নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযান চালিয়েছে। রোববার দুপুর সোয়া ১২ টা থেকে পৌনে ৩ টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করা হয়। এসময় রোগীর খাবারে অনিয়ম, বিনামূল্যের ওষুধ-স্যালাইন ঠিকমতো রোগীদের না দেয়া ও প্লাস্টার বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম দেখতে পান দুদক কর্মকর্তারা। সংক্রমক ওয়ার্ডে রোগীদের বিনামূল্যের কলেরা স্যালাইন না দিয়ে স্টোরে মজুদ রাখায় ওয়ার্ড ইনচার্জ দিলারা খাতুনকে ভৎর্সনা করা হয়।
দুদক যশোরের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আল আমিনের নেতৃত্বে একটি টিম আকস্মিকভাবে হাসপাতালে অভিযানে আসেন। অভিযানে অন্যদের মধ্যে ছিলেন দুদকের ডেপুটি সহকারি পরিচালক (ডিএডি) মোহাম্মদ তহিদুল ইসলাম, ডিএডি চিরঞ্জিব নিয়োগী।
দুদক কর্মকর্তারা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের সাথে কথা বলে হাসপাতালের স্টোর, রান্নাঘর, প্লাস্টার রুম, মডেল ওয়ার্ড, গাইনী ওয়ার্ড ও সংক্রামক ওয়ার্ডে অনিয়মের খোঁজ-খবর নেন। এসময় বিভিন্ন অনিয়মের প্রমাণ মেলে। অভিযান শেষে দুদক টিম হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়কের কক্ষে গিয়ে অনিয়মের সত্যতা পাওয়ার বিষয়টি প্রকাশ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়।
দুদক যশোরের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ আল আমিন সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে জানান, হাসপাতালের রান্নাঘরে গিয়ে রোগীদের খাবারের মান পরীক্ষা করা হয়। রোগীর ২০০ গ্রামের অনেক কম ভাত দেয়া হচ্ছে। সকালে নাস্তার পাউরুটির আকার ছোট। মাছের পরিমান কম দেয়া হচ্ছে। ডিমের আকারও ছোট। খাবারের লবন, পেঁয়াজ ও রসুন নিম্নমানের। সয়াবিনের বদলে পামওয়েল ও পচা পেঁয়াজ-রসুন দিয়ে খাবার রান্না করা হচ্ছে। এছাড়া চিকন চালের বদলে মোটা চালের ভাত ছাড়াও নিম্নমানের ডাল খাওয়ানো হচ্ছে রোগীদের।
তিনি আরও জানান, সংক্রামক ওয়ার্ডে গিয়ে দেখা যায় ওয়ার্ড ইনচার্জ দিলারা খাতুন স্টোরে ৬০পিস কলেরার স্যালাইন মজুদ করেছেন। অথচ রোগীরা বিনামূল্যের এই স্যালাইন পাচ্ছে না। রোগীর স্বজনরা বাইরে থেকে কলেরা স্যালাইন কিনে এনেছে। এছাড়া বিনামূল্যের অন্য ওষুধ সামগ্রী ঠিক মত পাচ্ছে না রোগীরা। ওয়ার্ড ইনচার্জ দিলারা খাতুনকে শোকজ করার জন্য হাসপাতাল তত্ত্বাবধায়ককে বলা হয়েছে। এছাড়া হাসপাতালের প্রধান স্টোরেও ১০০ পিস কলেরা স্যালাইন মজুদ রয়েছে। স্টোর কিপার এগুলো যথাসময়ে সরবরাহ না করে স্টোরে রেখে দিয়েছেন।
এছাড়া প্লাস্টার কক্ষে রোগীদের জিম্মি করে হাসপাতালের নিজস্ব কর্মচারী ও বহিরাগতরা মিলেমিশে বাণিজ্য করছেন। হাসপাতালের কেউ না এমন ব্যক্তিরা রোগীর প্লাস্টার করে ১শ’ থেকে ৫শ’ টাকা পর্যন্ত আদায় করছেন। প্লাস্টার সামগ্রী বাইরে থেকে কিনে আনতে বাধ্য করা হচ্ছে। এসব অনিয়মগুলো হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ককে অবহিত করা হয়েছে। অনিয়ম সংশোধনে তিনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। ধরা পড়া অনিয়মের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করবেন।
হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হুসাইন শাফায়াত জানান, রোববার দুপুর সোয়া ১২ টার দিকে হঠাৎ করে দুদুকের টিম হাসপাতালে অভিযানের জন্য আসে। তারা প্রায় ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানে বিভিন্ন অনিয়মের প্রমান মিলেছে বলে জানানো হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কর্মকর্তারা কেনো এই অনিয়ম করছেন তার জন্য জবাবদিহিতা করা হবে।