রাজয় রাব্বি, অভয়নগর (যশোর) : শীতের আমেজ নেমে আসতেই যশোরের অভয়নগর উপজেলায় শুরু হয়েছে কুমড়ো বড়ি তৈরির ব্যস্ততা। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ভোরের রোদ উঠলেই বাড়ির উঠান, বারান্দা ও ছাদে শুরু হয় বড়ি শুকানোর দৃশ্য। নারী-পুরুষ মিলে বড়ি তৈরিতে অংশ নিচ্ছেন। গ্রামজুড়ে এখন কুমড়ো বড়ি বানানোর এক ধুম লেগেছে। কুমড়ো বড়ি শুধু সুস্বাদুই নয়। এটি গ্রামবাংলার একটি প্রাচীন ও জীবন্ত ঐতিহ্য, যা এখনও শীতের সকালে ঘরে ঘরে রঙ ছড়িয়ে দেয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, মাষকলাই ডাল, চাল ও কুমড়োর বাটা দিয়ে তৈরি এ বড়ি দীর্ঘদিন ধরে শীতকালীন রান্নায় আলাদা স্বাদ যোগ করে আসছে। প্রতি বছর শীত এলেই পরিবারের সারা বছরের চাহিদা অনুযায়ী বড়ি তৈরি করা হয়। অনেক পরিবার অতিরিক্ত বড়ি বানিয়ে বাজারে বিক্রিও করেন। এতে শীত মৌসুমে অনেক নারীর বাড়তি আয় হয়।
বর্তমানে বাজারে মাষকলাই ডালের দাম কেজি প্রতি ১৫০ থেকে ২০০ টাকা এবং চালকুমড়া ৭০ থেকে ১০০ টাকা। ৫ কেজি কুমড়া ও ২ কেজি মাষকলাই দিয়ে উন্নতমানের বড়ি তৈরি করা যায়। উৎপাদন খরচ কেজি প্রতি দাঁড়ায় ১২০ থেকে ১৭০ টাকা। বাজারে বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২৫০ টাকায়।
শ্রীধরপুর ইউনিয়নের দিঘীরপাড় গ্রামের নুরজাহান বেগম বলেন, আগে ডাল বাটতে অনেক সময় লাগতো। এখন মেশিন থাকার কারণে অল্প সময়ে বেশি বড়ি বানানো যায়। সবচেয়ে জরুরি হলো রোদ পাওয়া। দুই থেকে তিন দিন রোদ পেলেই বড়ি শুকিয়ে খাওয়ার উপযোগী হয়।
চলিশিয়া ইউনিয়নের কাদিরপাড়ার ফিরোজা বেগম বলেন, ছোটবেলা থেকেই দেখছি সবাই বড়ি বানাতো। প্রযুক্তির কারণে এখন সেই কষ্ট নেই। কাজও সহজ হয়েছে।
ইওয়াপাড়া বাজারের ব্যবসায়ী গৌড় চন্দ ও উজ্জ্বল চন্দ্র জানান, এখানকার বড়ির চাহিদা শুধু স্থানীয় বাজারেই নয় ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়। স্বাদের কারণে বছরের এই সময়ে কুমড়ো বড়ির বাজার বেশ জমে ওঠে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোছা. লাভলি খাতুন বলেন, ‘কুমড়ো বড়ি তৈরি এখন গ্রামীণ নারীদের জন্য বাড়তি আয়ের একটি মাধ্যম। প্রশিক্ষণ ও যথাযথ সহায়তা দিলে তারা আরও বেশি লাভবান হতে পারবেন। এতে গ্রামীণ অর্থনীতিও শক্তিশালী হবে।’