আজ বাঘারপাড়া মুক্ত দিবস

এখন সময়: শুক্রবার, ২৯ মার্চ , ২০২৪, ০৫:১৫:১৯ এম

বাঘারপাড়া প্রতিনিধি : আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১ সালের এই দিনে বাঘারপাড়া শত্রু মুক্ত হয়। রক্তঝরা এ দিনে বাঘারপাড়ার বিভিন্ন প্রান্তে পাক হানাদার বাহিনীকে পরাজিত করে বাঘারপাড়া মুক্ত হয়েছিল। এই দিনের পর থেকে পাকহানাদার বাহিনী ও তাদের দোসর রাজাকার আল-বদর বাহিনীর হত্যা, লুট ও নির্যাতনের হাত থেকে মুক্তি পায় বাঘারপাড়ার অসহায় মানুষ। এ দিন বিকেলে বাঘারপাড়া হাইস্কুল মাঠে স্বাধীনতার লাল সবুজ পতাকা উড়িয়ে আনন্দে মেতে উঠে বাঘারপাড়ার কয়েক হাজার মুক্তিকামী মানুষ। এসময় ‘জয় বাংলা’ স্লোগানে শুরু হয় বিজয় উল্লাস।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের সূত্রে জানা যায়, যশোরের সব থেকে বেশি রাজাকার অধ্যুষিত এলাকা ছিল বাঘারপাড়া। এলাকায় যুদ্ধের উল্লেখযোগ্য ঘটনা তেমন একটা নেই। তারপরেও এখানকার মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অদম্য সাহসী। 
বাঘারপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার শহিদুল্লাহ খন্দকার জানান, ১৯৭১ সালের ২৯ জুলাই কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা জানতে পারেন রাজাকার, আলবদর ও পিচ কমিটির নেতারা প্রধান অফিসে সভা করছে। এ অফিস ভবন ছিলো তৎকালিন থানা সিওর বাসা। আজ যেটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের বাস ভবন। মুক্তিযোদ্ধারা সংবাদ পেয়ে এদিন ভোর রাতে পরিকল্পনা করেন রাজাকারদের অফিস উড়িয়ে দেবেন। পরিকল্পনা অনুযায়ি নলডাঙ্গা গ্রামের বজলুর রহমার ওরফে ভইলো জীবন বাজি রেখে অফিসের পেছনের দিকে পাইপ বেয়ে উপরে উঠে গ্রেনেড চার্জ করেন। গ্রেনেড বিষ্ফোরণ না হওয়ায় সব চেষ্টা ব্যর্থ হয়। বিষয়টি রাজাকার বাহিনী বুঝতে পেরে মুক্তিযোদ্ধাদের লক্ষ্য করে ব্রাশ ফায়ার করে। এতে ঘটনা স্থলেই বজলুর রহমান, কড়াইতলার শামসুর রহমান ও নড়াইলের রতন বিশ্বাস শহীদ হন।
এ বিষয়ে তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আব্দুল আজিজ বলেন, ৭ ডিসেম্বর উপজেলার ধলগ্রামে পাকসেনা ও রাজাকারদের সাথে আমাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে আমরা বিজয় লাভ করি। পাকসেনা ও রাজাকারদের হটিয়ে প্রথমে আমরা ধলগ্রাম এলাকা শত্রু মুক্ত করি। এখবর ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানী দোসররা পালিয়ে যায়। আর এ এলাকার মুক্তিযোদ্ধাদের মাঝে ফিরে আসে স্বস্তি।
বাঘারপাড়া মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিরের সাবেক কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা হাসান আলী বলেন, ৭ ডিসেম্বর খাজুরা বাজারের পশ্চিম পাশে চিত্রা নদীর দুই পাড়ে শত্রু বাহিনীর সাথে মিত্র বাহিনীর সম্মুুখ যুদ্ধ হয়। এদিন ভারতের সৈনিকদের সাথে যুক্ত হন অত্র অঞ্চলের মুক্তিযোদ্ধারা। শক্রু বাহিনী সেদিন ট্র্যাংক ও বিমান হামলা চালায় এলাকায়। যুদ্ধে উভয় বাহিনীর শতাধিক নিহত হয়। কয়েকজন ভারতীয় সৈনিকসহ এদিন বাঘারপাড়ার ৭জন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন। তারা হচ্ছেন মালঞ্চি গ্রামের সিদ্দিকুর রহমান ও সোহরাব হোসেন, ইন্দ্রার কোরবান আলী, ধুপখালির জমির উদ্দীন ও আব্দুল বারিক।
স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা জানান, ৮ ডিসেম্বর সকাল থেকে মুক্তিযোদ্ধারা বাঘারপাড়া সদরে জড়ো হতে থাকেন। এরপর সকাল ১০ টায় জাতীয় সংগীতের তালে তালে স্বাধীন দেশের জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে বাঘারপাড়াকে শত্রুমুক্ত ঘোষণা করা হয়।