চৌগাছায় টিকা নিতে শিক্ষার্থীদের ভোগান্তি, মারপিটে একজন আহত

এখন সময়: বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল , ২০২৪, ০৮:১২:৪০ এম

চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি: যশোরের চৌগাছায় করোনা টিকা নিতে স্কুল শিক্ষার্থীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। শনিবার উপজেলা পরিষদ হল রুমে টিকা নিতে গিয়ে শিক্ষার্থীদের এই ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এ সময় চৌগাছা শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিকের শিক্ষার্থীদের মারপিটে চৌগাছা কামিল মাদরাসার আবু মুছা নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মাথা কেটে যায়। টিকা পৌঁছাতে দেরি হওয়া, বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অবহেলা এবং উপজেলা শিক্ষা অফিসের ব্যর্থতায় শিক্ষার্থীরা এই ভোগান্তিতে পড়ে বলে অভিযোগ করেছেন অভিভাবকরা। তাদের অভিযোগ, এভাবে স্বাস্থ্যবিধি না মেনে বিশৃঙ্খল পরিবেশে টিকা দেয়া হলে শিক্ষার্থীরা করোনা সংক্রমিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। 

উপজেলার সব থেকে সুরক্ষিত এলাকা উপজেলা পরিষদ চত্বরে কয়েক হাজার শিক্ষার্থী একসাথে টিকা নিতে প্রবেশ করায় এই বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হলেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা রাখা হয়নি।

জানা গেছে, গত ১২ জানুয়ারি থেকে চৌগাছায় শিক্ষার্থীদের ফাইজারের টিকা দেয়া শুরু হয়। অনিবার্য কারণ দেখিয়ে ১৩ জানুয়ারি টিকা দেয়া বন্ধ রেখে ১৫ জানুয়ারি একদিনে ৪ হাজার শিক্ষার্থীকে টিকা দেয়ার ঘোষণা দেয়া হয়। কথা ছিল ১৫ তারিখে যাদের টিকা দেয়ার কথা সেসব স্কুলের শিক্ষার্থীদের আগে টিকা দেয়া হবে। ১৫ তারিখের নির্ধারিত তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থাদের টিকা সকাল ৮ টা থেকে দেয়া শুরু হবে।  আর যে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ১৩ তারিখে টিকা দেয়ার কথা ছিল তাদের টিকা পরে শনিবার বেলা ১১ টার পরে দেয়া হবে। কিন্তু সকাল সাতটার মধ্যেই শহরের সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী উপজেলা পরিষদ চত্বরে চলে আসে। এবং ১৫ তারিখের নির্ধারিত তিনটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাও সময় মত উপস্থিত হয়। এদিকে সকাল ৮ টায় টিকা দেয়ার কথা থাকলেও টিকা কার্যক্রম শুরু হয় সকাল ৯ টার পরে। সব মিলিয়ে কয়েক হাজার শিক্ষার্থীর ভিড় জমে যায়। এতে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়।

চৌগাছা কামিল মাদরাসার একজন শিক্ষক বলেন, আমাদের একজন ছাত্রকে শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা মেরে মাথা কেটে দিলেও কর্তৃপক্ষের  কেউ খোঁজ নেয়নি।

আহত শিক্ষার্থী আবু মুছার পিতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আমার ছেলে টিকা দিতে গিয়ে আজ মাথা কেটে আহত হয়ে বাড়ি ফিরেছে। তিনি আরো বলেন, যাদের অবহেলার কারণে এ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে তাদের এ দায়িত্ব থেকে অব্যহতি দেয়া উচিত।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিভিন্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক জানান, শিডিউল ভঙ্গ করে তাদের প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী সকাল সাড়ে সাতটার সময় উপজেলা পরিষদ চত্বরে চলে আসে। অথচ এই শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করার জন্য বিদ্যালয়টির কোনো শিক্ষক সেখানে ছিলেন না। ফলে শিক্ষার্থীরা বিশৃঙ্খল পরিবেশের সৃষ্টি করে। তারা ধাক্কাধাক্কি, চিৎকার, চেচামেচি করে পরিবেশ উত্তপ্ত করে তোলে। এতে দূর দুরান্ত থেকে আগত শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে। অনেক শিক্ষার্থী সকাল সাতটায় উপজেলা পরিষদে আসলেও দুপুর দুইটা পর্যন্ত টিকা নিতে পারে নি।

চৌগাছা মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাস্টার কামাল আহমেদ বলেন, যশোর সিভিল সার্জন অফিস থেকে সকাল সাড়ে সাতটায় টিকা দেয়ার কথা থাকলেও দেয়া হয়েছে পৌনে নয়টায়। চৌগাছায় এনে টিকা দেয়া শুরু হয়েছে সকাল দশটা থেকে। আগে থেকেই সকাল আটটা থেকে শিডিউল থাকায় দুই ঘন্টায় যেসব শিক্ষার্থীদের টিকা দেয়ার কথা ছিল তারাসহ অন্যরা একসাথে এসে যাওয়ায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল কালাম রফিকুজ্জামান বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, সমস্যা হয়নি। তিনি আরও বলেন, সকালে টিকা আসার কথা ছিল ৮টায়, আর এসেছে ১০টায়। এছাড়া সরকারি শাহাদৎ পাইলট মাধ্যমিক বিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা কাগজপত্র উল্টাপাল্টা করে রাখার কারণে এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সামনে এমন বিশৃঙ্খলা আর হবে না বলে আশা করছি।