সুব্রত কুমার ফৌজদার, ডুমুরিয়া : দীর্ঘদিন যাবত সংস্কার না হওয়াসহ বিভিন্ন কারণে গেটের মুখে পলি আটকে খুলনার ডুমুরিয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ৭৫টি স্লুইসগেট অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ফলে এসব গেট দিয়ে পানি নিষ্কাশন না করতে পারায় সংশ্লিষ্ট এলাকায় জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। যে কারণে ভারিবর্ষণে চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে কৃষিতে। তবে বিশেষ কিছু অঞ্চলের পানি নিষ্কাশনের লক্ষে ৩ স্লুইজ গেটের মুখে পলি অপসারণের উদ্যোগ নিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ।
জানা যায়, পলি জমে খুলনা জেলার ডুমুরিয়া অঞ্চলের অধিকাংশ নদ-নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। যার কারণে কমে গেছে পানির প্রবাহ। ডুমুরিয়া ও বটিয়াঘাটা সীমান্তবর্তী খরস্রোতা শোলমারী নদী গত ৪/৫ বছরের মধ্যে ভয়াবহ পলি পড়ে প্রায় সমতল ভূমিতে রূপ নিয়েছে। যশোর সীমান্তবর্তী বিলখুকশির বিলে টিআরএম প্রকল্প বন্ধ হওয়ার কয়েক বছরের মধ্যে হরি নদী পলিপড়ে তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। একই অবস্থায় রূপ নিয়েছে সালতা ও ভদ্রা নদী। যে নদী দুইটি গত ২০১৮-২০১৯ অর্থ বছরে ৩০ কোটি টাকা বরাদ্দে পুনঃখনন করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। খননের ২ বছর যেতে না যেতে পলিপড়ে নদীর বেশিরভাগ অংশটুকু সমতল ভূমিতে পরিণত হয়েছে। সালতা নদীটি ডুমুরিয়া সদর থেকে টিয়াবুনিয়া পর্যন্ত পলি পড়ে ছোট খালে রূপ নিয়েছে। এসব নদী-খালে পাউবো’র ১৭/১, ১৭/২, ২৫, ২৬, ২৭/১, ২৭/২ ও ২৮/১ নম্বর পোল্ডারের ওয়াপদা বাঁধে ৭৫টি স্লুইসগেট রয়েছে। যার সবকয়টি অকার্যকর হয়ে পড়েছে পলি জমার কারণে। পানি নিষ্কাশন না হতে পারায় গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টিতে ডুমুরিয়া অঞ্চলের অধিকাংশ এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
গত এক সপ্তাহ যাবত চলছে শোলমারী, চহেড়া ও ষষ্ঠীতলা স্লুইসগেটের পলি অপসারণের কাজ। এসব্ গেটের মুখে ১৫ থেকে ২০ ফুট পর্যন্ত পলি পড়েছে। চহেড়া ২ ভেন্ট স্লুইসগেটে একটা স্কেভেটর দিয়ে কাজ করতে দেখা গেছে, ষষ্ঠীতলা ১ ভেন্ট স্লুইসগেটে একটা ছোট ড্রেজিং মেশিনদ্বারা কাজ চলছে। আর শোলমারী ১০ ভেন্ট স্লুইসগেটে ৩ ড্রেজিং মেশিন দিয়ে পলি অপসারণের কাজ চলছে।
খর্ণিয়া ইউপি চেয়ারম্যান শেখ দিদারুল হোসেন দিদার জানান, পলি পড়ে চহেড়ার ২ ভেন্টে স্লুইসগেট বন্ধ হয়ে পড়েছে। যার কারণে সিংগার বিলে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ দেখে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ আলোচনা করে কাজ শুরু করেছি। দ্রুত পানি নিষ্কাশন করতে না পারলে সিংগার বিলে অনাবাদি হয়ে পড়বে ৬ হাজার একর কৃষি জমি। খাদ্যে চরম সংকটে পড়বে এ অঞ্চলের মানুষ। দ্রুত নদী খননসহ পানি নিষ্কাশনের স্থায়ী ব্যবস্থার জন্য সরকারের প্রতি জোরদাবী জানিয়েছেন তিনি।
জেলা বিএনপি নেতা সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মোল্যা মোশাররফ হোসেন মফিজ জানান, কিছুদিন আগে এলাকাবাসীকে নিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমে শোলমারী গেটের মুখে পলি অপসারণের কাজ করেছি। গেটের মুখে প্রচুর পলি পড়েছে। যার কারণে উপজেলা প্রশাসন ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগে পলি অপসারণের কাজ চলছেৃ। আশাকরি খুব দ্রুত পানি নিষ্কাশন করা সম্ভব হবে।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড খুলনার নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রহমান তাযকিয়া জানান, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের নদীগুলো নাব্যতা সংকটে ভুগছে। জোয়ারে পানি সাথে সমুদ্রে থেকে অস্বাভাবিক পলি আসার কারণে এ নাব্য হৃাস পাচ্ছে। ডুমুরিয়া অঞ্চলে পাউবোর বিভিন্ন পোল্ডারে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ৭৫টি স্লুইসগেট রয়েছে। যার সবকয়টি পলি পড়ে অকার্যকর হয়ে গেছে। বেশ কয়েক বছর ধরে বর্ষা মৌসুমে গেটের মুখে পলি অপসারণ করে আসছি। জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে জরুরি ভিত্তিতে শোলমারী, চহেড়া ও ষষ্ঠীতলা স্লুইসগেটে পলি অপসারণের কাজ করছি। তবে একাজ সম্পন্ন করতে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হবে বলে তিনি জানিয়েছেন। বুধবার গেটগুলো পরিদর্শন করেছেন পাউবো নির্বাহী প্রকৌশলী আ. রহমান তাযকিয়া, পাউবো’র এসডি আতিকুর রহমান ও এসও তরিকুল ইসলাম।