Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

ফুলের রাজধানীতে ব্যস্ত চাষিরা

এখন সময়: মঙ্গলবার, ১৬ ডিসেম্বর , ২০২৫, ০৭:২১:৪৯ এম

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফুলের রাজধানী খ্যাত যশোরের গদখালিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষিরা। ফুল চাষিদের জন্য আসন্ন বিজয় দিবস মৌসুমের প্রথম অনুষ্ঠান। এ বাজার ধরতে এরই মধ্যে সব প্রস্তুতি শেষ করেছেন চাষিরা। এ বছর অতিবৃষ্টির কারণে বিলম্বে চাষাবাদ শুরু হলেও চাষিদের নিবিড় পরিচর্যায় মাঠে মাঠে এখন শোভা পাচ্ছে গাঁদা, চন্দ্রমল্লিকা, গোলাপ, জারবেরা ও গ্লাডিওলাসসহ নানা ধরনের ফুল। গাছে গাঁদা ফুল ধরে রাখতে চলছে ভিটামিন ও বালাইনাশক স্প্রে। এর মধ্যে বাড়তে শুরু করেছে সব ধরনের ফুলের দামও। বিজয় দিবসের আগে এ দাম আরো বাড়বে বলে আশা চাষিদের।
তবে সামনে জাতীয় নির্বাচন ও রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে ফুলবেচাকেনার শঙ্কায় রয়েছেন তারা। বছরজুড়ে ফুলের চাষ হলেও জানুয়ারি থেকে ফেব্রুয়ারি এই দুই মাস ফুলের চাহিদা বেশি থাকে। এই সময়ে জাতীয় নির্বাচন ও তার পরবর্তী রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে ভাবনা তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।
গদখালির ফুলচাষি ইসমাইল হোসেন বলেন, ‘প্রতি বছর আমরা শীতের মৌসুমের বিশেষ দিবসগুলো ঘিরে ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে থাকি। চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহের জন্য চাষিরা কয়েক মাস আগে থেকেই ক্ষেত পরিচর্যায় ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এবার আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। কিন্তু মৌসুমের শুরুতে ফুলের দামে ধস নেমেছে। বিশেষ দিবসগুলোতে ফুলের দাম বাড়বে কিনা সংশয় রয়েছে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে ফুলের বাজার। তবুও আশা করছি বাজার ভাল হবে।’
যশোর-বেনাপোল মহাসড়কের পাশে গদখালি বাজারে প্রতিদিন কাকডাকা ভোরে বসে ফুলের মোকাম। এলাকার চাষিরা তাদের খেতে উৎপাদিত ফুল নিয়ে হাজির হন। দেশের বিভিন্ন প্রান্তের খুচরা ও পাইকার ব্যবসায়ীরা এখানে আসেন। দরকষাকষির মাধ্যমে ফুল কিনে পৌঁছে দেন দেশ-দেশন্তরে। শীতের মৌসুমে ফুলের বাজার জমজমাট থাকে। দেশের অন্যতম বৃহত্তম ফুলের মোকাম গদখালিতে বছরে ৫শ’ থেকে ৬শ’ কোটি টাকার ফুল হাতবদল হয়। দেশের চাহিদার সিংহভাগ ফুল সরবরাহ করে এলাকার চাষিরা। আজ বৃহস্পতিবার সকালে দেখা গেছে, কেউ বাইসাইকেল বা ভ্যানে করে বাহারি সব ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। শরীরে শীতের পোশাক পরিধান করা এসব চাষীরা গতকাল বিকালে নিজ ক্ষেত থেকে ফুল কেটে রাখে বিক্রির জন্য। কেউ কেউ খুব ভোরে ক্ষেত থেকে কেটেছেন এসব বাহারি ফুল। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্থানীয় বাইরের পাইকারের সমগমে বাড়তে থাকে ফুলের দাম। দর ধামে ঠিক হলেই বাসের ছাঁদে বা ট্রাকে যায় ঢাকা চট্টগ্রাম, রাজশাহীসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এদিন গোলাপ বিক্রি হয়েছে প্রতি পিচ ৩- ৪ টাকা, রজনিগন্ধা ৮ থেকে ১৫ টাকা, জারবেরা ৮-১০ টাকা, গাদা প্রতি হাজার ১০০ টাকা। গ্লাডিওলাস ৬-৮ টাকা, জারবেরা ৭-৮ টাকা, চন্দ্রমল্লিকা ২-৩ টাকা। কৃষকেরা জানান, এখন গোলাপ ও রজনিগন্ধা ছাড়া সব ফুলের দাম উর্দ্ধমুখি। আগামি সপ্তাহ থেকে এই দুটি ফুলের দামও বৃদ্ধি পাবে বলে জানান তারা।
গদখালি মোকামে ফুল বিক্রি করতে আসা চাষি সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘শীতকালে ফুলের উৎপাদন ও বিক্রি বাড়ে। এবছরও আমরা ফুল বিক্রির প্রস্তুতি নিয়েছি। আজকে বাজারে গোলাপ ফুল বিক্রি হয়েছে সর্বোচ্চ তিন টাকা পিস। বর্তমানে বাজারে গোলাপ ও গাঁদা সবচেয়ে কম। বাকি সব ফুলের দাম উর্ধ্বমূখী। আশা করছি বিজয় দিবস উপলক্ষে সবধরণের ফুলের দাম বাড়বে। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির উপর নির্ভর করছে ফুলের বাজার। দেশের পরিবেশ স্থিতিশীল থাকলে ফুলের বাজার চাঙা হবে।’
ঝিকরগাছার কুলিয়া গ্রামের চাষি আরিজুল ইসলাম বলেন, এক বিঘা জমিতে রাজনীগন্ধা ফুলের চাষ করেছি। প্রায় ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় দুই লাখ টাকার ফুল বিক্রি করেছি। আশা করছি আরও প্রায় তিন লাখ টাকার ফুল বিক্রি করতে পারবো। মৌসুমের শুরুতেই রজনীগন্ধা ফুলের দাম ভাল পাচ্ছি। বর্তমানে ১০-১২ টাকা পিস বিক্রি করলেও এ মৌসুমে সর্বোচ্চ ২১টাকা পিস রজনীগন্ধা বিক্রি করেছি। যা রেকর্ড দামে বিক্রি হয়েছে।
পটুয়াপাড়া গ্রামের চাষি তৈয়ব আলী বলেন, ‘এক বিঘা জমিতে গোপাল চাষে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। গোলাপ ফুলের উৎপাদন বেশি। বাজারে গোলাপের সরবরাহ বেশি হওয়ায় দাম কমেছে। গাঁদা ফুলের দামেও ধস নেমেছে। আশা করছি বিজয় দিবসের আগে আবার ফুলের দাম বাড়বে। এই মৌসুমে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লাভবান হতে পারবো।’
ফুল চাষ ও বিপণনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানান, প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস, ২৫ ডিসেম্বর ক্রিসমাস ডে, পহেলা জানুয়ারি ইংরেজি নববর্ষ, ১৩ ফেব্রুয়ারি বসন্তবরণ উৎসব, পরদিন ১৪ ফেব্রুয়ারি ভ্যালেন্টাইনস ডে, ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসসহ বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি অনুষ্ঠানকে টার্গেট করে ফুল বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। এ বছরও ৫ শ’ কোটি টাকার ফুল বিক্রির টার্গেট নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন যশোর ফুল উৎপাদন ও বিপণন সমবায় সমিতির সভাপতি আব্দুর রহিম। তিনি বলেন, ‘দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না থাকলে অনুষ্ঠান বা জাতীয় দিবসগুলো জাঁকজমকপূর্ণভাবে হয় না। তাই আমাদের ফুলের চাহিদা ও বিক্রি কমে যায়। তারপরও বাজার ধরার জন্য আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। আশা করি দিবসগুলোতে ফুলের দাম আরও বাড়বে।’
কৃষি বিভাগের তথ্য মতে, যশোরের প্রায় সাড়ে ৬ শ’ হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ১৩ ধরণের ফুলের চাষ হয়। এ ব্যবসার সঙ্গে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক লোক জড়িত।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)