স্বপ্ন পূরণে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছে অদম্য শিক্ষার্থী তামান্না

এখন সময়: শুক্রবার, ২৯ মার্চ , ২০২৪, ০৫:২২:০৮ পিএম

এম আলমগীর, ঝিকরগাছা: স্বপ্ন পূরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা ও দেখা করার জন্য চিঠি লিখেছে যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার বাঁকড়ার জন্মপ্রতিবন্ধী অদম্য শিক্ষার্থী তামান্না নুরা। সোমবার তামান্নার পায়ে লেখা চিঠি তার বাবা রওশন আলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হকের নিকট জমা দিলে ওই দিনই তা জেলা প্রশাসকের নিকট পাঠানো হয়েছে। দরখাস্ত পেয়ে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান তামান্নার বাবাকে ফোন করে মঙ্গলবার দেখা করতে বলেন। জেলা প্রশাসকের সাথে রওশন আলী দেখা করেছেন বলে জানিয়েছেন।

জানা যায়, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে যশোর জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের নির্দেশে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) হুসাইন শওকত ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক বাঁকড়ার আলীপুর গ্রামের দুই হাত ও এক পা বিহীন অদম্য শিক্ষার্থী তামান্নার বাড়িতে আসেন। তার পড়াশুনা ও পারিবারিক সার্বিক খোঁজ-খবর নেন। এসময় তারা তামান্না ইচ্ছার কথা শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শ মোতাবেক তামান্না নুরা পায়ে লেখো একটি দরখাস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে। সেই দরখাস্তে তামান্না নুরা তার ইচ্ছা ও স্বপ্নের কথা লিখেছে। সে লিখেছে, আমার জন্ম থেকে দুটি হাত ও একটি পা নেই। এক পা দিয়ে লিখে আমি এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। আমি পিএসসি ও এসএসসি পরীক্ষার প্রত্যেকটিতেই জিপিএ-৫ অর্জন করেছি। আশা করি, এবারও আমার ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। আমার বাবা একজন ননএমপিওভুক্ত মাদরাসার শিক্ষক। এতোদিন আমার বাবা-মা আমাকে খুব কষ্ট করে এ পর্যন্ত এনেছে। তাছাড়া আমার ছোট ছোট ভাইবোন আছে। আমার চলার পথে আছে অনেক প্রতিবন্ধকতা। এই প্রতিবন্ধকতার পথ পাড়ি দিয়ে আমি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হতে চাই। ছোট বেলা থেকে আমার স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হবো। কিন্তু আমি জানতে পারলাম, আমার শারীরিক ডিস্ অ্যাবেলিটির জন্য সম্ভব হয়ে উঠবে না।এখন আমার স্বপ্ন, আমি ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ে পড়ে বিসিএস ক্যাডার হবো। এমতাবস্থায়, আপনার সার্বিক সহযোগিতা আমার একান্ত প্রয়োজন। এছাড়াও আমার আরো একটা স্বপ্ন আছে, আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই এবং আপনার সাথে সরাসরি দুটো কথা বলতে চাই। আমি জানি, আপনি প্রতিবন্ধীদের প্রতি অনেক সদয়। আপনি মমতাময়ী মা, তাই আপনি এই সন্তানের আবেদনটা রাখবেন। আমার বিশ^াস, স্বপ্নজয়ে আপনি আমার পাশে থাকবেন।

গত ৩ ডিসেম্বর দৈনিক স্পন্দন পত্রিকার প্রথম পাতায় “এক পায়ে তামান্নার এবার এইচএসসি জয়ের স্বপ্ন” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হলে তা জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের নজরে আসে এবং স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) হুসাইন শওকতকে তামান্নার বিষয়ে সার্বিক খোঁজখবর নিতে পাঠান। সেই নির্দেশ মোতাবেক গত বৃহস্পতিবার দুপুরে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক (উপসচিব) হুসাইন শওকত ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক বাঁকড়ার আলীপুর গ্রামের তামান্নার বাড়িতে আসেন। তার পড়াশুনা ও পারবারিক সার্বিক খোঁজ-খবর নেন। এসময় তারা তামান্না ইচ্ছার কথা শুনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে লিখিত আবেদন করার পরামর্শ দেন।

দরখাস্ত পেয়ে সোমবার রাতে জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান তামান্না নুরার বাবা রওশন আলী ফোন দিয়ে দেখা করতে বললে মঙ্গলবার তিনি দেখা করেছেন। রওশন আলী জানান, জেলা প্রশাসক স্যার তামান্নার পায়ের লেখা অবিশ^াস্য বলে আখ্যায়িত করে বলেন, প্রধানমন্ত্রী এ লেখা দেখার পরে অবশ্যই তামান্নার প্রতি নজর দিবেন এবং স্বপ্ন পূরণে পাশে থাকবেন। তিনি আরো বলেন, তামান্না কম্পিউটার ও মোবাইল চালাতে পারে তার ছবি তুলে দিতে বলেছেন এবং তামান্নার আঁকানো ছবিগুলোও দিতে বলেছেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মাহবুবুল হক জানান, আমি প্রথম তামান্নাকে দেখেছি। তার পায়ের লেখা ও ছবি দেখে মুগ্ধ হয়েছি। অত্যন্ত মেধাবী একটি মেয়ে তামান্না। তার স্বপ্ন পূরণে আমরা পাশে থাকতে চাই। এজন্য তামান্নার বাবার দেয়া দরখাস্ত পাওয়ার সাথে সাথে আমি জেলা প্রশাসক স্যারের কাছে ফরোয়ার্ড করেছি।

বিষয়টি জানার জন্য জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খানের কাছে ফোন দিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি।