বাগেরহাট প্রতিনিধি: বঙ্গোপসাগরের লোনাজলে পূণ্যস্নানের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চরে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের তিনদিনের ঐতিহাসিক রাস উৎসব। বুধবার সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে হাজার হাজার নারী পুরুষ ও শিশু ভক্তবৃন্দ আলোরকোল সমুদ্র সৈকতে নেমে স্নান করেন। ভোর সাড়ে পাঁচটা থেকে শুরু হয়ে প্রায় ঘণ্টাব্যাপী চলে এই স্নানোৎসব। স্নান শেষে পূজা -আর্চনা সম্পন্ন করে নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা হন ভক্তবৃন্দ।
সুন্দরবন বিভাগ জানায়, এবছর রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ সনাতন ধর্মের রাধা-কৃষ্ণের ভক্ত অনুসারীর আগমন ঘটে। আগত ভক্তরা গত সোমবার সন্ধ্যা থেকে দুবলার আলোরকোলে অস্থায়ীভাবে নির্মিত রাধা-কৃষ্ণের মন্দিরে পূজা-আর্চনাসহ লীলা কীর্তনে মাতোয়ারা হন। রাস পূজার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুবলার চর ও আলোরকোলজুলে এক উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করে।
বনবিভাগ জানায়, পুণ্যার্থী ও পূজাস্থলের নিরাপত্তা এবং এই উৎসবকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের সব ধরনের আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় বনবিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী ও পুলিশের একাধিক টিম কাজ করেছে। বিশেষ করে কোস্টগার্ডের একাধিক স্টেশন ও আউটপোস্টের সদস্যসহ উদ্ধারকারী জাহাজ ‘স্বাধীন বাংলা’ ও ডুবুরি দল পূজা ও সমুদ্র সৈকতের স্নানস্থলে সার্বক্ষণিক নিয়োজিত ছিলো। এছাড়া উৎসবস্থলে বাগেরহাট ও খুলনার জেলা প্রশাসন, বনবিভাগ ও পুলিশের উর্ধ্বতন ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। উৎসবের দ্বিতীয় দিন মঙ্গলবার দুপুরে সমুদ্রে গোসল করতে নেমে সুমন নামে এক পূণ্যার্থী নিখোঁজ হয়েছিলেন। পরে কোস্টগার্ডের স্বাধীন বাংলা জাহাজ তল্লাশি করে বিকেলে তাকে জীবিত উদ্ধার করে।
রাস উৎসব উদযাপন পরিষদ ও দুবলা ফিমারমেন গ্রুপের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, দুর্গম বঙ্গোপসাগর পাড়ে প্রায় ২শ বছর ধরে চলে আসছে হিন্দু ধর্মের এই রাস উৎসব ও রাস মেলা। এ মেলাকে কেন্দ্র করে দেশি-বিদেশি পর্যটকসহ লাখ লাখ পূজার্থীর আগমন ঘটে। কিন্তু সংক্ষিত বনের জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে ২০১৭ সালের পর থেকে মেলার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় বনবিভাগ। এখন সীমিত আকারে শুধুমাত্র হিন্দু ধর্মের মানুষের জন্য এই পূজাস্থলে আসার অনুমতি দেয়া হয় বনবিভাগ থেকে। এবারে রাস পূজা বনবিভাগ ও একাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হয়েছে।
সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জ কর্মকর্তা (এসিএফ) রানা দেব বলেন, তিনদিনের রাস উৎসবে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ১৩ হাজার ৫১৯ পূণ্যার্থী অংশ নিয়েছিলেন। উৎসবটি সফল ও শান্তিপূর্ণ করার জন্য বনবিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড, পুলিশসহ বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা আন্তরিকভাবে সহযোগিতা করেছেন।