেছে। তাকে হেও প্রতিপন্ন করার জন্য আসামি উদ্দেশ্যমূলকভাবে এই কাজ করেছে। অপর আসামি শহিদুজ্জামানও একই কাজ করেছে। বিভিন্ন ব্যক্তি ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে ওই ছবি গুলো পোস্ট করে সামাজিকভাবে মানসম্মানের ক্ষতি করেছে।

কোতয়ালি থানার এসআই তাপস মন্ডল জানিয়েছেন, আটক আনোয়ারুল কবীরকে বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। তার বিরুদ্ধে রিমান্ড আবেদন করা হবে।