নকিব সিরাজুল হক, বাগেরহাট: দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় লাইফ লাইন মোংলা সমুদ্র বন্দরের পশুর চ্যানেলের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও পশুর চ্যানেলের গভীরতা ঠিক রাখতে আবারও শুরু হচ্ছে ড্রেজিং। ১ হাজার ৫৩৮ কোটি টাকার ৪৫ কিলোমিটারের এই ড্রেজিং প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে নৌবাহিনী। পশুর চ্যানেলে ড্রেজিং হলে মোংলা বন্দরে পণ্য ভর্তি ১০ মিটার ড্রাফটের দেশি-বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজ ভিড়তে পারবে। গতি বাড়বে বন্দরের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্যে।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, বন্দরের পশুর চ্যানেলে নাব্য সংকটের কারণে কনটেইনারবাহী ৯ দশমিক ৫০ মিটার গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ বন্দরে সরাসরি প্রবেশ করতে না পারাসহ নানা কারণে ২০০২ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত মৃতপ্রায় সমুদ্র বন্দরে পরিণত হয়েছিল মোংলা। সে সময় বন্দরটি অচল হয়ে পড়ার মূল কারণ ছিল বন্দরের বহির্নোঙর ও বন্দর চ্যানেলে ড্রেজিং না করা। এই অবস্থায় মোংলা বন্দরের পশুর চ্যানেলে নাব্য সংকট দূর করতে ২০২০ সালে ৭১২ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৪ কিলোমিটার বহির্নোঙর ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হয়। এরপর ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দর চ্যানল দিয়ে অনায়াসে আসা যাওয়া করছে। এখন বন্দর জেটিতে স্বাভাবিক ভাটার সময় ৯ দশমিক ৫০ মিটারের অধিক গভীরতা সম্পন্ন জাহাজ আনার জন্য বন্দরের ১৪৫ কিলোমিটার নৌ চ্যানেলের মধ্যে নৌবাহিনী ৪৫ কিলোমিটার নৌপথ খননের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এই ড্রেজিংয়ের কাজ শেষ হলে খুব সহজেই পণ্য ভর্তি ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বন্দর জেটিতে ভিড়তে পারবে। বাড়বে বন্দরের নৌচলাচলের সক্ষমতা। একই সাথে পশুর চ্যানেলের নাব্যতা ফিরলে বন্দরের বড় বড় মাদার ভেসেল ভিড়তে আর কোনো সমস্যা থাকবে না।
মোংলা বন্দর ব্যবহারকারী ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ও জুলফিকার আলী জানান, দেশের আমদানি রফতানি বাণিজ্যের দ্বিতীয় লাইফ লাইন মোংলা বন্দরের গতিশীলতা ও সক্ষমতা বাড়াতে পশুর চ্যানেলে ড্রেজিংয়ের কোনো বিকল্প নেই। নিয়মিত ড্রেজিং না করায় বন্দরে জাহাজ আসা যাওয়া ব্যাহত হয়। এতে মোংলা বন্দরের পাশাপাশি আমদানি রফতানিকারকসহ দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মোংলা সমুদ্র বন্দরের পশুর চ্যানেলের গভীরতা বাড়াতে ড্রেজিং প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করারও দাবি জানান এই দুই বন্দর ব্যবহারকারী।
মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল শাহীন রহমান জানান, দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম সমুদ্র বন্দরকে সক্ষমতা বাড়াতে নিয়মিত পশুর চ্যানেল ড্রেজিংয়ের বিকল্প নেই। প্রথমে বহির্নোঙর ড্রেজিং শেষের পর এখন পশুর চ্যানেলের ড্রেজিংয়ের কাজ হচ্ছে। বন্দর চ্যানেল ড্রেজিং শেষ হলে নাব্যতা সংকট নিরসনসহ বন্দরের আমদানি রপ্তানি বাণিজ্য আরো বাড়বে। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মোংলা সমুদ্র বন্দরের সক্ষমতা কয়েকগুন বৃদ্ধি পাবে। মোংলা বন্দর দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় আরো বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে। চলতি বছর বন্দরে রেকর্ড সংখ্যক জাহাজের আগমন-নির্গমনের সাথে রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও জানান মোংলা বন্দর চেয়ারম্যান।