পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি দীর্ঘ ৮ বছরেও, খুড়িয়ে চলছে সাতক্ষীরা যুবলীগ

এখন সময়: শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:০৪:২৯ এম

শাকিলা ইসলাম জুঁই, সাতক্ষীরা : দীর্ঘ ৮ বছরেও সাতক্ষীরা জেলা যুবলীগের পুর্নাঙ্গ কমিটি হয়নি। ৯০ দিনের আহবায়ক কমিটি দিয়ে কোনো ভাবে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে এর কার্যক্রম। তাও আবার ২৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটির আহবায়ক আব্দুল মান্নান দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ ও হিন্দু পরিবারের জমি দখলের অভিযোগে ২০২০ সালের ৩ আগষ্ট দল থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। জেলা যুবলীগের কার্যক্রম অনেকটা মুখ থুবড়ে পড়েছে। তবে আহবায়ক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক জহিরুল ইসলাম নান্টুসহ অন্যান্য সদস্যরা যে যার মত করে কর্মসূচি ও কেন্দ্রীয় কার্যক্রম করলেও একত্রিত ভাবে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পারছে না আহবায়কহীন এ আহবায়ক কমিটি। ফলে জেলা যুবলীগের কমিটিতে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের পদে আসার জন্য যুবলীগের অনেক ত্যাগী নেতাকর্মী ও নিজ উদ্যোগে জেলা যুবলীগের ব্যানারে কার্যক্রম করলেও সেখানে দলীয় নেতাকর্মীরা স্বতস্ফূর্তভাবে অংশ নিতে দেখা যাচ্ছে না। ইতোমধ্যে ব্যাপক গ্রæপিংও দেখা দিয়েছে। ফলে উপজেলা কমিটিসহ তৃণমূলের নেতাকর্মীরা পড়েছে বিপাকে। আহবায়ক কমিটির যে কেউ জেলা শহরে প্রোগ্রামের জন্য আহবান করলেও তেমন কোনো সাড়া মিলছে না। আগামি দিনে জেলার নেতৃত্বে কারা আসবেন। সভাপতি-সম্পাদক কে হবেন ? মূলত সে দিকেই তাকিয়ে আছে সবাই।

খোঁজখবর নিয়ে জানাগেছে, ২০০৩ সালে মাহমুদ আলী সুমনকে আহবায়ক ও আব্দুল মান্নানকে ১ নম্বর যুগ্ন আহবায়ক এবং আসাদুজ্জামান বাবুকে ২ নম্বর যুগ্ন আহবায়ক করে ৫১ সদস্য বিশিষ্ট কেন্দ্র ঘোষিত আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ২০০৬ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় নেতা-কর্মীদের ভোটে আব্দুল মান্নান সভাপতি এবং আসাদুজ্জামান বাবু সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ৭১ সদস্য বিশিষ্ট সেই কমিটি টানা ২০১৪ সাল পর্যন্ত দলের সাধারণ সম্পাদক বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান বাবু’র নেতৃত্বে অত্যন্ত দক্ষতা ও দৃঢ়তার সাথে সংগঠন পরিচালনা করায় এবং মিছিল-মিটিং-এ বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে রাজপথ সরগরম থাকায় সাতক্ষীরা জেলায় শক্তিশালী সংগঠন হিসেবে যুবলীগের আত্মপ্রকাশ ঘটে।

