চুয়াডাঙ্গার পর সর্বোচ্চ তাপমাত্রা যশোরে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াম

সারা দেশে ‘হিট অ্যালার্ট’, অতি তীব্র তাপপ্রবাহের দিকে যশোর

এখন সময়: শুক্রবার, ৩ মে , ২০২৪, ০২:১৫:৩৩ এম

বিল্লাল হোসেন : পারদ ওপরে চড়তে চড়তে অতি তীব্রতার দিকে এগোচ্ছে যশোরের তাপমাত্রা। শুক্রবার দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল চুয়াডাঙ্গায়। তার পরেই এই জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করে। যশোরে এদিন ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড হয়। এদিকে, দেশের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া তাপপ্রবাহের তীব্রতা আরো বৃদ্ধি ও অব্যাহতের আশঙ্কায় তিন দিনের জন্য ‘হিট অ্যালার্ট’ দিয়েছে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর।


এর আগে মঙ্গলবার যশোরে তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস ও সোমবার ছিল ৩৮ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ফলে ক্রমশ ঊর্ধ্বমুখী এই তাপপ্রবাহ অতি তীব্র মাত্রায় পরিণত হতে পারে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৭ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলো মৃদু তাপপ্রবাহ। ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে ৩৯ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলো মাঝারি তাপপ্রবাহ। ৪০ থেকে ৪১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলো তীব্র তাপপ্রবাহ। আর ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলো অতি তীব্র তাপপ্রবাহ।
আবহাওয়াবিদ ড. মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক এক সতর্কবার্তায় জানিয়েছেন, দেশের ওপর দিয়ে চলমান তাপ প্রবাহ শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) থেকে পরবর্তী ৭২ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। এই তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। এ ছাড়া জলীয়বাষ্পের আধিক্যের কারণে বৃদ্ধি পেতে পারে অস্বস্তি।
চ্য়ুাডাঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, শুক্রবার বিকেল ৩টায় চুয়াডাঙ্গার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। টানা তিন দিন দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে এ জেলায়।
তীব্র তাপদাহে জনসাধারণকে সচেতন করতে চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসন শহরের গুরুত্বপূর্ণ এলাকায় মাইকিং করে পথচারী ও এলাকাবাসীকে সতর্ক করছে। খুব প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নিষেধ করা হচ্ছে। শিশু ও বয়স্কদের ক্ষেত্রে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে অনুরোধ করা হচ্ছে।
চুয়াডাঙ্গার প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান বলেন, বাতাসের আদ্রতা বেড়ে যাওয়ায় বেশি গরম অনুভ‚ত হচ্ছে। গত মঙ্গল ও বুধবার জেলায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড করা হয়েছিল যথাক্রমে ৪০ দশমিক ৬ ও ৪০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
শুক্রবার দুপুর আড়াইটা। যশোর সদর উপজেলার চুড়ামনকাটি ইউনিয়নের ঝাউদিয়া মাঠে ধান ক্ষেত পরিচর্যা করছিলেন কৃষক শফিকুল ইসলাম। আগুন ঝরা রোদে কাজ করতে করতে রীতিমতো হাপিয়ে ওঠেন তিনি। গভীর নলকূপ থেকে হাত মুখ ধুয়ে পানি পান করার পর গাছের নিচে শুয়ে পড়েন এই কৃষক। তার ভাষ্য, রোদের তাপ সহ্য করা অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমন পরিস্থিতির মধ্যে আর কাজ করতে পারছিনা।
দমফাটা রোদ ও গরমের মধ্যে সবচেয়ে কষ্টে রয়েছেন নি¤œ আয়ের লোকজন। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ট হয়ে হাঁসফাঁস করছেন। রিকসা চালক মানিক মিয়া জানান, প্রচণ্ড তাপের মধ্যে রিকসা চালাতে মন চায় না। কিন্তু অভাবের সংসার। তাইতো কষ্ট হলেও রিকসা চালানো ছাড়া উপায় নেই।
নির্মাণ শ্রমিক আশাদুল ইসলাম জানান, কড়া রোদে গা ‘পুড়ে’ যাচ্ছে। মাথার ওপরের আকাশটা যেনো তাঁতানো কড়াইয়ের রূপ নিয়েছে।
রড মিস্ত্রি মোফাজ্জেল হোসেন জানান, গরমের কারণে রডে হাত দেয়া যাচ্ছেনা। তারপরও কষ্ট করে কাজ করতে হচ্ছে। একদিন কাজ না করলে চুলায় হাঁড়ি উঠবেনা। তাই অনেকটা বাধ্য হয়েই মাঠে কাজ করতে এসেছেন। যশোরে অব্যাহত খরতাপ শ্রমজীবী মানুষের কষ্ট অনেকটা বাড়িয়েছে। তাপমাত্রার পারদে মানুষ একদম নাজেহাল।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বভাসে বলা হয়, বাগেরহাট, যশোর, চুয়াডাঙ্গা ও কুষ্টিয়া জেলার ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ এবং দিনাজপুর, রাঙ্গামাটি, চাঁদপুর, খুলনা, সাতক্ষীরা, বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলাসহ ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপ প্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
শনিবার সকাল থেকে রোববার (২১ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থয়ীভাবে দমকাঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে।
রোববার সকাল থেকে সোমবার (২২ এপ্রিল) সকাল পর্যন্ত ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম এবং সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকাঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি, বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে শিলা বৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। বর্ধিত পাঁচ দিনে আবহাওয়ার উল্লেখযোগ্য পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই।