নিজস্ব প্রতিবেদকঃ যশোর শহরের খড়কী ধোপা পাড়ায় আয়েশা খাতুন নামে এক শিশুকে হত্যা মামলায় সৎ মা পারভীন সুলতানাকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ। তদন্ত শেষে আদালতে এ চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই এসআই আব্দুর রাজ্জাক। মামলায় আটক পারভীন সুলতানা সাতক্ষীরার শ্যামনগরের নুরনগর এলাকার আব্দুল্লাহ আলম মামুনের মেয়ে ও ধোপা পাড়ার লরেন্স রায়ের বাড়ির ভাড়াটিয়া ওয়াসকুরুনী ওরফে পিন্টুর দ্বিতীয় স্ত্রী।
মামলার অভিযোগে জানা গেছে, রাজমিস্ত্রি পিন্টু তার প্রথম স্ত্রী-সন্তান নিয়ে শহতরতলীর খোলাডাঙ্গায় বসবাস করতেন। পিন্টু দ্বিতীয় বিয়ে করে খড়কীতে পারভীন সুলতানাকে নিয়ে বসবাস করেন। পিন্টুর প্রথম স্ত্রী দ্বিতীয় বিয়ের বিষয়টি নিয়ে মীমাংসায় ব্যর্থ হয়ে ছেলে ও মেয়ে আয়েশাকে তার পিতার কাছে রেখে যান। পারভীন সুলতানা প্রথমে সতীনের ছেলে-মেয়ে লালন পালনে অপরাগতা প্রকাশ করলেও পরে তা মেনে নিতে বাধ্য হন। শিশু আয়েশা কিছুটা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিল। এ কারণে কথা মতো চলার জন্য তার ওপর নির্যাতন করতো তার সৎ মা। পিন্টুকে তার ছেলে ও মেয়েকে তাদের মায়ের কাছে দিয়ে আসতে চাপ দিত পারভীন সুলতানা। পিন্টু রাজি না হওয়ায় তাদের মধ্যে প্রায় ঝগড়া বিবাদ হতো। এ কারণে ক্ষুব্ধ পারভীন সুলতানা শিশু আয়েশাকে হত্যার পরিকল্পনা করে।
চলতি বছরের ১৩ জানুয়ারি সকাল ৭টার দিকে পিন্টু কাজের সন্ধানে বাইরে যান। এই সুযোগে আয়েশাকে হত্যার উদ্দেশ্যে তার ভাইকে খেলা করার কথা বলে বাড়ির বাইরে পাঠিয়ে দেয় পারভীন সুলতানা। এরপর বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে আয়েশাকে কিল-ঘুষি ও খামচি দিয়ে জখমসহ ঝাড়ু দিয়ে মারধর করে পারভীন সুলতানা। চুল ধরে ঘরের দেয়ালেল সাথে তার মাথায় আঘাত করা হয়। মারধরের একপর্যায়ে আশেয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে। তখন ঘটনাটি ভিন্নখাতে নিতে অসুস্থ হয়ে পড়েছে বলে আয়েশাকে হাসপাতালে নিয়ে যায় পারভীন সুলতানা। হাসপাতালে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক আয়েশাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পরবর্তীতে পুলিশ লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করতে গিয়ে তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। পরে খবর পেয়ে নিহতের পিতা পিন্টু হাসপাতালে আসেন। ময়নাতদন্ত শেষে দাফনের জন্য তিনি মেয়ের লাশ নিয়ে যান। লাশ দাফন শেষে মামলা করার কথা ছিল পিন্টুর। কিন্তু তিনি মামলা করতে না আসায় ১৫ জানুয়ারি বিকেলে পুলিশ তার ভাড়া বাড়িতে যায়। পুলিশ এ সময় শিশুটির সৎ মা পারভীন সুলতানাকে আটক ও মোবাইল ফোন জব্দ করে। পরে মোবাইল ফোনের গ্যালারিতে শিশু আয়েশার ওপর নির্যাতনের কিছু ছবি পায় পুলিশ।
এ ঘটনায় নিহত শিশুর পিতাকে না পেয়ে পুলিশ কর্মকর্তা এসআই জয়ন্ত সরকার হত্যা মামলা করেন। দীর্ঘ তদন্ত শেষে আটক আসামির দেয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে হত্যার সাথে জড়িত থাকায় পারভীন সুলতানাকে অভিযুক্ত করে আদালতে এ চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। চার্জশেট অভিযুক্ত পারভীনকে আটক দেখানো হয়েছে।