অতি তীব্র তাপপ্রবাহে যশোরে রেণু পোনা উৎপাদনে বিপর্যয়

এখন সময়: শনিবার, ৪ মে , ২০২৪, ০৩:০২:৩৬ এম

 

আবদুল কাদের: যশোরে চলমান অতি তীব্র তাপপ্রবাহে পানিতে অক্সিজেন সংকট সৃষ্টি হওয়ায় মাছের রেণু পোনা উৎপাদন বিঘ্নিত হচ্ছে। প্রচণ্ড গরমে রেণু পোনা মারাও যাচ্ছে। এতে প্রায় ২০ কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা করছেন হ্যাচারি মালিকেরা। লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকও উৎপাদন করতে পারবেন না বলে ধারণা করছেন। গত এক সপ্তাহ ধরে এই জেলায় ধরে তীব্র দাবদাহ চলছে। শনিবার যশোরে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

হ্যাচারি মালিকেরা জানান, মার্চ থেকে আগস্ট পর্যন্ত রেণু পোনা উৎপাদনের ভরা মৌসুম। দেশের মোট চাহিদার ৬০ শতাংশ রেণু পোনা যশোর থেকে সরবরাহ হয়। চাঁচড়া মৎস্যপল্লির ৪০টি হ্যাচারিতে গত বছর প্রায় দেড় কেজি রেণু পোনা উৎপাদন হয়।

যশোর জেলা মৎস্য হ্যাচারি মালিক সমিতির সভাপতি ও মা ফাতিমা ফিস হ্যাচারির স্বত্বাধিকারী ফিরোজ খান জানান, প্রচণ্ড খরার কারণে ক্রেতারা রেনু পোণা কিনছেন না। যে কারণে দরপতন ঘটেছে।  বর্তমানে ২ হাজার টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। অথচ গত মৌসুমে দাম ছিল ৪ হাজার টাকা কেজি।

তিনি জানান, যশোরে গত বছর আমরা দেড় লাখ কেজি রেণু পোনা উৎপাদন করেছিলাম। করোনায় অনেকে হ্যাচারি বন্ধ রেখেছিলেন। চলতি মৌসুমে পুরোদমে সবাই উৎপাদন শুরু করলেও প্রচণ্ড খরায় বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ বছর লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেকে নেমে আসবে উৎপাদন। এতে হ্যাচারি মালিকদের প্রায় ২০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হবে।

তিনি বলেন, আগে আমরা বিদ্যুৎ বিল দিতাম কৃষি রেটে। এখন সেখানে দিতে হচ্ছে শিল্প রেটে। আবার বিদ্যুতের পাওয়ার বাড়াতে নোটিশ দেয়া হয়েছে। পাওয়ার বাড়ালে প্রতিমাসে অতিরিক্ত খরচ বেড়ে যাবে। এতে উৎপাদন খরচ বেড়েছে দ্বিগুণ।

জেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে, রেণু পোনা উৎপাদনে যশোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জেলায় ৪০টি হ্যাচারিতে পোনা উৎপাদন হচ্ছে। এর মধ্যে কার্প জাতীয় রেণু পোনা উৎপাদন ৬৪ দশমিক ৮৬ টন। জেলায় রেণু পোনার চাহিদা ১৫ দশমিক ২৩ টন। উদ্বৃত্ত ৪৯ দশমিক ৬৩ টন দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়। তেলাপিয়া পোনা ১০১ দশমিক ৪০ মিলিয়ন উৎপাদন হচ্ছে। জেলায় চাহিদা রয়েছে ৯৮ দশমিক ৮৫ টন। তেলাপিয়ার উদ্বৃত্ত ৬ দশমিক ৫৫ টন। পাঙ্গাশ রেণু উৎপাদন ৩ দশমিক ৬২ টন এবং শিং, মাগুর, পাবদা, গুলসা রেণু উৎপাদন শূন্য দশমিক ৮৫ টন।

সূত্রমতে, যশোরে মোট ৫১টি বাঁওড় রয়েছে। যার আয়তন ১৮ হাজার ৮৪ হেক্টর। মূলত এসব বাঁওড় থেকে মাছ উৎপাদন হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত মাছ দেশের অর্ধেক চাহিদা মিটিয়ে থাকে।

রুপালী ফিশ হ্যাচারির মাসুদুল মণ্ডল জানান, গরমে অক্সিজেন ‘ফল’ করছে। আমাদের যতগুলো মোটর আছে সব চালিয়েও পানি ঠান্ডা করা সম্ভব হচ্ছে না । এত গরমে রেণু পোনা বাঁচানো সম্ভব না। যা বাঁচবে তাতে খরচ উঠবে না।  কয়েক দিনের গরমের কারণে আমাদের পরিশ্রমও বেড়েছে।

রেণু উৎপাদনকারী নয়ন হোসেন জানান, চলতি সপ্তাহে ১২ কেজি রেণুতে মাত্র ২০ লাখ পোনা হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবে উৎপাদন হয় ৩২ লাখ পোনা । যেভাবে গরম পড়ছে; এভাবে কয়েক দিন থাকলে রেণু পোনা প্রায় সব মারা যাবে।

জেলা হ্যাচারি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুর রহমান গোলদার জানান, সব সময় আমাদের প্রতিকূল অবস্থার মধ্যে রেণু পোনা উৎপাদন করতে হয়। প্রচণ্ড গরমে ব্যাহত হয় উৎপাদন। মাছ চাষি অহিদুল্লাহ লুলু বলেন, তীব্র খরায় রেণু পোনা উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

যশোর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সরকার মুহাম্মদ রফিকুল আলম বলেন, যশোরে গত কয়েকদিন ধরে প্রচণ্ড খরা বিরাজ করছে।এতে করে মৎস্য সেক্টরের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। হ্যাচারিগুলোতে রেনু পোণার উৎপাদন কমে যাচ্ছে। যার প্রভাব দেশের বাজারে পড়তে পারে।