মণিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সরকার নির্ধারিত টেস্ট ফি’র অতিরিক্ত আদায়ের অভিযোগ

এখন সময়: শনিবার, ৪ মে , ২০২৪, ০৯:৪৫:৩৩ এম

 

নূরুল হক, মণিরামপুর : মণিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এক্স-রে, আল্ট্রাসনোগ্রাম, ইসিজি রিপোর্টে অতিরিক্ত অর্থ আদায় ও কেবিন ভাড়া দিয়ে গত ২ বছরে নিয়ম বহির্ভূতভাবে রোগীদের কাছ থেকে ৩৮ লক্ষাধিক টাকা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর নিজেদের রক্ষা করতে নতুন করে ‘ব্যাকডেটে’ ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রার তৈরি করা হয়েছে। রেজিস্ট্রারে প্রকৃত তথ্য গোপন করে সরকারি রাজস্ব ফাঁকি দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

সরকারি এই হাসপাতালে এক্স-রে, ইসিজি, আল্ট্রাসনোগ্রাম ও কেবিন ভাড়ার ক্ষেত্রে সরকারি নির্ধারিত মূল্য নেয়ার কথা। কিন্তু অভিযোগ রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তন্ময় কুমার বিশ^াস ২ বছর আগে যোগদানের পর থেকে আদায় করা হচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সর্বশেষ সংশোধিত পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ডিজিটাল এক্স-রে করতে ছোট সাইজ (প্রতিফ্লিম) ১৫০ টাকা ও বড় সাইজ ২০০ টাকা।

সোমবার বেলা ১১টায় সরেজমিনে দেখা যায়, ছোট সাইজের এক্সরের জন্য নেয়া হচ্ছে ২০০ টাকা, আর বড় সাইজের জন্য ২৫০ টাকা। লাউড়ী গ্রাম থেকে আসা দিপংকর কুমার জানান, হাতের আঙ্গুলের একটা এক্সরে করতে তার কাছ থেকে নেয়া হয়েছে ২০০ টাকা। পাড়ালা গ্রাম থেকে আসা ব্যবসায়ী মাসুদ হোসেন জানান, তার বাম হাতের এক্সরে করতে নেয়া হয়েছে ২৫০ টাকা।

প্রতি রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ৫০ টাকা আদায় করা হয়। প্রতিদিন ছোটবড় মিলে ১৮ থেকে ২৫ টি এক্সরে করা হয়। প্রতিদিন অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয় সর্বনিম্ন দুই হাজার। সেই হিসেবে গত দুইবছরে আদায় করা হয়েছে ১২ লাখ টাকা।

 নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বিশ^স্ত একটি সূত্র জানিয়েছেন, প্রতিদিন ১৮ থেকে ২৫ টি এক্সরে করা হলেও রেজিস্ট্রারে অন্তর্ভুক্ত করা হয় ১০ থেকে ১২টি। আর এ জন্য সম্প্রতি তৈরি করা হয়েছে ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রার। নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টাকা আদায় সম্পর্কে এক্সরে বিভাগের দায়িত্বে থাকা ব্র্যাকের টেকনোলজিষ্ট নেহাল উদ্দিন এবং স্বাস্থ্য বিভাগের কার্ডিওগ্রাফার তুহিন আহমেদ জানান, এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ভাল বলতে পারবেন।

আল্ট্রাসনো কক্ষে গিয়ে দেখা যায়, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগকৃত স্বাস্থ্যকর্মী শাহানাজ খাতুন আল্ট্রাসনো করছেন। ইব্রাহিম হোসেন ও আশিকুর রহমান নামে দুই রোগী জানান, তাদের কাছ থেকে আল্ট্রাসনোর জন্য নেয়া হয়েছে ৩০০ টাকা করে। প্রতিদিন অন্তত ১৫ থেকে ২০ টি আল্ট্রাসনো করা হয়। প্রতিমাসে ২৫ কর্মদিবসে অতিরিক্ত আদায় করা হয় প্রায় তিন হাজার টাকা। সেই হিসেবে দুই বছরে আদায় করা হয়েছে ১৭ লাখ ১০ হাজার টাকা।

১১০ টাকার পরিবর্তে ৩০০ টাকা নেয়ার ব্যাপারে শাহানাজ খাতুন জানান, বেশি নেয়া হচ্ছে কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায়। তবে প্রতিদিন কতটা আল্ট্রাসনোগ্রাম করা হয় এ প্রশ্নের সঠিক জবাব দেননি তিনি।

ইসিজির ফিস নেয়ার কথা ৮০ টাকা থাকলেও  আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা। প্রতিদিন ২০ থেকে ২৫ টি ইসিজি করা হয়। প্রতি রোগীর কাছ থেকে অতিরিক্ত ২০ টাকা হারে আদায় করা হয়। গত দুইবছরে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে প্রায় সাড়ে চার লাখ টাকা।

চারটি কেবিন রয়েছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রতিটি কেবিন চার্জ দিনপ্রতি ১০০ টাকা হারে নেয়ার কথা থাকলেও আদায় করা হয় ২৭৫ টাকা। ১৭৫ টাকা অতিরিক্ত আদায় করা হয়। দুই বছরে নিয়মবহিভর্ৃূতভাবে আদায় করা হয়েছে প্রায় পাঁচ লক্ষাধিক টাকা।

ব্যাকডেটে ডুপ্লিকেট রেজিস্ট্রার করার অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. তন্ময় বিশ^াস জানান, অতিরিক্ত আদায়কৃত টাকা দিয়ে চুক্তিভিত্তিক কয়েকজন স্টাফের বেতনভাতা দেয়াসহ অভ্যন্তরীণ খরচ নির্বাহ করা হয়।