নিজস্ব প্রতিবেদক: কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম বলেছেন, রাজনীতির বৈষম্যের শিকার হয়ে যেসব মাদ্রাসা এমপিও হয়নি সেসব মাদ্রাসাকে এমপিওভুক্ত করা হবে।
তিনি বলেন, যশোর একটি পুরাতন ও ঐতিহ্যবাহী জেলা। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষার মান বৃদ্ধির কার্যক্রম এ জেলা থেকে শুরুর লক্ষ্যে মতবিনিময় সভা করা হয়েছে। একারনে আমি সচিব হওয়ার পর নিজের জেলা কুষ্টিয়া বাদ দিয়ে যশোর জেলায় প্রথম মতবিনিময় সভা করে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানদের কাছ থেকে সমস্যার কথা শুনেছি।
জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কালেক্টরেট সভা কক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে অনুষ্ঠিত জেলার মাদ্রাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের সাথে মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি একথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, দেশে কওমী মাদ্রাসাগুলো সরকারি সুযোগ সুবিধা ছাড়া পরিচালনা করছে। অথচ এসব মাদ্রাসায় শিক্ষার্থী ভর্তি বাড়ছে। অন্য মাদ্রাসাগুলো সরকারি সুযোগ সুবিধা নিয়ে কার্যক্রম পরিচালিত হলেও শিক্ষার্থী ভর্তি কম থাকছে। এজন্য হীন মানসিকতা দুর করতে হবে। শিক্ষার্থী বাড়াতে হলে শিক্ষার প্রতি সেভাবে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, মাদ্রাসায় শিক্ষার্থীরা লেখাপড়া করলেও আরবিতে তারা দুর্বল। দুর্বলতা দুর করতে প্রথম শ্রেণি থেকে ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের আরবিতে পারদর্শি করে তোলার জন্য শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু কারিগরি প্রশিক্ষণ নিয়ে বিদেশ গেলে সমস্যায় পড়তে হবে। সমস্যা দুর করতে কারিগরি শিক্ষায় ইংরেজি শেখানোর জন্য আলাদা কোর্স চালু করতে হবে। সেই সাথে জনবল সংকট দুর করতে আগামী ৩১ জানুয়ারির মধ্যে সাড়ে ৩ হাজার জনবল নিয়োগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ২০২২ সালের পর যে সব মাদ্রাসা এমপিওভুক্ত হয়নি সেগুলো এমপিও করার চিন্তা ভাবনা চলছে। কিন্তু অর্থ সংকট রয়েছে।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের স্থানীয় সরকারি বিভাগের উপপরিচালক রফিকুল হাসানের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন জেলা শিক্ষা অফিসার মাহফুজুল হোসেন, যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটরে অধ্যক্ষ প্রকৌশলী আব্দুল মতিন হাওলাদার, আমিনিয়া কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ সাখাওয়াত হোসেন, টেকনিক্যাল স্কুলের অধ্যক্ষ প্রকৌশলী সাজ্জাদ হোসেন, জিরাট মাদ্রাসার অধ্যক্ষ আবু জাফর, লাউড়ী কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মফিজুর রহমান, বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক জয়নাল আবেদীন প্রমুখ। এসময় বিভিন্ন মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন। পরিচালনা করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) খালেদা খাতুন রেখা।
এর আগে মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা সচিবের কাছে তাদের সমস্যা তুলে ধরে বলেন, দাখিল পাস করে অনেক শিক্ষার্থী কলেজের ভর্তি হয়। এসএসসি পাস করে কোন শিক্ষার্থী আলিমে ভর্তি হয় না। একারণে আলিমে শিক্ষার্থী ভর্তি কমে যায়। এসএসসি পাস করে যাতে শিক্ষার্থীরা আলিমে ভর্তি হয়, সেজন্য নতুন শিক্ষানীতি প্রণয়ন করতে হবে। মাদ্রাসায় পড়াশুনা করলেও অনেক শিক্ষার্থী আরবিতে নাম লিখতে পারছে না। তারা বাংলা, ইংরেজিতে স্মার্ট হচ্ছে। আরবীতে দক্ষ করতে শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তনসহ আরবী শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে। বিগত সরকারের সময় অনেক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ এমপিদের তাবেদারি না করাই এমপিও হয়নি। রাজনৈতিক যাতাকলে পিষ্ট হয়েছে। এখন যেন সে রকমভাবে পিষ্ট না করে মাদ্রাসা এমপিও ভুক্ত করার দাবি জানান।
এরপর সচিব ড. খ ম কবিরুল ইসলাম যশোর পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ল্যাব পরিদর্শন করাসহ শিক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করেন। শিক্ষকরা সচিবের কাছে দাবি জানান, তাদের ইন্সকেক্টর, জুনিয়র ইন্সকেক্টর, পদকে সহকারী অধ্যাপক ও প্রভাষক করা ও কর্মচারী সংকট দুর করতে হবে।