৭৫৩ পদের ৫৩৫টি দীর্ঘ দিন শূন্য

জনবল ঘাটতিতে ধুকছে যশোর কাস্টমস

এখন সময়: বুধবার, ৮ মে , ২০২৪, ০৯:১৯:০৮ এম

আবদুল কাদের: জনবল ঘাটতির কারণে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হচ্ছে কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অফিস। দুই তৃতীয়াংশ পদ খালি থাকায় আওতাধীন সব এলাকা থেকে রাজস্ব আদায় করতে পারছে না দপ্তরটি। এখানকার ৭৫৩টি পদের মধ্যে ৫৩৫টি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। ফলে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার।

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অফিস সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে যশোর অফিসে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা। বিপরীতে আদায় হয় মাত্র ২১০ কোটি টাকা। ২০২২-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩ হাজার কোটি টাকা। আদায় করা হয় ২ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হয়েছে আড়াই হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে গত ফেরুয়ারি মাস পর্যন্ত আদায় হয়েছে ১১২৩ কোটি টাকা। 

সূত্র আরো জানায়, অতিরিক্ত কমিশনারের একটি ও যুগ্ম কমিশনারের দুটিসহ মোট ৫৩৫টি পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। এর মধ্যে সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার ২৮৭টি পদের মধ্যে শূন্য ১৯৫টি। উচ্চমান সহকারী ৪০টি, ক্যাশিয়ারের ১২টি, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৩৯টি ও সাব ইন্সপেক্টরের ২২টি পদের সবকটিই খালি। গাড়ি চালকের ৩২টি পদের মধ্যে ২৫টি, সিপাই এর ১৯৪ পদের মধ্যে ১৫৭টি ও চর্তুথ শ্রেণির ২৫টি পদের বিপরীতে ১৩টি পদ শূন্য। অর্থাৎ মোট পদের দুই তৃতীয়াংশই খালি। শূন্য পদ পূরণে ৩ বছর আগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। কিন্তু সেই নিয়োগ তৎপরতা আলোর মুখ দেখেনি। এতে লোকবল ঘাটতিতে রাজস্ব আদায়ে হিমশিম দশা চলছে।

সূত্রমতে, অফিসটির সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তারা মাঠ পর্যায়ে গিয়ে কাজ করেন। ওই পদেও জনবল ঘাটতি থাকায় আওতাধীন সব এলাকায় যেতে পারছেন না তারা। ফলে রাজস্ব আদায়ও সম্ভব হচ্ছে না। যশোর কমিশনারেট কার্যালয়ের অধীন রয়েছে ১০টি জেলা। যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গ, মেহেরপুর, কুষ্টিয়া, গোপালগঞ্জ, নড়াইল, ফরিদপুর ও রাজবাড়িতে অফিটির কার্যক্রম বিস্তৃত।

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কার্যালয়ের যশোর বিভাগীয় অফিসের উপ-কমিশনার মেহেবুব হক জানান, ২০২০-২৩ অর্থবছরে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২২ দশমিক ২০ কোটি টাকা। আদায় হয় ৩৫০ কোটি ৮০ লাখ টাকা। মূলত লোকবল ঘাটতিতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না।

যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, দেশের ব্যবসায়ে চরম মন্দাভাব বিরাজ করছে। মানুষের ক্ষয় ক্ষমতা কমে গেছে। ফলে সরকার রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারছেনা। কাস্টমসকেও সুসম্পর্ক বজায় রেখে রাজস্ব আদায় করতে হবে। লোকবল ঘাটতি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। সরকারের উচিত প্রয়োজন অনুযায়ী লোকবল পূরণ করা।

কাস্টমস এক্সাইজ ও ভ্যাট কমিশনারেট যশোর অফিসের অতিরিক্ত কমিশনার সেলিম শেখ জানান, এই অফিসে লোকবল ঘাটতি প্রকট আকার ধারণ করেছে। এতে লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রাজস্ব আদায় কমে গেছে।

তিনি জানান, সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার সংকট থাকায় মাঠ পর্যায়ের তদরকিতে সমস্যা হচ্ছে। ঠিকমত তদারকি না থাকায় ব্যবসায়ীরাও রাজস্ব দিতে চাচ্ছেন না। জনবল পূরণের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে।

৩ বছর আগে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়েও পদ পূরণ না করার কারণ সম্পর্কিত প্রশ্নে তিনি জানান, তৎকালীন  কমিশনার কী কারণে লোকবল পূরণ করেনি তিনি সেটি অবগত নন।