Ad for sale 100 x 870 Position (1)
Position (1)

‘ভিক্ষা না করলে সেদিন না খেয়ে থাকতে হয়’

এখন সময়: মঙ্গলবার, ১৩ মে , ২০২৫, ১০:০১:০৩ এম

 

খান কেএম শরাফত উদ্দীন, বাঘারপাড়া : নেই ঘরের দরজা, নেই জানালা। পাটকাঠির পাতলা বেড়া ও মাথার উপরে পলিথিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ঝুপড়ির মধ্যেই তার বসবাস। চিকিৎসার অভাবে শরীরে বাসা বেঁধেছে অসংখ্য জটিল রোগ। একদিন যদি ভিক্ষা না করেন তাহলে সেই দিন না খেয়ে পার করতে হয়। এরপরও ভাগ্যে জোটেনি কোনো সরকারি সহায়তা। জনপ্রতিনিধিদের বহুবার বলেছেন, কিন্তু কাজ হয়নি। এমনই এক সংগ্রামী জীবন যোদ্ধা হাজেরা বেগম (৫২)।

বলছিলাম যশোরের বাঘারপাড়ার নারিকেলবাড়িয়া ইউনিয়নের ধূপখালী গ্রামের মুজিবর মোল্লার মেয়ে হাজেরা বেগমের কথা। প্রচণ্ড শীত, বর্ষা ঝড়ের সময়েও কোথাও যাওয়ার জায়গা নেই। এমনকি রান্নাসহ গৃহপালিত প্রাণির ঠিকানাও ওই ঝুপড়িতে। সম্পদ বলতে বাবার দেয়া এক শতাংশ জমির উপর মাথা গোঁজার ঠাঁই করেছেন কোনো রকমে। ওই ঘরে তিনি প্রায় ১০ বছর ধরে বসবাস করছেন।

গত ১৩ মার্চ এই প্রতিবেদকের সাথে কথা হয় বৃদ্ধা হাজেরার। টাকার অভাবে ১০ বছরের ছেলে ইব্রাহিমের জন্ম নিবন্ধন করতে পারেননি। ছেলেকে কোনো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়েও ভর্তি করাতে পারছেন না।

চার ভাইবোনের মধ্যে সবার বড় ছিলেন হাজেরা। গরীব কৃষক বাবার সন্তান হওয়ায় অল্প বয়সে উপজেলার পাইকপাড়া গ্রামের আকবর মোল্লার সাথে বিয়ে হয়। সেখানে দুই কন্যা সন্তানের মা হন তিনি।

স্বামীর সহায় সম্পত্তি না থাকায় অন্যের জমিতে নিয়মিত কৃষিকাজ করতেন। দু’জনের চেষ্টায় সংসারটা ভালো চলছিলো। স্বামী সন্তান নিয়ে সুখে থাকতে পরিশ্রম করেছেন। কিন্তু কোথাও মেলেনি সুখের ঠিকানা। এক সময় স্বামী দুরারোগ্য ক্যান্সারে আক্রান্ত হলে ভিটে মাটি বিক্রি করে চিকিৎসা শুরু করেন। কিন্তু বাঁচাতে পারেননি স্বামীকে। এরপর দুই সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন (ধূপখালী) বাবার বাড়িতে। মেয়েদের বিয়ে দেন হাজেরা।

সংসার চালাতে রাস্তায় মাটি কাটার কাজ নেন তিনি। সেই সময় পরিচয় হয় উপজেলার আগড়া গ্রামের ওহাব মোল্লার সাথে। ওহাব নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে বিয়ে করে হাজেরাকে। পরবর্তীতে স্বামীর আগের স্ত্রী সন্তান আছে জেনেও সুখের আশায় সেখানে (ওহাবের বাড়ি) থাকতে শুরু করেন। সেখানে জন্ম নেয় ছেলে ইব্রাহিম। আবার শুরু করেন মাঠ ও রাস্তার কাজ।

কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে সেখানে শারীরিক নির্যাতন শুরু হলে সন্তানকে নিয়ে চলে আসেন বাবার বাড়িতে। এরপর ছেলেকে এক মাদরাসায় ভর্তি করান এবং নিজে অন্যের জমিতে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। এভাবেই চলে গেছে প্রায় দশটি বছর। এরমধ্যে শরীরে উচ্চ রক্তচাপ, কিডনি, হার্টের সমস্যাসহ বিভিন্ন জটিল রোগ ধরা পড়ে। স্ট্রোক করে হাত-পায়ের শক্তি কমে যায়। কঠিন পরিশ্রম আর করতে পারেন না হাজেরা। বেঁচে থাকার জন্য শুরু করেন ভিক্ষাবৃত্তি। কিন্তু শরীর যেদিন না চলে সেদিন না খেয়েই থাকতে হয় মা-ছেলেকে। এরপরও অসুস্থ স্ত্রী ও সন্তান ইব্রাহিমের কোনো খোঁজ নেয় না স্বামী ওহাব। যোগাযোগও করেনি কোনোদিন।

‘এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান বাবলু কুমার সাহা বলেন,‘ হাজেরার বিষয়ে আমার জানা নেই। পরিষদে আমার কাছেও কোনদিন আসেনি। তবে আমার কাছে আসলে আমি সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সৈয়দ জাকির হাসান বলেন,‘ আমাকে কেউ বলেননি বা তিনি আসেননি। তবে আপনার কাছ থেকে জানলাম। এ ব্যাপারে আমি সব ধরনের সহযোগিতা করার চেষ্টা করবো।  

 

Ad for sale 100 x 870 Position (2)
Position (2)
Ad for sale 225 x 270 Position (3)
Position (3)
Ad for sale 225 x 270 Position (4)
Position (4)