স্পন্দন ডেস্ক : ধ্রুপদি অর্থে সংবাদপত্র বা সংবাদমাধ্যমকে সময়ের বাহন হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের লেখক মার্ক টোয়েন একে তুলনা করেছিলেন প্রতিদিনের সূর্যের সঙ্গে। তবে এটা যে নিছক সময়ের প্রতিফলন ঘটায় না, বরং পরিবর্তনের পথরেখা তৈরি করে, বাংলাদেশ তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। ষাটের দশকের স্বাধিকার আন্দোলনকে স্বাধীনতা সংগ্রামে রূপান্তরে এদেশের সংবাদপত্র হয়ে উঠেছিল রাজপথের সহযোগী। ওই সময় পত্রিকাটির জন্ম না হলেও সেই ধারবাহিকতায় মহান বিজয়ের মাসে দৈনিক স্পন্দন জন্ম নেয় শত্রুমুক্ত যশোরে অস্থায়ী সরকারের প্রথম জনসভার দিনে ২০০৬ সালের ১১ ডিসেম্বরে। পত্রিকাটির বয়স এখন ১৭ বছর।
আফিল গ্রুপের একটি প্রতিষ্ঠান দৈনিক স্পন্দন। গ্রুপটি শুধু ব্যবসায়ীক মনমানসিকতায় নয়, সৃজনশীল কাজেও এগিয়ে যেতে চাই। এই মন্ত্রে সমাজকে এগিয়ে নিতে গ্রুপের কর্ণধার বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ শেখ আফিল উদ্দিন সংবাদপত্র প্রকাশের দিকে মনোনিবেশ করেন। তার ভাবনা থেকে গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান দৈনিক স্পন্দনের জন্ম হয়। শুরুতে একঝাঁক দক্ষ কর্মী বাহিনী নিয়ে যাত্রা শুরু হয় পত্রিকাটির। সেই থেকে যুগের সাথে তাল মিলিয়ে আজ অবধি পথ চলছে। তবে সময়ের প্রয়োজনে মাঝে মধ্যে কিছুটা পরিবর্তন ও পরিবর্ধন করতে হচ্ছে। সেই ১৭ বছর আগে জন্ম নেয়া কুড়ি এখন পরিণত হয়েছে।
‘সত্যের সন্ধানে অবিচল’ স্লোগান বুকে ধারণ করে এগিয়ে যাচ্ছে এ অঞ্চলের সংবাদপত্র জগতের নির্ভরতা ও বস্তÍুনিষ্ঠতার প্রতীক দৈনিক স্পন্দন। গণমানুষের আশা আকাক্সক্ষা, প্রত্যাশা, উন্নয়নসহ সামগ্রীক জীবনের তথ্যের সঠিক প্রকাশনার মধ্য দিয়ে পত্রিকাটি দেশ তথা জাতির জন্য নিষ্ঠার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। নৈতিকতা ও পেশাদারিত্বই সাংবাদিকতার মূল শক্তি। এটি বুকে ধারণ করে কষ্টসাধ্য হলেও জেলা শহর থেকে প্রকাশিত পত্রিকাটি অনেকটা নিয়মনীতি, নীতি নৈতিকতা মেনে এক ঝাঁক উদ্যেমি সংবাদকর্মী নিয়ে মানুষের অধিকার আদায়ে নিপীড়িত নির্যাতিতদের পক্ষে নিষ্ঠা ও সততার সাথে এগিয়ে যাচ্ছে। সৎ ও সাহসী সাংবাদিকতার আদর্শ সমুন্নত রাখতে পত্রিকাটি বরাবরই উদগ্রীব। সাবলীল ভাষা ব্যবহার ও দুর্বোধ্য ভাষা পরিহার করে পত্রিকার প্রকাশনা অব্যাহত রাখার চ্যালেঞ্জও করে যাচ্ছে। আমরা চাই পত্রিকার মানের দিক ঠিক রাখতে।
করোনাভাইরাসের মহামারির মধ্যেও যখন সবখানে বিপর্যস্ত অবস্থা ছিল তখনও আমরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে এগিয়ে যাই। মহামারিকালে পত্রিকার বিজ্ঞাপন কমেছিল, পত্রিকার কাটতিও। এখন করোনা ভাইরাস নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু সংবাদপত্র প্রকাশের ক্ষেত্রে যেসব জিনিসপত্র দরকার তার দাম বেড়েছে বহুগুন। ফলে পত্রিকার মুদ্রণ খরচ বেড়েছে। বর্তমান