Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒রেডিয়েশন ঝুঁকিতে টেকনোলজিস্ট রোগী ও স্বজনেরা

যশোরে এক্সরে কক্ষের দরজায় লোহা- তামার পাতের পরিবর্তে গ্লাস ও পর্দা!

এখন সময়: মঙ্গলবার, ১ জুলাই , ২০২৫, ০৪:৪৩:৩৫ এম

বিল্লাল হোসেন : রেডিয়েশন (তেজস্ক্রিয়তা) সবার জন্য ক্ষতিকারক। রেডিয়েশন নির্গমনে বাংলাদেশ পারমাণবিক গবেষণা ইনস্টিটিটের নির্দেশনা অনুযায়ী সকল স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের এক্সরে কক্ষ নির্মাণে দেওয়াল ১০ ইঞ্চি ও দরজায় লোহা বা তামার পাতের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু যশোরের অধিকাংশ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ নিয়মের কোনো বালাই নেই। তারা যেনতেনভাবে কক্ষে তৈরি করে এক্স-রে মেশিন স্থাপন করছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা না মেনে এক্সরে কক্ষের দরজায় সাধারণ গ্লাস লাগিয়ে ও কাপড়ের পর্দা ঝুলিয়ে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। সেখানে কর্মরতরা নির্ধারিত পোশাক ব্যবহার করছেন না। রোগীর সাথে আসা স্বজনদের এক্স-রে কক্ষে হরহামেশায় ঢুকছে। ফলে মানুষের রেডিয়েশন ঝুঁকিতে পড়ছে। অসচেতনার কারনে নিজের অজান্তেই শরীরে বয়ে নিয়ে আসছেন ঘাতক ব্যাধি ।

জানা গেছে, পারমানবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ (পানিবিনি) বিভাগ, বাংলাদেশ পরমানু শক্তি কমিশন (বাপশক) ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিপত্রে এক্স-রে স্থাপনায় বিকিরণ ঝুঁকি  হ্রাসের নানা ধরনের নির্দেশাবলী রয়েছে।  নিন্ম তা উল্লেখ করা হলো।

জনসাধারণ ও রোগির জন্য নির্দেশনা-এক্স-রে স্থাপনটি স্থাপনটি বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন (বাপশক) কর্তৃক লাইসেন্সপ্রাপ্ত কিনা দেখে নিন।

*চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে এক্স-রে সম্পাত গ্রহন করবেন না। অপ্রয়োজনীয় সম্পাত স্বল্প মেয়াদে ও দীর্ঘ মেয়াদে আপনার ক্ষতির কারন হতে পারে।

 * গর্ভবতী মায়েরা চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিরেকে এক্সরে সম্পাত থেকে বিরত থাকুন।

*বিকিরণ সতর্কীকরণ চিহ্নিত স্হানে অনুমতি ব্যতিত প্রবেশ করবেন না।

 বিকিরণ কর্মীর জন্য নির্দেশনা-*এক্সরে সম্পাত প্রদানকালে টি এল ডি ব্যাজ ধারণ করা অত্যাবশ্যক ।

* বিকিরণ ঝুঁকি কমানো লক্ষ্যে এক্সরে মেষিন চালানোর সময় কন্ট্রোল বুথ (ব্যারিয়ার) ব্যবহার অথবা লেড এ্যাপোন, লেড গ্লোপভস এবং গগলস পরিধান করুন।

* এক্সরে মেশিন চালানোকালে সময়, দুরত্ব ও বর্ম নীতি মেনে চলুন।

প্রতিঠানের স্বত্বাধিকারীর জন্য নির্দেশনা-*পানিবানি আইনের ধারা-৪ এবং বিধি-৭ অনুযায়ী বাপশক থেকে লাইসেন্স গ্রহন করা আইনত বাধ্যতামূলক।

* কমিশন থেকে প্রাপ্ত লাইসেন্স কপি এক্সরে কক্ষের প্রবেশ দ্বারে লাগানোর ব্যবস্থাগ্রহণ করুন।

*এক্সরে সম্পাত প্রদানকালে বিধি মোতাবেক বিকিরণ নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থ্যা গ্রহন করুন।

*প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত এক্সরে অপারেটর ছাড়া এক্সরে অপারেটর ছাড়া এক্সরে মেশিন পরিচালনা করবেন না।

এদিকে পানিবনি বিধিমালা ৯৭-এর বিধিÑ৯৫  অনুযায়ি লাইসেন্স  ব্যতীত এক্সরে মেশিন, সিটি, মেমোগ্রাফি, ফ্লোরোস্কপি, এনজিওগ্রাম, ডেন্টাল  ইত্যাদি পরিচালনা করা যাবে না।

বিকিরণ ঝুঁকি থেকে বিকিরণ কর্মী জনসাধারণ ও পরিবেশের  নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে পারমানবিক নিরাপত্তা ও বিকিরণ নিয়ন্ত্রণ (পানিবিনি)  আইন-১৯৯৩ এবং বিধিমালা -১৯৯৭ জারি করা  আছে। কিন্তু বাসÍবে আইনের প্রয়োগ না থাকায়  হাসপাতাল,  ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিকরা অনিয়ম করার সুয়োগ পাচ্ছেন।

সূত্র জানায়,  বাংলাদেশ পারমাণবিক গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে এক্সরে কক্ষ নির্মাণে নির্দেশনা থাকলেও সেটি কোথাও মানা হচ্ছে না। রেডিয়েশন নির্গমনে কক্ষের দেওয়াল ১০ ইঞ্চি ও দরজায় লোহা বা তামার পাতের ব্যবস্থা রাখারও নির্দেশনা রয়েছে। কিন্তু যশোরের অধিকাংশ হাসপাতাল,  ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এ নিয়ম মানা হচ্ছেনা । তারা ইচ্ছামতো এক্সরে কক্ষ তৈরি করে রেডিয়েশন ঝুঁকির মধ্যে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন। বছরের পর বছর এই অনিয়ম চলে আসলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন না।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, যশোর শহরের জেস ক্লিনিক, পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টার, কমটেক ডায়াগনস্টিক, মেডিকিউর ডায়াগনস্টিক, আল্ট্রাভিশন ডায়াগনস্টিকসহ বিভিন্ন হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারস ঘুরে দেখা গেছে কোথাও এক্স-রে কক্ষ নির্মানে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মানা হয়নি। কক্ষে ছাদের পরিবর্তে টিনের ছাউনি, কাচের দরজা ও ৫ ইঞ্চি দেয়াল দেয়া হয়েছে। যা সম্পূর্ণ নিয়মবর্হিভূত।

যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে রেডিওলজি বিভাগে দায়িত্বরত একজন বিশেষজ্ঞ নাম  প্রকাশ না করার শর্তে জানান, রোগ নির্ণয়ে এক্সরেসহ নানা ধরনের পরীক্ষা এখন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এক্স-রে ও অন্যান্য পরীক্ষার সময় নির্গত হওয়া রেডিয়েশন প্রতিরোধ করার কোনও ব্যবস্থা নেই। আর এই রেডিয়েশন মানুষকে ক্ষতি করছে নানাভাবে।

চোখে দেখা না-যাওয়া এই রেডিয়েশন এক্স-রে বা অন্য মেশিন স্হাপন করা  কক্ষের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তার শরীরে প্রবেশ করলে ভবিষ্যতে ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আবার কোনও কারণে যদি কেউ নিয়মিত বা ঘন ঘন এক্সরে করেন, তার শরীরে রেডিয়েশন প্রবেশ করে চোখে ছানিপড়া, ক্যান্সার, গর্ভপাত, বন্ধ্যাত্ব, মাথার চুল পড়ে যাওয়াসহ নানান জটিল রোগের সৃষ্টি হয়। এমনকি গর্ভাবস্থায় এটি হলে গর্ভস্থ শিশু বিকলাঙ্গ কিংবা প্রতিবন্ধী হওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও জন্ম গ্রহণ করার ঝুঁকি থাকে।

তিনি বলেন, নিয়ম অনুযায়ী একজন টেকনোলজিস্টের দিনে ১৫ থেকে ২০ বার এক্স-রে এক্সপোজ দেওয়ার কথা থাকলেও সরকারি হাসপাতালগুলোতে দিনে তাদের ৮০ থেকে একশ’বারের ওপরে এক্সপোজ দিতে হয়। রেডিওগ্রাফারদের নিষেধ সত্ত্বেও রোগীর সঙ্গে আসা স্বজনরা জোর করে ঢোকেন এক্স-রে কক্ষে। তারা নিজেরাও জানেন না যে, নিজেদের অজান্তেই তারা শরীরে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন ঘাতক ব্যাধির লক্ষণ।

যশোর মেডিকেল কলেজের কার্ডিওলজি বিভাগের  সাবেক সহযোগী অধ্যাপক ডা. কাজল কান্তি দাঁ জানান, শরীরে রেডিয়েশন প্রবেশ করার কারণে অনেকেই হৃদরোগসহ নানা রোগে আক্রান্ত  হয়ে মানুষ মারা  যাচ্ছেন। নিয়মনীতি না মেনে এক্সরে কক্ষ নির্মাণ ও অসচেতনতার কারনে অনেকেই রেডিয়েশনে আক্রান্ত হচ্ছেন।

যশোরের সিভিল সার্জন ডা. বিপ্লব কান্তি বিশ্বাস জানান, বাংলাদেশ পারমাণবিক গবেষণা ইনস্টিটিউট থেকে অনুমোদন না নিয়ে যশোরের অধিকাংশ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিজেদের  ইচ্ছামতো এক্সরে বিভাগ খোলার ব্যাপারে তিনিও অবগত হয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে জোরালো পদক্ষেপ গ্রহন করবে স্বাস্থ্য বিভাগ। কেননা রেডিয়েশন নির্গমনে কক্ষের দেওয়াল ১০ ইঞ্চি ও দরজায় লোহা বা তামার পাতের ব্যবস্থার নিয়ম না মানার কারনে সংশ্লিষ্ট বিভাগে কর্মরত এবং রোগী ও স্বজনরা সব সময় রেডিয়েশন ঝুঁকির মধ্যে থাকেন।

এতে করে মানুষের ক্যান্সার, হৃদরোগ, চোখে ছানি, প্রজনন ক্ষমতা হ্রাস পাওয়াসহ নানা অসংক্রামক রোগে মানুষের আক্রান্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে । নিয়ম না মেনে এক্সরে কক্ষ চালু করা হলে সেগুলো বন্ধ করে দেয়া হবে।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)