ভাষাসৈনিক জিয়াউল হকের ইন্তেকাল

এখন সময়: শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল , ২০২৪, ০৭:৪৩:৩২ এম

মাগুরা প্রতিনিধি: মাগুরার ভাষাসৈনিক ও বরেণ্য শিক্ষাবিদ খান জিয়াউল হক ইন্তেকাল করেছেন। তিনি শুক্রবার সন্ধ্যা ৭টায় শহরের জামে মসজিদ রোডের নিজ বাসভবনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৫ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে কিছুদিন যাবত অসুস্থতায় ভুগছিলেন। শনিবার দুপুর ২টায় মাগুরা শহরের নোমানী ময়দানে মরহুমের জানাজা শেষে ভায়না পৌর কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।। মৃত্যুকালে তিনি ৫ ছেলে ১ মেয়ে এবং অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন।

শিক্ষাবিদ ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ভাষাসৈনিক শিক্ষক খান জিয়াউল হকের মৃত্যুতে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ নানা শ্রেণি পেশার মানুষ শোক জানিয়েছেন। ১৯২৮ সালের ৮ জুন মাগুরা শহরের ভায়না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তৎকালিন মাগুরা এসডিও কোর্টের নাজির আবুল কাশেম খানের ছেলে খান জিয়াউল হক।

৯৫ বছরের বর্ণাঢ্য জীবনে পিতার চাকরিসূত্রে শৈশব কেঁটেছে নানা জায়গায়। পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করে যশোর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, কোলকাতা রিপন কলেজে এবং যশোর এমএম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও বিএ পড়েছেন। এমএম কলেজে পড়াকালিন সময়ে তিনি পর্যায়ক্রমে ছাত্র সংসদের জিএস ও  প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫২ সালে যশোর এমএম কলেজে ব্যাপক পুলিশি হামলার পর তিনি মাগুরায় চলে আসেন এবং ভাষা আন্দোলনে অন্যতম সংগঠকের ভুমিকা পালন করেন। ২ শে ফেব্রæয়ারি ঢাকায় ছাত্রহত্যার প্রতিবাদে মাগুরায় মিছিল বের হলে মিছিল থেকে পুলিশ খান জিয়াউল হককে আটক করে। খান জিয়াউল হক শিক্ষাজীবন শেষে কিছুদিন সাংবাদিকতা করেন। পরে মাগুরা মডেল হাইস্কুলে যোগ দিয়ে শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। পরবর্তীতে ১৯৬২ সালে মাগুরা এজি একাডেমি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক পদে যোগদান করেন। দীর্ঘ ৪৪ বছর তিনি সেখানেই দায়িত্ব পালন শেষে অবসর গ্রহণ করেন। জীবনের বৃহৎ অংশ তিনি ব্যয় করেছেন শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে। জেলার অসংখ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রতিষ্ঠায় ও অগ্রযাত্রায় তিনি রেখেছেন অসামান্য অবদান। জাতীয় পর্যায়ে তিনি পেয়েছেন বেশ কিছু সম্মননা ও স্বীকৃতি। কর্মের স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ সম্মান রৌপ্য ব্যাঘ্র, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক জাতীয় সমাজ কল্যাণ পুরস্কার, নরেন বিশ্বাস পদক, গোলাম মুস্তাফা সম্মাননা, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক পুরস্কার, আব্দুল হাই গোল্ড মেডেল, হরিশ দত্ত নাট্য পদক, থিয়েটার ইউনিট নাট্য পদক, জেলা শিল্পকলা একাডেমী পদকসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাাননায় ভুষিত হয়েছেন খান জিয়াউল হক।

মাগুরার বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ খান জিয়াউল হকের মৃত্যুতে মাগুরা-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, মাগুরা-২ আসনের সংসদ সদস্য ড. বীরেন শিকদার,  জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আব্দুল ফাত্তাহ, সাধারণ সম্পাদক পঙ্কজ কুন্ডু, সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবু নাসির বাবলু, পৌর মেয়র খুরশীদ হায়দার টুটুল, মাগুরা জেলা বিএনপি’র যুগ্ম আহবায়ক আহসান হাবিব কিশোর, হাসান ইমাম সুজা, জেলা জাতীয় পার্টির আ্হবায়ক সেলিনা হাসান, জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাশেদ মাহমুদ শাহিন, মাগুরা এজি একাডেমী বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট শাখারুল ইসলাম শাকিলসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন মাগুরা টাউন হল ক্লাব, আবৃত্তি সংগঠন কন্ঠবীথি, রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মিলন পরিষদ, রোটারী ক্লাব শোক জানিয়েছে।