রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু : সেনাসহ নিহত ৫০, বিমান ভূপাতিত

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ১১:০৭:২০ এম

নিউজ ডেস্ক: ইউক্রেনে রুশ হামলা শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত দেশটির ৪০ সেনাসদস্য এবং অন্তত ১০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির প্রশাসনিক সহকারী ওলেকসি আরেস্টোভিচ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানিয়েছেন। খবর এএফপির।

অন্যদিকে মস্কো সমর্থিত বিদ্রোহীদের হামলা প্রতিহত করার সময় অন্তত ৫০ জন রুশ দখলদার নিহত হয়েছেন বলে দাবি করেছে ইউক্রেন সেনাবাহিনী। তবে এএফপি এও জানিয়েছে, তাদের পক্ষে তাৎক্ষণিকভাবে নিহতের এই সংখ্যা যাচাই করা সম্ভব হয়নি।

ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান এক টুইটে বলেছেন, শাচিসতিয়া নিয়ন্ত্রণে এসেছে। দখলদার ৫০ রুশ নিহত হয়েছেন। ক্রামাটোরস্ক জেলায় রাশিয়ার আরও একটি বিমান ভূপাতিত করা হয়েছে। এ নিয়ে ছয়টি বিমান ভূপাতিত হলো।

এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনের ডনবাস অঞ্চলে ‘সেনা অভিযান’ পরিচালনার ঘোষণা দেন। এরপর থেকে ইউক্রেনের বিভিন্ন জায়গায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যাচ্ছে।

স্থল, আকাশ ও সমুদ্রে পথে ইউক্রেইনে সর্বাত্মক আক্রমণ চালাচ্ছে রাশিয়া। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইউরোপের কোনো দেশ একই মহাদেশের অন্য দেশে এত বড় আক্রমণ চালায়নি।

রাশিয়ার সামরিক যানগুলো উত্তরে বেলারুশ ও দক্ষিণে ক্রিমিয়া থেকে শুরু করে একাধিক দিক দিয়ে ঢুকছে।পূর্ব দিকের খারকিভ ও লুহানস্ক অঞ্চল দিয়েও রুশ সেনারা প্রবেশ করছে বলে জানিয়েছে ইউক্রেইন।

দেশটির সীমান্তরক্ষী বাহিনীর বরাত দিয়ে বিবিসি জানিয়েছে, সামরিক যান নিয়ে এগোনোর আগে রুশ বাহিনী গোলাবর্ষণ করছে।

বন্দরনগরী ওডেসার বাইরে অবস্থিত সামরিক ইউনিট পোডিলস্কে রাশিয়ার হামলায় ৬ জন নিহত ও ৭ জন আহত হয়েছে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা। এছাড়া মারিউপোল শহরে একজন নিহতের খবর পাওয়া গেছে।

ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভে বৃহস্পতিবার সকাল ছিল একেবারেই অন্যরকম। অস্বাভাবিক শান্ত হয়ে আছে চারপাশ, রাস্তায় অন্য দিনের তুলনায় সামরিক বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মত।

একজন পর্যটক বিবিসিকে বলেছেন, ভোরে বিমান হামলার পাগলাঘণ্টি বাজার পর তার হোস্টেল তাকে বের করে দিয়েছে এবং শহরজুড়ে সতর্ক ঘণ্টা বাজিয়ে চলেছে সরকার।

রাস্তায় সুটকেস হাতে দাঁড়িয়ে থাকা ওই পর্যটক একা নন, আরো অনেকেই বিবিসিকে বলেছেন, কী করতে হবে বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। অনেকে আবার কথা বলে সময়  নষ্ট করছেন না, দ্রুত পায়ে হেঁটে চলে যাচ্ছেন।

কয়েকজন জানিয়েছেন, তারা মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্ক পাচ্ছেন না। সুপারমার্কেট এবং এটিএম বুথের সামনে মানুষজনের দীর্ঘ সারি দেখা যাওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে।

ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভের কাছে গোলা এসে পড়ার পর শহরটি ছেড়ে বাসিন্দাদের পালানোর খবর আসছে।

বিবিসি জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন মস্কো সময় ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে ইউক্রেইনে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন। এর কয়েক মিনিট পরেই ইউক্রেইনে প্রথম গোলাবর্ষণ হয় এবং ক্ষেপণাস্ত্র হামলা শুরু হয়।

হামলা শুরুর পরপরই কিয়েভে সতর্ক ঘণ্টা বাজতে শুরু করে, একটি ছবিতে দেখা যায় রাস্তায় যানবাহনের সারি। সবাই শহর ছাড়ার চেষ্টা করায় এক্সপ্রেসওয়েতে তৈরি হয়েছে ব্যাপক চাপ।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আসা বিভিন্ন পোস্ট ও ছবি দেশটির বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ার সাক্ষ্য দিচ্ছে। অনেকে বলছেন, তারা বোমার হাত থেকে বাঁচতে বেজমেন্ট ও আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ছুটছেন। টেলিভিশনের ফুটেজে রাস্তায় দলবেঁধে লোকজনকে প্রার্থনা করতে দেখা গেছে।

শেষ মুহূর্তের চেষ্টা হিসেবে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে ‘মানবতার নামে’ যুদ্ধ বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস।

ইউক্রেইন নিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি এক বৈঠকের পর তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট পুতিন, মানবতার দোহাই, আপনার সেনাদের রাশিয়ায় ফিরিয়ে নিন।”