কিন্তু ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর আব্দুল মান্নানকে আহবায়ক ও জহিরুল ইসলাম নান্টুকে যুগ্ম-আহবায়ক মনোনীত করে ২৯ সদস্য বিশিষ্ট আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়। ৯০ দিনের মধ্যে এই কমিটি প্রতিটি ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, পৌরসভা এবং উপজেলা কমিটির সম্মেলন সম্পন্ন করে জেলা শাখার সম্মেলন সম্পন্ন করে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করবে। কিন্তু গত ৮ বছরে তা করতে ব্যর্থ হয় তারা। আহবায়ক আব্দুল মান্নানের সংগঠন বিরোধী বিভিন্ন কর্মকাÐ আওয়ামী লীগের মধ্যে এবং জেলায় ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দেয়। যুবলীগের সাবেক চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর সাথে সুসম্পর্ক থাকায় আব্দুল মান্নান বার বার অপরাধ করেও রেহায় পেয়ে যান। এরই মধ্যে পরিবর্তন আসে কেন্দ্রীয় কমিটিতে। এছাড়া ২০২০ সালের ৩ আগস্ট সংগঠন বিরোধী কর্মকাÐ ও শহরের ইটাগাছার জেলে পাড়ায় একটি হিন্দু পরিবারের জমি দখলের অভিযোগে আহবায়ক আব্দুল মান্নানকে দল থেকে বহিষ্কার করেন কেন্দ্রীয় কমিটি। এর আগেও সভাপতি থাকা কালিন আব্দুল মান্নান দল থেকে বহিষ্কৃত হন। এক সময়ের বিএনপি-জামায়াতের দুশাসনের দিনগুলোতে মিছিল-¯েøাাগানে সাতক্ষীরার রাজপথ প্রকম্পিত করা সেই আওয়ামী যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি না থাকায় মুখ থুবড়ে পড়েছে জেলা যুবলীগ। উপজেলা কমিটি গুলোও ঢিমে তালে চলছে।

স¤প্রতি জেলা যুবলীগের কমিটি গঠন নিয়ে ফের তোড়জোড় শুরু হয়েছে। কেন্দ্র কমিটির সভাপতি শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন নিখিলের নির্দেশক্রমে সাতক্ষীরা জেলা কমিটির পদ প্রত্যাশীদের জন্য গত ১ জানুয়ারি এক প্রেসবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আহবায়ক/যুগ্ম-আহবায়ক পদের জন্য ৩ জানুয়ারী থেকে ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত যুবলীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জীবন বৃত্তান্ত জমা দেয়ার জন্য আহবান করেন দলের দপ্তর সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান মাসুদ। এরপর থেকে যুবলীগের নতুন কমিটি নিয়ে আশার আলো দেখতে থাকে সাতক্ষীরার সাবেক ছাত্রলীগ ও যুবলীগ নেতারা।

দলীয় সুত্রে জানাগেছে, প্রায় ৪২ জনের মত নেতাকর্মী কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে তাদের জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়েছেন। তবে পদ-প্রত্যাশী সংখ্যার তালিকা এত দীর্ঘ হলেও এর অধিকাংশকে মাঠে দেখা যায়না বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের নেতাকর্মীরা। ইতোমধ্যে অনেক নেতারা নতুন করে কার্যক্রম শুরু করেছেন। অনেকে কেন্দ্রী নেতাদের কাছে দোঁড়-ঝাপ করছেন।

এদিকে দীর্ঘ দিন ধরে নেতৃত্বে আসার জন্য জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য মীর মহিতুল আলমের নেতৃত্বে যুবলীগের একাংশ এবং যুগ্ম আহবায়ক জহিরুল ইসলাম নান্টু এবং সাবেক কেন্দ্রীয় যুবলীগের সহসম্পাদক অহেদ পারভেজ, সদর যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে যুবলীগের অপর একাংশ জেলা শহরে বিভিন্ন কর্মসূচী ও করোনাকালিন সময়ে বিভিন্ন সামাজিক মূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার করে আসছেন। এছাড়া অবিভক্ত বাংলার ডেপুটি স্পিকার জালাল উদ্দিন হাশেমীর পৌত্র ও সাতক্ষীরা-১ আসনের সাবেক এমপি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সৈয়দ কামাল বখ্ত ছাকি’র ভাতিজা সাবেক ছাত্রলীগ নেতা সৈয়দ মহিউদ্দিন হাশেমী তপু এবং জেলা পরিষদের মেম্বর সাবেক জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি আমিনুর রহমান বাবু, জেল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সুজন, জেলা যুবলীগের আহবায়ক কমিটির সদস্য মনোয়ার হোসেন অনু,তালা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক কাজী হিল্লোলসহ আরও অনেকে বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডসহ যুবলীগের কেন্দ্র ঘোষিত বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করে আসছেন। তারা সবাই জেলা যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পদ প্রত্যাশী। নেতাকর্মীরা মনে করছেন, নতুন কমিটি গঠন হলে সংগঠন আরও চাঙ্গা হবে।