মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১২৪ পলাতককে গ্রেফতারে তাগাদা

এখন সময়: মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল , ২০২৪, ০১:২০:৫৭ পিএম

স্পন্দন ডেস্ক : দীর্ঘদিন পালিয়ে বেড়াচ্ছে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত ১২৪ আসামি। এদের মধ্যে কেউ কেউ পলাতক থেকেই আয়েশী জীবন পার করছেন, আবার কেউ কেউ পলাতক অবস্থায় মারাও গেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত হলেও শাস্তির মুখোমুখি হতে হয়নি তাদের। আর গ্রেফতারের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনও ইউনিটের ওপর দায়িত্ব না থাকায় তৎপরতাও কম ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। এ কারণে মানবতাবিরোধী এসব আসামিকে ধরতে স¤প্রতি বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশের সব ইউনিটের কাছে পলাতক ১২৪ জন আসামির তালিকা পাঠিয়ে তাদের দ্রæত গ্রেফতার করতে বলা হয়েছে।

জানা গেছে, স¤প্রতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার প্রতিনিধির সঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। মনিটরিং কমিটির ওই বৈঠকে আসামিরা যাতে বিদেশে পালিয়ে যেতে না পারে সেজন্য পূর্ণাঙ্গ ও হালনাগাদ তালিকাটি পুলিশের বিশেষ শাখায় পাঠানোরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এছাড়া বৈঠকে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামিদের গ্রেফতারের জন্য যে কোনও ইউনিট অভিযান চালাতে পারবে বলেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতরের ডিআইজি (অপারেশন্স) হায়দার আলী খান বলেন, ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেফতার করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়মিত কাজের অংশ। তবে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেফতারে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যেকোনও ইউনিটই তাদের গ্রেফতার করতে পারবে। এজন্য সব ইউনিটের কাছেই এই তালিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দফতর ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত পলাতক আসামিদের মধ্যে ৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলমান রয়েছে। ৮১ জনের বিরুদ্ধে বিচার চলমান রয়েছে। আর ৩৭ জনের বিরুদ্ধে মৃত্যুদণ্ডসহ বিভিন্ন মেয়াদে সাজা হয়েছে। তবে এই তালিকায় থাকা বেশ কয়েকজনকে সম্প্রতি এলিট ফোর্স র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ান (র‌্যাব) গ্রেফতার করেছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার কো-অর্ডিনেটর এম সানাউল হক অবশ্য বলছেন, অনেকের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হলেও তারা গ্রেফতার হচ্ছেন না। অনেকের বিরুদ্ধে বিচার শেষ হয়ে রায়ও হয়ে গেছে। তবু তারা পালিয়ে বেড়াচ্ছেন বা পলাতক থেকে আয়েশী জীবনযাপন করছেন। এজন্য বিষয়টি নিয়ে আলোচনার পর পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে তালিকা পাঠানো হয়েছে। পলাতক আসামিদের দ্রুত গ্রেফতারের জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অবসরপ্রাপ্ত আইজিপি এম সানাউল হক বলেন, ‘পুলিশ তো নানা কাজে ব্যস্ত থাকে। এজন্য হয়তো মানবতাবিরোধী অপরাধীদের গ্রেফতারে একটি ঢিলেমি হয়েছে। এখন তারা তৎপরতা শুরু করেছে। পলাতক আসামিদের দ্রæত গ্রেফতার করে দ্রুত শাস্তির আওতায় আনা উচিত।’

পলাতক ১২৪ আসামির তালিকা

তদন্তাধীন মামলার পলাতক আসামিরা হলেন—সাতক্ষীরা সদরের কোরবান আলী গাজী, শ্যামনগরের আব্দুল জলিল গাজী, আবুল হোসেন গাজী, সুরত আলী গাজী, আব্দুল আজিজ ওরফে আজিজ কমান্ডার এবং নওয়াব আলী গাজী ওরফে নবা।

