আকবর হজ গ্রুপের প্রতারণায় হজে যেতে পারেননি অর্ধশত ব্যক্তি

এখন সময়: শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:২৪:৩১ এম

নূরুল হক, মণিরামপুর : মণিরামপুরের সদর ইউনিয়নের বাকোশপোল গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক আকরাম বিশ্বাস সস্ত্রীক হজ পালনের জন্য ২০১৮ সালে আকবর হজ গ্রুপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেন। আকরাম বিশ্বাস সস্ত্রীক হজের জন্য আকবর হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকীর ভাতিজা মোয়াল্লিম মাওলানা মাহাবুবুর রহমানের সাথে ৬ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। ইতোমধ্যে বিভিন্ন্ অজুহাত দেখিয়ে সেটা বৃদ্ধি করে তাদের কাছ থেকে দ্বিগুণ অর্থাৎ ১২ লাখ টাকা আদায় করা হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে তারপরও তারা হজ পালন করতে সৌদি আরবে যেতে পারেননি। শুধু আকরাম বিশ্বাস নয়, এ রকম প্রতারণা করা হয়েছে উপজেলার কাশিমনগর ইউনিয়নের হুমোতলা গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ, সাড়াপোল এলাকার আবদুল মজিদসহ বিভিন্ন এলাকার অন্তত অর্ধশত ব্যক্তির সাথে। আর এ সব ব্যক্তির কাছ থেকে বিভিন্ন হারে প্রায় ২ কোটি টাকা আদায় করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। হজে যেতে না পারার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। ফলে এসব বিক্ষুব্ধ ভুক্ত ভোগীদের রোষানল থেকে রেহাই পেতে মোয়াল্লিম মাহাবুবুর রহমান এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার বাকোশপোল গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আকরাম বিশ্বাস সস্ত্রীক হজব্রত পালন করতে ২০১৮ সালে আকবর হজ গ্রæপের মোয়াল্লিম মাওলানা মাহাবুবুর রহমানের মাধ্যমে রেজিষ্ট্রেশন করেন। এ সময় মাহাবুবুর রহমানের সাথে তারা স্বামী-স্ত্রী রেজিস্ট্রেশনসহ হজ পালন করতে তিন লাখ করে মোট ছয় লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে পাসপোর্ট জমা দেন। সে মোতাবেক চলতি বছর তাদের হজ পালন করতে নিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে মাহাবুবুর রহমান ইতোমধ্যে চুক্তির দ্বিগুণ অর্থাৎ ৬ লাখ করে মোট ১২ লাখ টাকা আদায় করেন। আকরাম বিশ্বাস অভিযোগ করেন, হজফ্লাইট শুরু হবার পর থেকে মাহাবুবুর রহমান তাদেরকে সৌদি আরবে নিয়ে যাবার জন্য কয়েকটি তারিখ নির্ধারণ করেন। কিন্তু অদ্যাবধি তাদেরকে নেয়া হয়নি। একই অভিযোগ করে হুমোতলা গ্রামের কাঠ ব্যবসায়ী আবদুল আজিজ জানান, তিনিও মাহাবুবের মাধ্যমে ২০১৮ সালে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়ে রেজিষ্ট্রেশন করেন। তার কাছ থেকে ইতোমধ্যে প্রায় ৪ লাখ টাকা নিয়েছে। কিন্তু তাকেও হজে পাঠাতে পারেননি। হজে যেতে ব্যর্থ হয়ে হাউমাউ করে কাঁদতে কাঁদতে আবদুল আজিজ জানান, আকবর হজ গ্রুপের মোয়াল্লিম মাহাবুবুর রহমানের কাছ থেকে তিনি একটি টাকাও এ পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেননি। একই অভিযোগ করেন সাড়াপোল এলাকার আবদুল মজিদ। তিনি জানান, মাহাবুবুর রহমান বর্তমান এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে।

অপরদিকে পৌর শহরের গাংড়া এলাকার কাঠ ব্যবসায়ী হাজী আমজাদ আলী জানান, তারা কাছ থেকে প্রতারণা করে মাহাবুবুর প্রায় সাড়ে ৩ লাখ টাকা নিয়েছেন। পৌর শহরের মাছবাজারের ব্যবসায়ী আবদুস সালাম জানান, তার কাছ থেকে অগ্রিম বাবদ মাহাবুবুর প্রায় ৪ লাখ টাকা নিয়েছেন। এ অভিযোগ শুধু মণিরামপুরে নয়। এভাবে মাহাবুবুর রহমান প্রতারণা করেছেন কেশবপুর, পাটকেলঘাটা, সাতক্ষীরাসহ বিভিন্ন জেলার অন্তত: অর্ধশত ব্যক্তির সাথে। আর এসব ব্যক্তির কাছ থেকে হজ পালনের জন্য তিনি বিভিন্ন হারে প্রায় ২ কোটি টাকা আদায় করেন। হজে যেতে বঞ্চিত হবার পর বিষয়টি জানাজানি হয়। ফলে হজ পালনে বঞ্চিতদের রোষানল থেকে নিজেকে রক্ষা করতে মাওলানা মাহাবুবুর রহমান এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে। এ ব্যাপারে কথা হয় মোয়াল্লিম মাহাবুবুর রহমানের ছোট চাচা আকবর হজ গ্রুপের চেয়ারম্যান মুফতি লুৎফুর রহমান ফারুকীর সাথে। তিনি জানান মাহাবুবুর রহমান তার কাছে হজযাত্রীদের জন্য কোনো টাকা জমা দেননি। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, খুব শিঘ্রই আকবর হজ গ্রæপ থেকে মাহাবুবুরকে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাদ দেওয়া হবে। এ দিকে মাহাবুবুর রহমানের পিতা মতিয়ার রহমান জানান, ছেলের অপকর্মের খেসারত হিসেবে ঈদের পর তিনি জমি বিক্রি করে সকলের পাওনা পরিশোধ করবেন। উল্লেখ্য ইতোপূর্বে আকবর হজ গ্রুপের বিরুদ্ধে হাজীদের সাথে এধরনের প্রতারণার অনেক অভিযোগ রয়েছে।

এ বিষয় জানতে চাইলে মণিরামপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নুর ই আলম সিদ্দীকি জানান, এ বিষয়ে থানায় এখনও পর্যন্ত কোনো অভিযোগ হয়নি। অভিযোগ হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।