ঘুনি গ্রামে চলছে শোকের মাতম

সৌদি আরবে বাস দুর্ঘটনা : যশোরের নাজমুলসহ নিহত ১৮ বাংলাদেশি

এখন সময়: শনিবার, ২০ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:২৩:৪৮ পিএম

নিজস্ব প্রতিবেদক: সৌদি আরবের মক্কায় ওমরাহ করতে যাওয়ার পথে বাস দুর্ঘটনায় নিহত বাংলাদে মধ্যে নজরুল ইসলাম ওরফে নাজমুল (২৮) নামে একজনের বাড়ি যশোরে। তার মৃত্যুর খবরে গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার  বসুন্দিয়া ইউনিয়নের ঘুনিতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। স্বজনদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারি হয়ে উঠেছে।  নাজমুল ওই গ্রামের কাওসার মিয়ার ছেলে। ১ বছর ২৬ দিন আগে তিনি সৌদি আরব গিয়ে আভা খামিজ এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে শ্রমিকের কাজ করতেন। স্বজনরা বলছেন, নাজমুলকে ঘিরে পরিবারের সকল স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে গেলো। এই দুর্ঘটনায় নাজমুল ছাড়াও তার দুঃসম্পর্কের ভাগ্নে রুহুল আমিন ওরফে রনি (৩২) আরেক যুবক মারা গেছেন। তিনি মাদারীপুরের দিয়াপাড়ার ইছাহক মাতব্বরের ছেলে। আর মৃত্যু শয্যায় রয়েছেন ঘুনি গ্রামের মাঠপাড়ার আব্দুল গফফার মোল্যার ছেলে রাসেল ওরফে সুমন (২৮) ও শাখারিপাড়া এলাকার কাজী আনোয়ার হেসেনের ছেলে মোশাররফ হোসেন (৩২)। 

জানা গেছে,  ২৭ মার্চ (সোমবার) রোজার বিশেষ ছুটিতে নাজমুলসহ  দূরসম্পর্কের ভাগ্নে রনি, মোশাররফ, সুমনসহ ৪৭ জন একটি বাসে পবিত্র ওমরাহ করার জন্য মক্কা শরীফের উদ্দেশ্যে যাচ্ছিলেন। পথিমধ্যে সন্ধ্যায় সৌদি আরবের আসির প্রদেশে বাসটি খাদে পড়ে আগুন ধরে ২৪ জন মারা যান। মৃতের তালিকায় নাজমুল তার ভাগ্নে রনিসহ ১৮ বাংলাদেশি রয়েছে। এছাড়া যশোরের মোশারফ ও সুমনসহ ১৬ বাংলাদেশী মক্কার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। স্বজনরা বলেছেন, তারা জানতে পেরেছেন মোশারফের এখনো জ্ঞান ফেরেনি। তিনি মৃত্যুর শয্যায় রয়েছেন। আর সুমনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। কাঁদতে কাঁদতে বলেন আল্লাহ যেনো তাদের প্রাণ ভিক্ষা দেন।

নিহত নজরুল ইসলাম ওরফে নাজমুলের বড় ভাই কামরুল হোসেন জানিয়েছেন,  নাজমুল বুকভরা স্বপ্ন নিয়ে এক বছর ২৬ দিন আগে নাজমুল সৌদি আরবে যান। পরিবারের অভাব ঘুচিয়ে মুখে হাসি ফোটানোর আশা ছিলো। কিন্তু বাস দুর্ঘটনায় স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।

এক প্রশ্নে  কামরুল জানান, কিছু দিন আগে মুঠোফোনে নাজমুল বলেছিলেন,দেশে ফেরার আগে অন্তত একবার হলেও ওমরাহ কববেন। ভাগ্যের কি নির্মম পরিহাস ওমরাহ করার আগেই তাকে চলে যেতে হলো না ফেরার দেশে। আল্লাহ যেনো তাকে কবুল করে নেন। মরদেহ দেশে ফেরত আনার বিষয়ে নিহত নাজমুলের বড়ভাই কামরুল হোসেন ও মাদারীপুরের রুহুল আমিন ওরফে রনির বড় ভাই রফিকুল ইসলাম জানান, সৌদিতে আরও আত্মীয়-স্বজন এবং প্রতিবেশীরা রয়েছেন। মরদেহ দেশে আনার পক্রিয়ার বিষয়ে তাদের সাথে যোগাযোগ করা হচ্ছে। তারাই মরদেহ পাঠানোর ব্যবস্থা করবেন। 

সুমনের মা হাসিনা বেগম জানান, দুর্ঘটনায় সুমনের সারা শরীর কেটে ও পুড়ে গেছে। তবে তার জ্ঞান আছে। স্বাভাবিকভাবে কথা বলছে। বুধবার ভোরেও ফোনে তিনি ছেলের সাথে কথা বলেছেন।  তবে, মোশাররফের অবস্থা আশংকাজনক। অচেতন অবস্থায় আইসিইউতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তার পরিবার উদ্বেগ উৎকন্ঠার মধ্যে রয়েছে।  স্বজনরা দোয়া করছেন আল্লাহ যেনো তাদের প্রাণ ভিক্ষা দেন।

যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান গভীর শোক প্রকাশ করে জানান, নিহতদের স্বজনদের কোন প্রকার সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তা করা হবে। এদিকে, নাজুমলের মৃত্যুতে ঘুনি গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আত্মীয়-স্বজন ও প্রতিবেশীরা তার বাড়ি ভিড় করছেন। পরিবারের পরিবারের বুকফাটা আর্তনাদে অনেকেই চোখের পানি ধরে রাখতে পারছেন না। তারা নাজমুলের মরদেহ আসার অপেক্ষার প্রহর গুনছেন।