আজ সাতক্ষীরার ১৩ ইউপি নির্বাচন : বিদ্রোহীদের চাপে নৌকার প্রার্থীরা

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:১১:৩৯ পিএম

শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা: আজ সাতক্ষীরা ১৩ ইউনিয়ন পরিষদের দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দ্বিতীয় ধাপের এই নির্বাচনকে ঘিরে এবং নিরেপেক্ষ ভোট নিয়ে নির্বাচনকে ঘিরে উদ্বেগ উৎকন্ঠা আর শঙ্কা বিরাজ করছে বিএনপি, জামায়াত, জাতীয়পার্টিসহ বিভিন্ন স্বতন্ত্রী প্রার্থী এবং তাদের কর্মী সমর্থকদের মনে। বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনে সরাসরি অংশ না নিলেও বিএনপি সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ও আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী থাকায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা মার্কার প্রার্থীরা সুবিধাজনক স্থানে, এমনটি বলা যাচ্ছে না। কারণ বেশির ভাগ ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র হিসেবে প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগেরই লোকজন। এই বিদ্রোহী প্রার্থীরা নৌকার জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছেন। কোথাও কোথাও নৌকার প্রার্থীরা কোণঠাসা হয়ে পড়েছেন।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মোট ১৪ ইউনিয়নের মধ্যে আলীপুর ইউনিয়ন ব্যতিত সাতক্ষীরার ১৩ টি ইউনিয়নের নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে ৬৪ জন প্রার্থী, সংরক্ষিত মহিলা পদে ১৬০ জন ও সাধারণ সদস্য পদে মোট ৪৯১জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। উপজেলার মোট ১২৬টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। ১৩টি ইউনিয়নের মোট ভোটার সংখ্যা ২ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬৫৩ জন। এর মধ্যে মহিলা ভোটার ১ লক্ষ ৩২ হাজার ৪২৯ জন ও পুরুষ ভোটার রয়েছে ১ লক্ষ ৩৪ হাজার ২২৪ জন।

এই নির্বাচনে বিএনপি সরাসরি নির্বাচনে অংশ না নিলেও ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে বৈকারী, কুশখালী, ফিংড়ী ও ধুলিহর এবং শিকপুর ইউনিয়ন ব্যতিত বাকি ৮ ইউনিয়নে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে সরাসরি বিএনপির পদে থাকা নেতাকর্মীরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছেন। এদিকে ব্রম্মরাজপুর ইউনিয়ন ছাড়া বাকি ১২ ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন। এছাড়া ঘোনা, বৈকারী ও বাশদাহ ইউনিয়নে জাতীয়পার্টির ৩ জন প্রার্থী লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন । এদিকে আগরদাঁড়ি, ঘোনা ও বৈকারী ইউনিয়নে জামায়াতের স্বতন্ত্র প্রার্থী রয়েছে। আর ইসলামি শাসনতন্ত্র বাংলাদেশ থেকে ৩ জন প্রার্থী হাতপাখা প্রতীক নিয়ে নির্বাচন করছেন। তবে একাধিক ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী  ও বিএনপির প্রার্থী থাকায় রাজনৈতিক সহিংসতা বাড়েছে। ফলে অনেক ইউনিয়নে নৌকার বিজয় নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে জেলা আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বিদ্রোহীদের সতর্কবার্তা এবং সর্বশেষ সদও উপজেলা আওয়ামী লীগের ৯ জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে বহিষ্কার করা হলেও খুব বেশি কাজে আসেনি। বরং অনেক স্থানে বিদ্রোহীদের চাপে প্রচারপ্রচারণায় গতি আনতে পারছেন না সরকারি দলের প্রার্থীরা।

সবেজমিন ঘুরে জানা গেছে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারণে অধিকাংশ ইউনিয়নে বিএনপি ও জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা রয়েছেন সুবিধাজনক স্থানে। এতে সংঘর্ষ-সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা করছেন ভোটাররা।

ঘোনা ইউনিয়নে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি নৌকার প্রার্থী মো. ফজলুর রহমান নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আব্দুল কাদের মোটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এখানে সদর উপজেলার পশ্চিম জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক মাওলানা মোশারাফ হোসেন চশমা প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ভোট করছেন। এছাড়া বিএনপির প্রার্থী হিসাবে জেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. কামরুজ্জামান ভূট্ট স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। জাতীয়পার্টির লাঙ্গল প্রতীক পেয়ে মাঠ দাপাচ্ছেন মোঃ বদরুজ্জামান বাবলু।

এদিকে লাবসা ইউনিয়নে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল আলিম স্বতন্দ্র প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে আবারও নির্বাচন করেছেন। এখানে থানা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মো. নজরুল ইসলাম নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।

