স্ত্রী হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন

এখন সময়: শনিবার, ২৭ এপ্রিল , ২০২৪, ০৪:৩৩:৫৩ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর বেনাপোলের পুটখালি গ্রামের গৃহবধূ রেহেনা খাতুন হত্যা মামলায় স্বামী খলিলুর রহমানের যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও অর্থদণ্ডের আদেশ দিয়েছে একটি আদালত। মঙ্গলবার বিশেষ দায়রা জজ ও স্পেশাল জজ (জেলা ও দায়রা জজ) আদালতের বিচারক মোহাম্মদ সামছুল হক এক রায়ে এ সাজা দিয়েছেন। দণ্ডপ্রাপ্ত খলিলুর রহমান বেনাপোল পুটখালী গ্রামের আব্দুল কাদেরের ছেলে। সরকার পক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেছেন স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট সাজ্জাদ মোস্তফা রাজা।

মামলার অভিযোগে জানা গেছে, ১৯৯৯ সালে শার্শার ইছাপুর গ্রামের সাখাওয়াত উল্লার মেয়ে  রেহেনা খাতুনকে বিয়ে করেন আসামি খলিলুর রহমান। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। ২০০৯ সালের শুরুর দিকে খলিলুর জোর করে রেহেনার আপন ছোট বোন মিনা খাতুনকে বিয়ে করে। কয়েকদিনের মধ্যে মিনাকে উদ্ধার করে অন্যাত্র বিয়ে দেয় পরিবারের লোকজন। এ নিয়ে রেহানার সাথে খলিলুরের মধ্যে বিরোধের সৃষ্টি হয়। খলিলুর তার স্ত্রী রেহেনার উপর শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন শুরু করে। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে সন্তানদের নিয়ে পিতার বাড়ি চলে যায় রেহেনা। রেহেনাকে তার স্বামী খলিলুর বাড়ি ফিরিয়ে নিতে চাইলে রাজি হয়না। ২০০৯ সালের ১৪ জুন দুপুরে খলিলুর তার পরিচিত তোতার মাধ্যমে রেহেনার সাথে দেখা করে। এ দিন বাড়ি না ফেরায় খোঁজাখুঁজি করে উদ্ধারে ব্যর্থ হয় স্বজনরা। পরদিন ইছাপুর গ্রামের মাঠের মধ্যে থেকে রেহেনার মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। নিহতের মা আবেদা খাতুন বাদী হয়ে খলিলুর রহমানকে আসামি করে পরদিন শার্শা থানায় হত্যা মামলা করেন।

মামলার তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা হত্যার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে খলিলুরকে আটক করে ওই বছরের ১৬ জুন আদালতে সোপর্দ করেন। খলিলুর তার স্ত্রী রেহেনাকে হত্যার কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়। জবানবন্দিতে খলিলুর জানায়, ঘটনার দিনে তারা দুইজন এক সাথে ঘুরেছে। সন্ধ্যায় ইছাপুর রেহেনার পিতার বাড়ি যেয়ে মালামাল রেখে পাশের আম বাগানে তার সাথে দেখা করতে বলে। রেহেনা সন্ধ্যার পর আম বাগানে আসলে তারা দুই জন মাঠের মধ্যে যেয়ে কথাবার্তা বলছিল। একপর্যায়ে রেহেনাকে সব কিছু ভুলে আবার সংসার করতে বল্লে সে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। কথাকাটাকাটির একপর্যায়ে খলিলুর রেহেনার গলা টিপে ধরে। রেহেনা মাটিতে পড়ে গেলে গলায় শাড়ি পেঁচিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর পালিয়ে যায় বলে স্বীকার করে।

এ মামলার দীর্ঘ তদন্ত শেষে হত্যার সাথে জড়িত থাকায় খলিলুরকে অভিযুক্ত করে ওই বছরের ২৭ অক্টোবর আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা বাঁগআচড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই গোলাম মোস্তফা। সাক্ষ্য গ্রহণ শেষে আসামি খলিলুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় বিচারক তাকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ডের আদেশ দিয়েছেন। সাজাপ্রাপ্ত খলিলুর রহমান জামিনে মুক্তি পেয়ে পলাতক আছে।