যুদ্ধ ইউক্রেইনের জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি নিয়ে আসবে এবং বিশ্ব অর্থনীতিতে এর পরিণতি সুদূরপ্রসারী হবে বলেও সতর্ক করেছেন তিনি।

ইউক্রেইনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানকে ‘বিনা উসকানিতে অন্যায্য হামলা’ হিসেবে বর্ণনা করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেছেন, মিত্ররা এর জবাব দেবে।

তিনি বলেন, “প্রেসিডেন্ট (ভ্লাদিমির) পুতিন একটি পরিকল্পিত যুদ্ধ শুরু করেছেন, যা মানুষের জীবনে ভয়াবহ বিপর্যয় আর দুর্দশা ডেকে আনবে।

“এই হামলা যে ধ্বংস ডেকে আনবে, যে প্রাণক্ষয়ের কারণ হবে, তার দায় পুরোপুরি রাশিয়াকেই বহন করতে হবে। সেজন্য বিশ্বের কাছে রাশিয়াকে জবাবদিহি করতে হবে।”   

বাইডেন বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও মিত্ররা রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর কী কী ব্যবস্থা নেবে, বৃহস্পতিবারই সেই ঘোষণা আসবে।

আজোভ সাগরে নৌ চলাচল বন্ধ

পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত আজোভ সাগরে বাণিজ্যিক নৌযানের চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে রাশিয়া, তবে নৌ চলাচলের জন্য কৃষ্ণ সাগরের জলপথ খোলা রেখেছে।

বৃহস্পতিবার একাধিক কর্মকর্তা ও শস্য খাতের কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।

বিশ্বের সর্ববৃহৎ গম রপ্তানিকারক দেশ রাশিয়া মূলত তার কৃষ্ণ সাগরের বন্দরগুলো থেকেই জাহাজে শস্য সরবরাহ করে। আজোভ সাগরে দেশটির স্বল্প ধারণক্ষমতার একাধিক অগভীর বন্দর আছে।

লিথুয়ানিয়ায় জরুরি অবস্থা জারি

ইউক্রেইনে রাশিয়ার হামলার পর লিথুয়ানিয়ার দুই সপ্তাহের জন্য জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট গিতানাস নাউসেদা। তবে বিষয়টি পার্লামেন্টে পাস হতে হবে।

বেলারুশ ও রাশিয়ায় বিপুল সৈন্য সমাবেশের প্রেক্ষিতে নেটো জোটভুক্ত দেশগুলোকে সীমান্তে সৈন্য মোতায়েনের পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

এক সময় মস্কোর শাসনে থাকা লিথুয়ানিয়া এখন ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য, সামরিক জোট নেটোতেও তারা আছে।

দেশটির সীমান্ত রয়েছে বেলারুশের সাথে। বেলারুশ থেকেও ইউক্রেইনে আক্রমণ করছে রাশিয়া। রাশিয়ার কালিনিনগ্রাদ পোল্যান্ড ও লিথুনিয়ার মধ্যবর্তী একটি ছিটমহল।

‘কঠোর নিষেধাজ্ঞা’ দেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন

ইউক্রেইনে ‘বর্বরোচিত’ হামলার জন্য রাশিয়ার বিরুদ্ধে ‘নতুন ও কঠোর’ নিষেধাজ্ঞা আরোপের হুঁশিয়ারি দিয়েছে ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন। বৃহস্পতিবারের পর এক জরুরি বৈঠকে নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন জোটের নেতারা।

ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডার লেইন বলেছেন, “ইউরোপে যুদ্ধ ফেরানোর জন্য দায়ী প্রেসিডেন্ট পুতিন। ইইউ তাকে এর জন্য দায়ী করবে।”

রাশিয়ার প্রধান প্রযুক্তিখাত এবং বাণিজ্য ক্ষেত্রগুলোকে নতুন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা হবে জানিয়ে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, “আমরা রাশিয়ার অর্থনৈতিক ভিত্তি এবং তার আধুনিকীকরণের ক্ষমতা দুর্বল করব।ৃ আমরা ইইউতে রাশিয়ান সম্পদ জব্দ করব এবং ইউরোপের বাজারে রাশিয়ান ব্যাংকগুলোর প্রবেশ বন্ধ করব।”

ইউক্রেইনের দুই অঞ্চলকে রাশিয়া স্বীকৃতি দেওয়ার পর বুধবার প্রথম দফায় নিষেধাজ্ঞা দেয় ইইউ। রাশিয়ার শীর্ষ রাজনীতিবিদদের কালো তালিকাভুক্ত করা হয় সেখানে।

ব্রিটিশ জুনিয়র পররাষ্ট্রমন্ত্রী জেমস ক্লেভারলিও বলেছেন, পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার ওপর যে নিষেধাজ্ঞা দেবে, তা হবে ‘নজিরবিহীন’।

স্কাই নিউজকে তিনি বলেন, “আমরা আমাদের আন্তর্জাতিক বন্ধু এবং মিত্রদের সঙ্গে মিলিত হচ্ছি। রাশিয়ার ভয়ঙ্কর এই সিদ্ধান্তের শাস্তি হিসাবে অভূতপূর্ব ও সমন্বিত নিষেধাজ্ঞার আরোপ করতে যাচ্ছি।”