বৃষ্টিতে ধান নিয়ে বিপাকে কৃষক

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ১০:৪৮:৩১ এম

এম আলমগীর, ঝিকরগাছা : স্বপ্ন বাঁচাতে প্রাণপণ চেষ্টা ও কঠোর পরিশ্রম করছে কৃষক। গত কয়েক মাসের পরিচর্চা ও কষ্টের ইরি ধান ঘরে তুলতে চরম ভোগান্তির মধ্য পড়েছে তারা। ধানে বাম্পার ফলন হলেও শেষে কারেন্ট পোকার আক্রমণ ও আকাশ বৃষ্টির কারণে ফসল গোছাতে হিমশিম খাচ্ছে কৃষক। ফলে মহাদুঃচিন্তার মধ্য দিয়ে দিন অতিবাহিত করছে যশোরের ঝিকরগাছার কৃষক-কৃষাণী।
উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য মতে, এ বছর ইরি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৮ হাজার ২শ’ হেক্টর জমি। ধান চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় ৯শ হেক্টর জমিতে বেশি ধান চাষ হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ হাজার ১৭৫ হেক্টর জমিকে উচ্চ ফলনশীল (উফশী), যার মধ্যে ব্রি-৪৯ ধান ৪ হাজার ৪শ’ হেক্টর, স্বর্ণা ৭ হাজার ২শ’ হেক্টর ও প্রতীক ৩হাজার ৬শ’ হেক্টর, বিনা-৭ এক হাজার ৪শ’ হেক্টর এবং হাইব্রিড জাতের ধান চাষ হয়েছে এক হাজার ৬৭৫ হেক্টর জমিতে। এছাড়াও কয়েক রকমের চিকন ও মোটা ধানের চাষও হয়েছে। প্রত্যেক জাতের ধানে এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। বিঘাপ্রতি ২৫-৩০ মণ ধান হবে।
এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গত কয়েক দিনে হালকা, মাঝারি ও ভারী ঝড়-বৃষ্টিতে মাঠে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। যে সকল কৃষক ধান কেটে ছিল তাদের ধান পানিতে ভিজে গেছে। অনেক ধান পানির উপরে ভাসছে। আর যে সকল ধান পেকে গেছে তা কাটতে পারছে না। এদিকে বাতাসে যে সকল ধান মাটিতে পড়ে গেছে তাতে কারেন্ট পোকার উপদ্রব দেখা দিচ্ছে। ফলে সেই ধান না কাটলেও পোকায় নষ্ট করে দিচ্ছে। মাঠের পর মাঠ পাকা ধান রয়েছে। জমিতে পানি থাকার কারণে তা কাটতে পারছে না। অনেক কৃষক কাটা ধান বয়ে রাস্তায় এনে শুকানোর জন্য চেষ্টা করছে আবার কোনো কৃষক পাকা ধান বিচালী বাদ দিয়ে আটি কেটে বাড়ি নিচ্ছে। এতে করে বিচালীর সংকট দেখা দিতে পারে। বৃষ্টির কারণে দিনমজুর শ্রমিকের সংকট দেখা দিয়েছে এবং মজুরি ও ধান আনা-নেয়া খরচ বেড়ে গেছে। 
নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আব্দুর রশিদ জানান, এক বিঘা ধান গরুর গাড়িতে বয়ে বাড়ি তুলতে খরচ দেড় হাজার টাকা। শ্রমিক একবেলা ৮শ’ টাকা। তাও পাওয়া যাচ্ছে না। সকলে নিজের কাজ গোছাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সোনাকুড় গ্রামের সবুজ হোসেন জানান, ১০ কাঠা জমির ধান কেটেছিলাম। তা পানিতে ভিজে গেছে। এখন আড়াই বিঘা ধান পেকে আছে, তা কাটতে পারছি না। নিশ্চিন্তপুর গ্রামের আনোয়ার হোসেন জানান, সাড়ে তিন বিঘার মধ্যে আর মাত্র ৬ কাঠা জমির ধান মাঠে আছে। বাকিগুলো বাড়ি এনেছি। তবে দুইবার করে ভিজেছে। ঐ ৬ কাঠার বিচালী হবে না, আটি কেটে বাড়ি আনতে হবে। একই গ্রামের সেকেন্দার আলীর মাঠে একবিঘা জমির ধান কাটা ছিল। সেগুলো বাড়ি আনার জন্য স্ত্রীসহ মাঠে কাজ করতে দেখা গেছে। রাস্তার উপরে শুকিয়ে তারপর বাড়ি আনতে হবে বলে তারা জানায়। ইজ্জেত আলী ও জিয়াউর রহমানকে ধানের আটি কাটতে দেখা যায়। তারা জানায়, জমিতে পানি জমে আছে। আবার ধান পেকে গেছে। যদি পানি শুকানোর জন্য অপেক্ষা করি, তাহলে ধান ঝরে যাবে। মাস্টার আশরাফুল ইসলাম জানায়, দুই বিঘা জমির ধান কেটেছি। তা পানিতে ভিজে গেছে। বাকিগুলো কি হবে তা জানি না।
কানাইরালী গ্রামের মাস্টার মুক্তার আলী ও মাসুদ রানা নয়ন জানায়, মাত্র ১৫ দিন সময় পেলে মানুষ ধান গুছিয়ে নিতে পারত। এভাবে বৃষ্টি হতে থাকলে কৃষক ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে যাবে। গবাদিপশুর খাদ্য সংকটসহ কৃষক চরম লোকসানের মধ্যে পড়বে।