প্রথম দিনে উপস্থিতি ছিল কম, প্রায় অর্ধেক

তীব্র তাপদাহ অব্যাহত থাকায় যশোরে ফের স্কুল বন্ধ

এখন সময়: সোমবার, ১৩ মে , ২০২৪, ০৩:২৯:০১ এম

মিরাজুল কবীর টিটো: যশোরে চলমান অতি তীব্র তাপপ্রবাহের মধ্যেই দীর্ঘ ছুটি শেষে রোববার স্কুল-কলেজ শুরুর প্রথম দিনে প্রচন্ড গরম উপেক্ষা করে ক্লাস করেছে শিক্ষাথীরা। তবে এদিন রেশিরভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রায় ৫০ ভাগ শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী স্কুলে অ্যাসেম্বলি হয়নি। এদিকে, ক্লাস শুরুর পরদিনই আজ সোমবার যশোরসহ ৫ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। চলমান তাপদাহের কারণে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। রোববার রাতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের এক বার্তায় এ তথ্য জানান।
ওই কর্মকর্তা জানান, দেশে চলমান তাপদাহের কারণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে ঢাকা, চুয়াডাঙ্গা, যশোর, খুলনা ও রাজশাহী জেলার সকল মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ২৯ এপ্রিল বন্ধ থাকবে। তবে যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আছে, সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্তৃপক্ষ চাইলে তাদের স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা খোলা রাখতে পারবেন।
এদিকে, শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী বলেছেন, কোনো জেলায় তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে উঠলে সেই জায়গার প্রতিষ্ঠানকে বন্ধ ও পাঠদানে সময় পরিবর্তন করা যাবে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তারা আঞ্চলিক পর্যায়ে আলোচনা করে প্রতিষ্ঠান বন্ধ ও পাঠদানে সময়ও পরিবর্তন করতে পারেন।
সরেজমিনে রোবববার যশোরে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ঘুরে দেখা গেছে, শিক্ষামন্ত্রানালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী সকাল আট থেকে সাড়ে শ্রেণি কার্যক্রম শুরু হয়। শেষ হয় বেলা সাড়ে ১১ টা পর্যন্ত। সদর উপজেলা ও বাঘারপাড়ার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যেয়ে দেখা গেছে, গতনুগতিকভাবেই শিক্ষকরা শ্রেণিকক্ষে উপস্থিত শিক্ষার্থীদের পাঠদান করাচ্ছেন। তবে প্রথম শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত মোট শিক্ষার্থীর ৫০ ভাগ প্রথম অনুপস্থিত দেখা গেছে। যারা উপস্থিত ছিলেন তাদের পূর্বের মতো একই পদ্ধতিতে পাঠদান দেয়া হচ্ছে।
সদর উপজেলার বালিয়া ভেকুটিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তৃতীয় শ্রেণিতে যেয়ে দেখা যায়, মোট ৬০ জন ছাত্র ছাত্রীর মধ্যে উপস্থিত ২৩ জন, চতুর্থ শ্রেণিতে ৬০ জনের মধ্যে ২৫ জন। পঞ্চম শ্রেণিতে ৬৯ জনের মধ্যে ২৬ জন উপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমা সুলতানা লিপি বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী স্কুল খোলা পাঠদান ও বন্ধও করা হবে। স্কুল খোলার প্রথম দিন বিদ্যালয়ে মোট শিক্ষার্থীর ৪৫ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীরা প্রবেশ করলে তাদের বাইরে আর যেতে দিচ্ছি না। বাইরের খাবারও খেতে দিচ্ছি না। টিউওবয়েল থেকে ঠান্ডা পানি পান করাচ্ছি। মূলত একশ্রেনির অভিভাবকরা তাপদাহের আতংকে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠাচ্ছে না। সেই সব অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে শ্রেণিকক্ষে উপস্থিতি হার বৃদ্ধি করার কাজ করছি।’