আর বিচারাধীন মামলার পলাতক আসামিরা হলেন কক্সবাজার মহেশখালীর মৌলভী জশরিয়া সিকদার, জালাল উদ্দিন প্রকাশ ওরফে জালাল আহমদ, মমতাজ আহম্মদ, হাবিবুর রহমান ওরফে হাবিব মুন্সি, আব্দুর শুকুর, মৌলভী জালাল, আব্দুল আজিজ, মৌলভী রমিজ হাসান, জামালপুরের বেলায়েত ওরফে বিল্লাল হোসেন ওরফে বিল্লাল উদ্দিন ও নাসির উদ্দিন ওরফে আবুল বাশার মুহাম্মদ নাসির উদ্দিন ওরফে কালু, বাগেরহাটের খাঁন আশরাফ আলী, রুস্তম আলী মোল্লা, শেখ ইদ্রিস আলী, শেখ রফিকুল ইসলাম ওরফে বাবুল, মনিরুজ্জামান হাওলাদার ও আজাহার আলী শিকদার, ময়মনসিংহের ফজলুল হক ওরফে ফজলু কাজী, শেরপুর নকলার মোখলেছুর রহমান ওরফে তারা, নড়াইলের সুলায়মান ফারুকী ওরফে সোলায়মান মোল্যা, যশোরের খন্দকার শওকত আলী বাবুল, রুহুল কুদ্দুস খাঁন ওরফে কুদ্দুছ খান ওরফে গোলাম কুদ্দুছ, নড়াইলের এম এ আউয়াল ওরফে আব্দুল আউয়াল মণ্ডল, আব্দুস সাত্তার শিকদার ওরফে সাত্তার ও আব্দুল মজিদ মোল্যা, খুলনার ওমর আলী ফকির, যশোরের আব্দুল ওহাব, মাহতাব, ফছিয়ার রহমান এবং পিরোজপুরের ভান্ডারিয়ার বাসিন্দা নুরুল আমিন হাওলাদার।

এছাড়াও এ তালিকায় রয়েছেন, ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার বাসিন্দা মহরম আলী ফকির ও আব্দুর রশিদ, গাইবান্ধা গোবিন্দগঞ্জের মোহাম্মদ শরীফ উদ্দীন ওরফে সরফ উদ্দিন খান ওরফে সাইফ, ময়মনসিংহ ফুলপুরের জাফর আলী, আনোয়ার হোসেন ওরফে বিহারী আনোয়ার, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে আবু বাক্কার, এবিএম জিয়াউল হক ওরফে বদরু, ঝিনাইদহের আছমত আলী, গোপালগঞ্জের কাশিয়ানির ইনায়েত হোসেন মিয়া ওরফে ইনায়েত মোল্যা ওরফে এনায়েত, নিজামুল হক মিয়া ওরফে নিজামুল হক ওরফে লুৎফর রহমান ওরফে লুথু মোল্যা, নওশের আলী মোল্যা, মোরশেদ ওরফে মোশারফ হোসেন মিয়া, নোয়াখালীর সুধারামের আবুল খায়ের, কোম্পানীগঞ্জের আব্দুল খালেক ও শেখ ফরিদ, সাতক্ষীরা কালিগঞ্জের মানছুরার রহমান ওরফে মুনছুর পাড় ও শেখ আবু বক্কও, লালমনিরহাট হাতীবান্ধার এনামুল হক ওরফে মৌলভী বাহেজ উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, নুরুল হক ও আজাহার আলী, ময়মনসিংহের ফুলপুরের সুরুজ্জামান আকন্দ, আব্দুর রশিদ ওরফে বদ্দি ও নুরুল ইসলাম ওরফে নুরু, যশোর বাঘারপাড়ার শামসুর রহমান ওরফে শামসু, আকবর আলী মোল্যা ওরফে এয়াকুব্বর, ফজলুর রহমান বিশ্বাস, ইবাদত মোল্যা, ইয়াকুব আলী ওরফে এয়াকুব্বর, বরগুনার পাথরঘাটার ফজলুল হক খান ওরফে ফজলুর রহমান ওরফে ফজলু খলিফা, ইউসুফ আলী ওরফে ইউসুফ মুন্সী, রাজ্জাক ওরফে আব্দুর রাজ্জাক, তালতলীর হযরত আলী, যশোরের আবুল হোসেন মোল্যা, একেএম সিরাজুল ইসলাম, শামছুল হুদা ওরফে লুলু, ময়মনসিংহের শেখ আবুল হাসেম, হাসিম উদ্দিন ওরফে আবুল হাসেম, কুতুব উদ্দিন ওরফে কুতুব উদ্দিন আনছারী ও ছলিমুদ্দিন, বরগুণা পাথরঘাটার আব্দুল মান্নান হাওলাদার এবং সুলতান আহমদ।

