Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

❒শোকের ছায়া

ফেরানো গেলনা যশোরের সাংস্কৃতিক সংগ্রামের অগ্রনায়ক সুকুমার দাসকে

এখন সময়: শুক্রবার, ৯ মে , ২০২৫, ০৩:০৮:৫০ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক : ফেরানো গেলনা যশোরের সাংস্কৃতিক সংগ্রামের অগ্রনায়ক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্ব অতিপরিচিত মুখ যশোর জেলা সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি পুনশ্চ যশোরের প্রতিষ্ঠাতা সুকুমার দাসকে। বুধবার রাত ৯টা ১৫ মিনিটের দিকে মাত্র ৬৬ বছর বয়সেই না ফেরার দেশে চলে গেলেন। এদিন রাত নয়টার দিকে বাড়িতে অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে আনা হয়। হাসপাতালের আইসিইউতে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এরআগে গত ৫ এপ্রিল অসুস্থ হয়ে তিনি যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হন। এখানে চিকিৎসকরা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হন তার হার্টে ব্লক ধরা পড়েছে। চিকিৎসকরা তাকে খুলনায় রেফার করেন। খুলনা সিটি হাসপাতালে তার হার্টে একটা রিং পরানো হয়।
৯ এপ্রিল যশোরে ফিরে আসেন তিনি।
যশোরে এসেই ওইদিনই তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে সন্ধ্যায় আবার যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসা দেয়া হয়। এরপর সুস্থ হওয়ায় ১১ এপ্রিল দুপুরে তাকে বাড়িতে নেয়া হয়।
সুকুমার দাসের শ্যালক পুনশ্চ যশোরের সাধারণ সম্পাদক পান্না লাল দে জানান, চিকিৎসার পর দাদা ভালোই ছিলেন। কিন্তু রাত নয়টার দিকে তিনি খাটের উপর থেকে মেঝেতে পড়ে যান। দ্রুত তাকে হাসপাতালে আনার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে যশোরের অতিপরিচিত মুখ সুকুমার দাসের মৃত্যুর খবর শুনে সর্বস্তরের মানুষ হাসপাতালে ছুটে আসেন।
মৃত্যুর দিন তিনি সকাল থেকেই ফেসবুকে সরব ছিলেন। মেসেঞ্জারে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অনেককেই। অনেকে তার সাথে চ্যাট করেছেন। আর রাতেই শোনা গেল মৃত্যুর খবর।
সুকুমার দাসের মৃত্যুর পর তার সাথে মেসেঞ্জারে চ্যাট করার কথা তুলে ধরে দৈনিক স্পন্দনের বার্তা সম্পাদক মিজানুর রহমান মুন ফেসবুকে লিখেছেন,
“১২ এপ্রিল বুধবার সকাল ৮টা ৫৪ মিনিট। হঠাৎ ফেসবুক মেসেঞ্জারে পুনশ্চ যশোরের আমন্ত্রণপত্র। দেখে বিকেল ৫টা ৩৩ মিনিটে নিচে লিখলাম 'ধন্যবাদ দাদা'। ৬টা ২১ মিনিটে সুকুমার দাস দাদা লিখলেন ' সবাইকে নিয়ে অনুষ্ঠান দেখতে এলে খুব খুশি হবো'। কিন্তু রাত ১০টার দিকে শুনি দাদা মারা গেছেন। আসলে কোনোভাবেই বিশ্বাস করতে পারছিলাম না দাদা এ পৃথিবীতে আর নেই। তিনি আমার সাথে কয়েক ঘণ্টা আগে চ্যাট করলেন আর হঠাৎ শুনি মৃত্যুর খবর। কিভাবে মেনে নেয়া যায় এই কঠিন মৃত্যু? পৃথিবীর বাস্তব সত্য এটাই। দাদা ভাল থাকবেন অনন্তপুরে”।
সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সহসভাপতি ফারাজী আহমেদ সাঈদ ও প্রেসক্লাব যশোর সাধারণ সম্পাদক এসএম তৌহিদুর রহমান জানান, সর্ব সাধারণের শেষ শ্রদ্ধা জানানোর জন্যে  সুকুমার দাসের মরদেহ আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১০ টায় টাউন হল ময়দানের রওশন আলী মঞ্চে রাখা হবে। শেষে নীলগঞ্জ মহাস্মশানে তার শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।  
উল্লেখ্য, ১৯৫৭ সালের ২৭ শে নভেম্বর (১৩৬৪ সনের ১৩ অগ্রহায়ন) শ্রমিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবা বিনয় কৃষ্ণ দাস এবং মা রেনু বালা দাস।  সুকুমার দাস চুড়িপট্টি স্কুল থেকে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেন । ১৯৭৩ সালে সম্মিলনী ইনস্টিটিউশন থেকে মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯৭৫ এ উচ্চ মাধ্যমিক এবং ১৯৭৯ তে সরকারি মাইকেল মধুসূদন মহাবিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে   অনার্স আর ১৯৮০ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএ পাশ করেন।
১৯৭২ সালে ছাত্র রাজনীতিতে ( বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন ) যুক্ত হন। আর ১৯৯১ সালে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি(সিপিবি) থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেন। ১৯৮৪ সালে তিনি বাঘারপাড়া ডিগ্রি কলেজে অর্থনীতির শিক্ষক হিসেবে যোগ দান করেন। ৭ সেপ্টম্বর ২০১৭ সালে ৩৩ বছরের চাকরী শেষে অবসর নিয়েছেন তিনি। এর আগে তিনি দৈনিক স্ফুলিঙ্গে, ব্র্যাক, নিজেরা করি, ডিডিপিতেও কিছুৃদিন কাজ করেছেন। একমাত্র মেয়ে সিঁথি প্রষা দাস আর স্ত্রী শুক্লা দাসকে নিয়ে বর্তমানে তিনি বেজপাড়া টিবি ক্লিনিক রোডস্থ নিজ বাসভবনে বসবাস করছেন।
১৯৭৩ সালে যশোর উদীচীর সাথে যুক্ত হন এবং ২০১১ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত একাধিকবার এ সংগঠনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালের শেষ দিকে তিনি গড়ে তোলেন আরেক সাংস্কৃতিক সংগঠন পুনশ্চ। সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশ গ্রহণ করেন। যশোরে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলনী পরিষদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, পদ্ধতিগত সঙ্গীত শিক্ষার বেসরকারি সঙ্গীত শিক্ষা বোর্ড ধ্রুব পরিষদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট যশোরে দীর্ঘ ২৮ বছর তিনি মূল দায়িত্বে ছিলেন। বর্তমানে কেন্দ্রীয় জোটের সদস্যসহ যশোরেরর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন এবং  জোটের খুলনা বিভাগের দায়িত্বরত আছেন এবং ধ্রুব পরিষদের দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের সম্পাদক। এছাড়া বর্তমানে টিআইবি যশোর সনাকের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন একইসাথে যশোর শিল্পকলা একাডেমির সহসভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন তিনি।
তার সুরকরা গান ‘আয় আয় দিন বদলের প্রত্যয়’ গানটি যশোর জেলা প্রশাসনের ওয়েলকাম টিউন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। তারই সুর করা আরেকটি গান ‘আরশীর সামনে একা একা দাঁড়িয়ে’ আজ উদীচীর সংগঠন সঙ্গীত হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। তার সুর করা মাইকেল মধূসূদন দত্তের রচিত ব্রজাঙ্গনা কাব্য সনেট ও নাটকের অসংখ্য গান বাংলাদেশ বেতারসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানে একাধিকবার পরিবেশিত হয়েছে ও হচ্ছে । তিনি অসংখ্য দেশের গান, গণসঙ্গীত, ছড়া গান ও আধুনিক গানের সুর করেছেন। গণসঙ্গীতের প্রশিক্ষক হিসেবে তিনি ঢাকা, খুলনা, রাজশাহীসহ সারাদেশে কাজ করে চলেছেন।
তার নেতৃত্বে বাংলা ১৪০০ সনে যশোরে জাতীয় পর্যায়ে সপ্তাহব্যাপী লোকসঙ্গীত উৎসব, ১৯৯৯ সালে উদীচীর জাতীয় সম্মেলন, ২০১০ সালে জাতীয় রবীন্দ্র সঙ্গীত সম্মিলনী পরিষদের জাতীয় সম্মেলন, ১৯৯১ সালে ৮ দিনব্যাপী বিজয়ের বিশ বছর পালন হয়েছে। ১৯৮৮ সালে ৭ দিনব্যাপী পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা, শান্তি নিকেতনসহ নানা অঞ্চলে গণসঙ্গীতের দল নিয়ে যান। যশোরের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গণের নানা উন্নয়নের সাথে তিনি সরাসরি সম্পৃক্ত।

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)