পাশেই বালিয়াডাঙ্গা ভেকুটিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ শ্রেণি থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত সাড়ে পাঁচশ’ শিক্ষার্থী। বিদ্যালয় খোলার প্রথম দিনে ৫০ শতাংশ শিক্ষার্থী উপস্থিত হয়েছে। জানতে চাইলে বিদ্যালয়টির সহকারী প্রধান শিক্ষক সিরাজুল ইসলাম বলেন, প্রথম দিন উপস্থিত কম থাকে। অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলছি; যাতে তাদের সন্তানদের বিদ্যালয়ে পাঠায়। বিদ্যালয়ে আসার সাথে সাথে আমরা তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য নানা পরামর্শ দিচ্ছি।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তাসলিমা নূরা অভিভাবক তহমিনা ইসলাম বলেন, ‘আজ স্কুল খোলাতে সাথে করে নিয়ে এসেছিলাম। কিন্তু ক্লাস শেষ হওয়ার পরে মেয়েটা কিছুটা গরমে অসুস্থ বোধ করছে। তাই সিন্ধান্ত নিয়েছি; গরম একটু না কমলে সন্তানরে স্কুলে পাঠাবো না।
মাহমুদুল হাসান নামে আরেক অভিভাবক বলেন, স্কুল বন্ধ থাকলে শিশুরা পড়ালেখা করতে চায় না। শিখন ঘাটতি পূরণে স্কুল কলেজ খোলা রাখার প্রয়োজন। তবে তীব্র তাপদাহে সন্তানকে বিদ্যালয় পাঠানো ঝুঁকিপূর্ণ মনে হচ্ছে। তাই সকাল ৭টা থেকে সাড়ে ১০টার মধ্যে শ্রেণি কার্যক্রম শেষ করতে পারলে গরমটা কম লাগতো।
দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপর থাকছে। গরম কমার কোনে লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে কøাস সময় কমিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন অভিভাবকেরা। যশোরে রোববার তাপমাত্রা ৪২ ডিগ্রির ওপরে থাকলেও ক্লাস চলে। এদিন জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আবহাওয়া অধিদপ্তরের খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
যশোর জেলা শিক্ষা অফিসও ‘স্কুল টাইম’ কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত নেয়ার ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরকে (মাউশি) জানিয়েছে। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিশু শ্রেণির পাঠদান বন্ধ ও প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণির ক্লাস কমিয়ে দেয়া হয়েছে।
জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহফুজুল হোসেন জানান, স্কুল সময় কমিয়ে আনার বিষয়ে মাউশিকে জানানো হয়েছে। সেখান থেকে যে সিদ্ধান্ত আসবে সেটি বাস্তবায়ন করা হবে। এদিকে, জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ক্লাস কমিয়ে দেয়া হয়েছে। শিশু শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রয়েছে।
যশোর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ৭ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাসনিয়া আক্তার জেরিন জানায়, দীর্ঘদিন পর স্কুলে এসে ভালো লাগলেও গরমে ক্লাস করতে কষ্ট হচ্ছে। একই কথা জানায় ওই ক্লাসের শিক্ষার্থী তাসনিম তাবানুম অরণ্য। জিলা স্কুলের ৮ম শ্রেণির ছাত্র জাফর সাদেক জানায়, শ্রেণি কক্ষে একসাথে অনেকজনকে ক্লাস করতে হয়। এতে গরম অনেক বেশি লাগে। গরমের তীব্রতা কমলে স্কুল খুললে ভালো হতো।
জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক শোয়াইব হোসেন ও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক নারায়ণ চন্দ্র দেবনাথ জানান, সরকারি নীতিমালা মেনে ক্লাস নেয়া হয়েছে।
যশোর জিলা স্কুলে এক শিক্ষার্থীর মাতা সীমা পাল বলেন, দিবা ও প্রভাতি শাখার ক্লাস একসময়ে হলে ভালো হতো। দুপুরে দিবা শাখার ক্লাস যখন হয় শুরু হয় তখন গরম অনেক বেশি থাকে। শিউলী নামে আরেক অভিভাবক জানান, গরমের মধ্যে শ্রেণিতে পাঠদান কার্যক্রম কমিয়ে আনলে ভাল হয়।
সদর উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ইসমাইল হোসেন জানান, প্রাথমিকে শিশু শ্রেণির পাঠদান বন্ধ রয়েছে। প্রথম শ্রেণি থেকে ৫ম শ্রেণির ক্লাস সময় কমিয়ে সকাল ৮টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত করা হয়েছে। আগে ৯টা থেকে বিকেল ৪টা ১৫ মিনিট পর্যন্ত ক্লাস হতো।
গত ২৫ মার্চ থেকে ২০ এপ্রিল পর্যন্ত রোজা, ঈদ ও পহেলা বৈশাখের ছুটি ছিল। ২১ এপ্রিল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার কথা থাকলেও গরমের তীব্রতায় খোলা হয়নি। ২১ থেকে ২৭ এপ্রিল পর্যন্ত বন্ধ রাখা হয়।