সুব্রত সরকার, মহম্মদপুর (মাগুরা) : টানা বৃষ্টিতে মধুমতি নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। সেই সাথে বাড়ছে ভাঙন। দিশেহারা দুইশতাধিক পরিবার। প্রতি বছরের মত ভাঙন ও বাড়ি ঘর নদীগর্ভে ধসে যাওয়ার আশঙ্কায় তাদের মাঝে এ আতঙ্ক বিরাজ করছে প্রতি মুহূর্তে। মহম্মদপুর উপজেলায় মধুমতি নদী প্রতি বর্ষা মৌসুমে এভাবেই ভেঙ্ েযাচ্ছে । এতে উপজেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে রুইজানি, ভোলানাথপুর চরপাচুড়িয়া, মহেশপুর, হরেকৃষ্ণপুর, আড়মাঝি, রায়পুর গ্রাম।
চলতি বর্ষা মৌসুমে উপজেলার ৬ গ্রামের ২-৩ কি.মি. এলাকা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এদিকে নদীর তীব্র ভাঙন রোধে এলাকাবাসীর আবেদনের দাবির প্রেক্ষিতে মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সরোয়ার জাহান সুজন, উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ আবু আব্দুল্লাহেল কাফী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার রামানন্দ পাল সম্প্রতি ভাঙন কবলিত স্থান পরিদর্শন করেন। এ সময় তারা ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিলেও এখনও কোনো কার্যক্রম শুরু হয়নি। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। উপজেলা সদরের ভোলানাথপুর গ্রামে মধুমতি নদীর পাড়ের নিখিল সরকার, জগবন্ধু মালাকার, সাধন বিশ্বাস, তারাপদ চৌধুরী, পূর্ন সরকার, হরশিত সরকার, সুশান্ত বিশ্বাস, দিপংকর চৌধুরী, প্রিয় নাথচৌধুরী সহ অনেকেরই বাড়ীঘর ফসলি জমি নদী গর্ভে বিলীন হয়েগেছে। এছাড়াও হুমকির মুখে পড়েছে বহু বসতবাড়ি ঘর, স্কুল, মাদরাসা, ঈদগাহ, হাট-বাজার, গোরস্থান ও মন্দিরসহ শহর রক্ষা বাঁধ।
উপজেলা সদরের মধুমতি পাড়ের কাশিপুর, ভোলানাথপুর ও রুইজানি গ্রাম ঘুরে ভাঙন কবলিত মানুষের করুণ চিত্র দেখা গেছে। এক মাসেরও বেশি সময় আগে তিন গ্রামে নদীভাঙন দেখা দেয়। গত দশ দিন ধরে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করে। এই সময়ের মধ্যে গ্রামগুলোর প্রায় দুই’শ পরিবারের হাজারো মানুষ সহায়-সম্বল হারিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। তারা অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে অথবা খোলা জায়গায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
ভোলানাথপুর গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য তারাপদ চৌধুরী বলেন, নদীর ভাঙনে আমরা বাড়িঘর হারিয়ে নিস্ব হয়ে গেছি। আমরা ত্রাণ চাই না। নদীর ভাঙনরোধে কার্যকরী ব্যবস্থা চাই। ভাঙনরোধসহ ফসলি জমি ও বসতবাড়ি রক্ষার্থে এই মুহূর্তে দ্রুত বালুভর্তি জিও ব্যাগফেললে অচিরেই নিচিহ্ন হয়ে পড়বে তিন গ্রমের অধিবাসীরা।
মহম্মদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রামানন্দ পাল বলেন, ‘ভাঙন-দুর্গত এলাকা পরিদর্শন করা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে খাবার সহায়তা দেওয়া হয়েছে।
মাগুরা পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাওবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সরোয়ার জাহান সুজন জানান, ভাঙন এলাকা ঘুরে এসেছেন তিনি। ভাঙন প্রতিরোধে প্রাথমিকভাবে জিও ব্যাগ (বালুর বস্তা) ফেলার কাজ শুরু হবে। ভাঙনরোধে জিও ব্যাগ ফেলানোর জন্য নতুন করে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। তিনি আরও বলেন, ভোলানাথপুর এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলানোর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি নতুন করে বাধ নির্মাণ করতে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠিয়েছি।
মাগুরা-২ আসনের এমপি ড. শ্রী বীরেন শিকদার বলেন, নদী ভাঙনরোধে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অবহিত করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণ সহযোগিতা দিতে ও সার্বিক খোঁজ-খবর নিতে নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।