নিজস্ব প্রতিবেদক : যশোরের ঝিকরগাছায় গদখালি গ্রামে এসিড নিক্ষেপ করে একই পরিবারের তিনজনকে ঝলসে দেয়ার ঘটনায় সেই জসিমকে (৪০) আটক করতে যেতে রীতিমতো জেলে (মৎসজীবী) সাজতে হয়েছিলো ঝিকরগাছা থানা পুলিশকে।
নড়াইলের লোহাগড়া ও কালিয়া থানার মধ্যবর্তী এলাকায় অবস্থিত কামাল-প্রতাব নামক বিলের মধ্যে থেকে তাকে আটক করা হয়। আটক জসিম শার্শা উপজেলার পান্তাপাড়া গ্রামের সিদ্দিকের ছেলে।
পুলিশ জানিয়েছে, গত ৩ জুলাই রাতে গদখালী গ্রামের রিপা নামক এক নারীকে লক্ষ্য করে এসিড নিক্ষেপ করে জসিম। এরপর তিনি পালিয়ে যান। তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুলিশ জানতে পারে জসিম বারবার তার স্থান পরিবর্তন করছে। তাকে কোন ভাবে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করছে না। গত ১৭ জুন ঝিকরগাছা থানার এসআই তাপস জানতে পারেন জসিম নড়াইলের ওই বিলের মাঝে অবস্থান করছেন। সংবাদ পেয়ে সেখানেই অভিযান চালান তিনি। তবে ছদ্দবেশ ধারন করেন তিনি তার টিমের প্রতিটি সদস্য। নৌকা নিয়ে, লুঙ্গী পরিধান করে, মাথায় গামছা বেঁধে জেলে সেজে যান তার কাছে। যাতে কোন ভাবেই বুঝতে না পারে তারা পুলিশ। কাছা কাছি গেলে জসিম বুঝতে পরে পুলিশ তাকে ধরেত এসেছে। তিনি নিজেই পানিতে ঝাপ দিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। সাথে সাথে পুলিশ সদস্যরাও পানিতে ঝাপ দিয়ে তাকে আটক করে। এবং তারা নিশ্চিত হন যে আটক ব্যক্তিই জসিম। সেখান থেকে বৃহস্পতিবার রাতেই তাকে যশোরে নেয়া হয়।
পুলিশ আরো জানিয়েছে, বছর ছয়েক আগে রিপার বিয়ে হয় শার্শার নাভারনে। সেখানে স্বামীর সাথে বনিবানা না হওয়ায় বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটে। প্রায় ৮ মাস আগে রিপা তার চার বছরের শিশু সন্তানকে নিয়ে পিতার বাড়িতে চলে আসেন। সেখাই তিনি থাকেন । রিপার বাড়ির পাশে একটি বাড়িতে ভাড়া থাকতেন জসিম। জসিম দিন মজুর। সে হিসাবে জসিমের সাথে রিপার পরিচয় হয়। জসিম একটি পেঁপে বাগানে শ্রমিকের কাজ করতেন। এক সময় তিনি রিপাকে বিয়ে প্রস্তাব দেন। কিন্তু রিপা ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। পরে এক পর্যায়ে জসিম পরিবার নিয়ে গত ১০ জুন অন্যস্থানে চলে যান। সেখানে গিয়েও মোবাইল ফোনে বারবার বিয়ের প্রস্তাব দিতেন। ততবারই প্রত্যাখিত হন জসিম। ফলে তার ক্ষতির পরিকল্পনা করে।
গত ৩ জুন রাত ৮টার দিকে জসিম গোপনে রিপার বাড়ির পেছনে যান। সে সময় রিপার বাড়িতে কোন পুরুষ মানুষ ছিলো না। জসিম জানালার কাছে এসিড নিয়ে দাড়িয়ে থাকেন। সুযোগ বুঝে তিনি রিপাকে লক্ষ্য করে এসিড নিক্ষেপ করে। এতে রিপা, তার মা ও ছেলে ঝলসে। সাথে সাথে তাদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। আর জসিম পালিয়ে যায়। দীর্ঘ চেষ্টার পর তাকে নড়াইলের বিলের মধ্যে থেকে আটক করা হয়।