দণ্ডপ্রাপ্ত পলাতক আসামিরা হলেন— পিরোজপুর মঠবাড়িয়ার ইঞ্জিনিয়ার আব্দুল জব্বার (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), কিশোরগঞ্জের নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ওরফে নাছির ওরফে ক্যাপ্টেন এটিএম নাছির (মত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), আযহারুল ইসলাম (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), জামালপুরের আশরাফ হোসেন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), অধ্যাপক শরীফ আহম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), জামালপুরের আব্দুল বারী (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), হারুন (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), আবুল হাশেম (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), যশোর কেশবপুরের ইব্রাহীম হোসেন ওরফে ঘুঙ্গুর ইব্রাহীম (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), আব্দুল আজিজ সরদার (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), আব্দুল খালেক মোড়ল (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), শরীয়তপুরের ইদ্রিস আলী সরদার (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাসিন্দা তবে ঢাকার খিলক্ষেতে বসবাসরত সৈয়দ মো. হুসাইন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), গাইবান্ধার আবু ছালেহ মুহা. আব্দুল আজিজ মিয়া ওরফে ঘোড়া মারা আজিজ (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), রুহুল আমিন ওরফে মঞ্জু (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), দিনাজপুরের আব্দুর রহিম মিয়া (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), মৌলভীবাজারের রাজাকার কমান্ডার নেছার আলী (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), মোবারক মিয়া (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), সাভারের আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুর (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), মৌলভীবাজারের আব্দুন নুর তালুকদার ওরফে লাল মিয়া (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), হবিগঞ্জের লিয়াকত আলী (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), নেত্রকোনার কবির খান (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), নেত্রকোনার হেদায়েত উল্লাহ ওরফে মো. হেদায়েতুল্লাহ ওরফে আঞ্জু বিএসসি (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), গাইবান্ধার মোন্তাজ আলী ব্যাপারী ওরফে মমতাজ (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), ময়মনসিংহের আব্দুর রাজ্জাক মণ্ডল (আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত), গাজীপুরের আলীম উদ্দিন খান (২০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত) বগুড়ার আব্দুল মমিন তালুকদার ওরফে খোকা (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), সাতক্ষীরার খান রোকনুজ্জামান (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), মৌলভীবাজারের রাজাকার আব্দুল মতিন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), খুলনার নজরুল ইসলাম (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), ময়মনসিংহের সাইদুর রহমান রতন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত), শামছুল হক (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) নুরুল হক ফকির (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত)।

পলাতক আসামিদের মধ্যে যারা বিদেশে রয়েছেন—ফরিদপুরের আবুল কালাম আজাদ ওরফে বাচ্চু রাজাকার (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) বর্তমানে পাকিস্তানে, গোপালগঞ্জের আশ্রাফুজ্জামান খান (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) বর্তমানে আমেরিকায়, ফেনীর চৌধুরী মঈন উদ্দিন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) বর্তমানে যুক্তরাজ্যে এবং ফরিদপুরের জাহিদ হোসেন খোকন ওরফে এমএ জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন (মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত) বর্তমানে সুইডেনে অবস্থান করছে বলে জানা গেছে।