যশোরে বিরাজমান দাবদাহে নাকাল প্রাণিকূল, শিশু রোগী বাড়ছে

গা পোড়ানো রোদে ঘাম ঝরছে, পানি শূন্যতায় হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি

এখন সময়: শুক্রবার, ১০ মে , ২০২৪, ০৩:১০:১৯ এম

 

বিল্লাল হোসেন: আগুন ঝরানো রোদ। মাটি থেকেও গরমের ভাপ উঠছে। সূর্যরশ্মি যেন শরীর পুড়িয়ে দিচ্ছে। যশোরে তাপমাত্রা উঠে যাচ্ছে ৪৩ ডিগ্রির কাছাকাছি। গত ২০ এপ্রিল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২.৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। শনিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত ১৫ দিনের বেশি সময় ধরে এই জেলায় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে থাকছে। ফলে চলমান তীব্র দাবদাহে মানুষ নাকাল হয়ে পড়েছে।

চরম উষ্ণতার মধ্যেও বেশ কয়েকদিন শরীরের ঘাম ঝরছিল কম। কিন্তু গত দুইদিন ধরে বাতাসের আদ্রতা বেশি থাকায় ঘেমে নেয়ে শরীর একাকার হয়ে যাচ্ছে। এতে পানি শূন্যতায় ভুগছে মানুষ। গরমের তীব্রতার কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশুর রোগীর চাপ বেড়েছে। চরম গরম সহ্য করতে না পেরে শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত বাড়ছে।

বাংলাদেশ আবহাওয়া অফিসের ২৪ ঘন্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, শনিবার যশোরে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এদিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায় ৪২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এর আগে ২৬ এপ্রিল যশোরে  সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

আবহাওয়া অফিস বলছে, তাপমাত্রা কমে গেলেও জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে ভ্যাপসা গরম বাড়ছে। আদ্রতা বেড়ে যাওয়ায় শরীর অনেক বেশি ঘামছে। 

কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, রোদের তেজে বাইরে বের হওয়া মুশকিল।  কিন্তু জীবিকার তাগিদে বাধ্য হচ্ছি। শফিকুল ইসলাম নামে এক শ্রমিক বলেন, গত কয়েকদিন ধরে শরীর বেশি ঘামছে। এতে দুর্বল হয়ে পড়ছি।

নির্মাণ শ্রমিক মুকুল হোসেন বলেন, গরমে ঘরে-বাইরে কোথাও স্বস্তি নেই। রাতের বেলাও ভ্যাপসা গরম। এই গরম কোনোভাবে সহ্য করার মতো না।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. আব্দুস সামাদ জানান,  তিন সপ্তাহের বেশি সময় ধরে যশোরে দাবদাহ চলছে। শনিবার থেকে গরমের ধরণ পাল্টেছে। এতদিন গরমে মানুষের শরীর খুব কম ঘেমেছে। বাতাসে আদ্রতা বেড়ে যাওয়া মানুষের শরীর অনেক বেশি ঘামছে। তিনি জানান, বাতাসের আদ্রতা ৭২ থেকে ৮২ শতাংশ থাকলে মানুষ গরমে ঘেমে যায়।  এতে ক্লান্তি বেশি হয়।

ডা. আব্দুস সামাদ আরও জানান, গরমের কারণে হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশু রোগী বেড়েছে। বেশির ভাগ শিশু ঠান্ডা জ্বর ও কাশিতে আক্রান্ত। প্রতিদিন শত শত শিশুকে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। ডায়রিয়া ওয়ার্ডে রোগীর চাপ বেড়েছে। 

হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হারুন অর রশিদ জানান, গরমে প্রচুর পরিমাণ লবণ পানি শরীর থেকে বের হয়ে যায়। এতে পানি শূন্যতা দেখা দেয়। ফলে মোটেও অবহেলা করা যাবেনা।

তিনি বলেন, শরীরের কোষ সজীব রাখতে প্রচুর পরিমাণ পানি ও খাবার স্যালাইন খেতে হবে। বাতাসের আর্দ্রতা সম্পর্কে সচেতন থাকার পরামর্শ দিয়ে তিনি আরও বলেন, প্রচণ্ড গরমে শরীরের তাপমাত্রা ১০৪ ফারেনহাইট পেরিয়ে গেলে হিট স্ট্রোক হতে পারে।