প্রেক্ষাপটে আয়-ব্যয়ের বিস্তর ফারাকের মধ্যে পথ চলতে হচ্ছে। তবুও স্পন্দন এগিয়ে যাচ্ছে সামনের দিকে। এ অবস্থার মধ্যেও নিয়মনীতি থেকে পিছপা হয়নি পত্রিকার সম্পাদকীয় নীতি। আর এটির বিশেষত্ব হলো নিজের পত্রিকার কোনো সংবাদের বিজ্ঞাপন আকারে প্রতিবাদ না ছাপা ও অশ্লীল বিজ্ঞাপন পরিহার করা। এতে পত্রিকার লাভের দিক চিন্তা না করে সুস্থ ধারার পত্রিকা উপহার দেয়াই ‘এডিটোরিয়াল পলিসি’। আমরা নিপীড়িত নির্যাতিত অবহেলিত মানুষের পক্ষে থেকে কাজ করতে চাই। তথ্য সন্ত্রাস করে সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি নয় বরং সঠিক তথ্য জানানোর জন্য স্পন্দন সব সময় জনগণের পাশে থাকার প্রত্যাশা করে।
দৈনিক স্পন্দন প্রতিষ্ঠার পর থেকে এদেশের সব গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক, জনমুখী আন্দোলনে সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষার সারথি হিসেবে ভূমিকা রেখে চলেছে। সামাজিক দায়িত্বশীলতা সমুন্নত রাখার ক্ষেত্রেই আমরা সব সময় দৃষ্টি দিয়েছি। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই পত্রিকাটি পরিচিতি পেয়েছে যশোরাঞ্চলের আস্থা এবং নির্ভরতার সংবাদপত্র হিসেবে। আমরা নির্দ্বিধায় বলতে পারি, এক্ষেত্রে স্পন্দন অবশ্যই অন্য যে কোনো সংবাদপত্র থেকে আলাদা। আমরা নিরন্তর কাজ করে চলেছি জনগণের কণ্ঠস্বর হিসেবে। এক্ষেত্রে আমাদের সবচেয়ে বড় শক্তি মহান মুক্তিযুদ্ধের অবিনাশী চেতনা। তারুণ্যের শক্তিতে আমরা লড়াই করছি একটি গণমুখী অসাম্প্রদায়িক বিজ্ঞানমনস্ক ও মুক্ত চিন্তার সমাজ প্রতিষ্ঠায়।
স্পন্দনের কর্মীরা একাগ্রতা ও নিষ্ঠার সাথে শ্রম দিয়ে যাচ্ছে,পত্রিকাটি কিভাবে উন্নতির দিকে ধাবিত হয়। স্পন্দন হচ্ছে যশোরের সবচেয়ে ভারসাম্যপূর্ণ পত্রিকা। পাঠকের মন জোগাতে ও মন জাগাতে সর্বসাধ্য নিয়োগ করছে।
আমাদের কাছে মনে হয়, সংবাদপত্র এখন অন্তর্গত এক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। খোলনলচে কমবেশি আগের মতোই থাকছে, কিন্তু এর ভাষা ও ভঙ্গি প্রতিদিন পাল্টাচ্ছে। বার্তা, সম্পাদকীয়, ফিচারের যে ‘টেক্সটবুক তত্ত্ব’ দশকের পর দশক সংবাদপত্র শাসন করেছে, এখন তা অচল প্রায়। ফেসবুক, টুইটার, ইনস্টাগ্রামের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের প্রবল উপস্থিতি প্রচলিত ধারার সংবাদমাধ্যমের ভিত্তিও নাড়িয়ে দিচ্ছে। পরিবর্তনের এই ধারাবাহিকতায় দৈনিক স্পন্দনও তাল মিলিয়ে যাচ্ছে।
পত্রিকাটিতে ওয়েব পেজ, ই-পেপার যুক্ত রয়েছে। প্রতিনিয়ত এক ক্লিকেই সব খবর দেখা মিলছে। পাঠকের মন জোগাতে ও মন জাগাতে সর্বসাধ্য নিয়োগ করবো- এ আমাদের অঙ্গীকার।
১৭ বছরে পদার্পণের এই শুভলগ্নে স্পন্দনের পাঠক, লেখক, বিজ্ঞাপনদাতা, পত্রিকা পরিবেশক, বিপণনকারী,শুভানুধ্যায়ীসহ সবাইকে জানাই শুভেচ্ছা-অভিনন্দন । আজকের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে নতুন দিনের নতুন স্পন্দন হোক নতুন নতুন কিছু।