এদিকে ব্রহ্মরাজপুর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের বিদ্্েরাহী প্রার্থী না থাকলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে উপজেলা বিএনপির দুই প্রার্থী মাঠ দাপাচ্ছেন। সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইউপি চেয়ারম্যান শহিদুল ইসলাম তিনি আবারও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে আনারস প্রতীক নিয়ে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আলাউদ্দিন বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তবে এখানে থানা বিএনপির সহসভাপতি মো. নুরুল ইসলামও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে মটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। ইসলামি স্বাসনতন্ত্র আন্দোলন বাংলাদেশ এর ইবাদুল ইসলাম হাতপাখা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এখানে নানা ভাবে বর্তমান চেয়ারম্যান বিএনপির প্রার্থী শহিদুল ইসলাম ও তার কর্মী সমর্থকদের হুমকি ধামকি দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

শিবপুর ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি শওকত হোসেন বিপক্ষে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শ্রম বিষয়ক সম্পাাদক এস এম আবুল কালাম আজাদ বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এখানে থানা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুল মজিদ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। এছাড়া হাতপাখা প্রতিকের  ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশের ইমাদুল হোসেন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।

আগরদাঁড়ি ইউনিয়নে থানা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক মোঃ মইনুল ইসলামের নৌকার প্রার্থী হলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন যুবলীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক মোঃ মজনুর রহমান চশমা প্রতীক নিয়ে মাঠে থাকায় বিপাকে পড়েছেন তিনি। এখানে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সদর উপজেলা বিএনপির সহসভাপতি মোঃ লুৎফর রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ঘোড়া প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।

ধুলিহর ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী থানা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান বাবুর প্রতিপক্ষ হিসেবে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন সদর উপজেলা কৃষকলীগের সহসভাপতি মোঃ মিজানুর রহমান চৌধূরী আনারস প্রতিক নিয়ে মাঠ দাপাচ্ছেন। এখানে শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রউফের পুত্র স.ম মসিউর রহমান ফিরোজ মটরসাইকেল প্রতিক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে জোরাল প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।

এদিকে কুশখালি ইউনিয়নে এবার চেয়ারম্যান পদে সর্বোচ্চ মোট ১১ জন প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এখানে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলামের গলারকাটা হিসেবে আওয়ামী লীগের বিদ্্েরাহী প্রার্থী ৮ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সাইফুদ্দিন পলাশ চশমা প্রতীক ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মোঃ মনিরুল ইসলাম আনারস প্রতিক নিয়ে মাঠে রয়েছেন। এখানে জাতীয়পার্টির প্রার্থী হিসেবে মুনসুর আলী সরদার লাঙ্গল প্রতিক নিয়ে জোরাল প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।

ভোমরায় বিএনপির প্রার্থী হিসেবে জেলা যুবদলের সহসভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম সাথে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন।

ঝাউডাঙ্গা ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ নেতা নৌকার প্রার্থী আজমল হোসেনর বিরুদ্ধে বিদ্্েরাহী প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহ-সভাপতি জয়দেব কুমার ঘোষ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতিক নিয়ে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করছেন। এখানে থানা বিএনপির যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সাবেক চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মটরসাইকেল প্রতিক নিয়ে লড়াই করছেন।

বল্লি ইউনিয়নের ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী বজলুর রহমান পাশাপাশি বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে সেচ্ছাসেবক লীগ নেতা মোঃ খাইরুল ইসলাম মটরসাইকেল প্রতিক নিয়ে লড়ছেন। এখানে উপজেলা বিএনপির সদস্য অ্যাডঃ মহিতুল ইসলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতিক নিয়ে ভোট করছেন।

বাশদাহ ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী ইউনিয়ন আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান নৌকা প্রতীক পেলেও বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি চেয়ারম্যান এস এম মোশারাফ হোসেন আনারস প্রতীক ও ইউনিয়ন বুবলীগের সভাপতি আব্দুল খালেক টেলিফোন প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন। এখানে বিএনপি নেতা এবিএম বদরুজ্জামান স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে চশমা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এছাড়া লাঙ্গল প্রতীক লড়ছেন জাতীয়পার্টির নেতা শেখ শরিফুজ্জামান বিপুল।

বৈকারী ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী সদর উপজেলা আ’লীগের সহসভাপতি ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ইউপি চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান অছলের বিরুদ্ধে তরুন লীগ নেতা আবু মোঃ মোস্তফা কামাল বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে মটরসাইকেল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। এখানে জামায়াত সমর্থিত প্রার্থী হিসেবে জালাল উদ্দিন স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।

এই নির্বাচনে সদর উপজেরার ১৩ ইউনিয়নের অধিকাংশ ইউনিয়নে আ’লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের কারনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের জয়ের ব্যাপারে গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে।