বিল্লাল হোসেন : যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের রোগীদের ভর্তি টিকিট চলে যাচ্ছে ফিজিওথেরাপি সেন্টারে। অভিযোগ উঠছে, ফিজিওথেরাপি বাণিজ্য জমজমাট করতে হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে আঁতাত করে এই অনিয়ম করা হচ্ছে। সরকারি হাসপাতাল থেকে টিকিটের ফটোকপি বাইরে চলে যাওয়ায় রোগীর গোপনীয়তা ফাঁস হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ২২ আগস্ট যশোর জেনারেল হাসপাতালে মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন মাগুরার শালিখা উপজেলার সাহেব আলীর স্ত্রী শাকিলা (৫৫)। ২৩ আগস্ট চক্রের সদস্যরা তার ভর্তি টিকিটের ফটোকপি সরবরাহ করেন হাসপাতালের সামনে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা সেবা ফিজিওথেরাপি সেন্টারে। একই দিন আরেক রোগী ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ইছাখালি গ্রামের অনিক কুমারের স্ত্রী কনিকা সাহার (৮৫) ভর্তি টিকিটের ফটোকপি সেখানে পাঠানো হয়। পরে টিকিটের ফটোকপি হাতে রোগীর ফিজিওথেরাপি দেয়ার জন্য আসেন ফিজিওথেরাপি সেন্টারের কর্মীরা।
সূত্র জানায়, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের পুরুষ ও মহিলা মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি রোগীদের ফিজিওথেরাপি করতে বাধ্য করা হচ্ছিল। তারা সরকারি হাসপাতালকে পূঁজি করে রীতিমত ব্যবসার ফাঁদ পেতেছিল। এককভাবে বাণিজ্য করতে একাধিক ফিজিওথেরাপি সেন্টারে কর্মীরা পেশীশক্তি প্রয়োগও করছিলেন। বিষয়টি নিয়ে দৈনিক স্পন্দনসহ বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশ হলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। নির্দেশ অমান্য করে ফিজিওথেরাপি কর্মীরা ওয়ার্ডে গেলেই পুলিশকে গ্রেফতার করতে বলা হয়েছিল। এরপর তারা কোনঠাসা হয়ে পড়ে।
অভিযোগ উঠেছে, কয়েকদিন পার হতেই হাসপাতাল সংশ্লিষ্ট কয়েকজনের সাথে আঁতাত করে ফিজিওথেরাপি সেন্টারের কর্মীরা। রোগী প্রতি তাদের কমিশনও দেয়ার জন্য আশ্বস্ত করা হয়। এরপর থেকে চক্রের সদস্যরা রোগীর ভর্তি টিকিট ফিজিওথেরাপি সেন্টারে পৌঁছে দিচ্ছে। টিকিটের ফটোকপি নিয়ে কর্মীরা ওয়ার্ডে এসে অবাধে রোগীদের থেরাপি দিচ্ছেন। সরকারি হাসপাতালে রোগীর ভর্তি টিকিট ফিজিওথেরাপি সেন্টারে সরবরাহের বিষয়টি অনেকেই ভালভাবে নিচ্ছেন না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালে মেডিসিন বিভাগের একজন চিকিৎসক জানান, অনেক রোগী ব্যক্তিগত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। বিবরণ লেখা থাকে টিকিটে। এই টিকিট অচেনা মানুষের কাছে চলে যাচ্ছে। ফলে রোগীর গোপনীয়তা রক্ষা হয়না। রোগীদের গোপনীয়তার বিষয়টি অবশ্যই রক্ষা করা উচিত।
এই বিষয়ে সেবা ফিজিওথেরাপি সেন্টারের মালিক তানজিলা জানান, সরকারি হাসপাতাল থেকে রোগীর ভর্তি টিকিটের ফটোকপি নেয়াটা ভুল হয়েছে। না বুঝতে পেরে এমনটা করেছি। এখন বুঝতে পারছি টিকিটের ফটোকপি নেয়া অনিয়ম।
জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার আরএরমও বজলুর রশিদ টুলু জানান, ভর্তি রোগীদের টিকিটের ফটোকপি নেয়ার বিষয়টা জানার পর কর্তৃপক্ষ ফিজিওথেরাপি সেন্টারের কর্মীদের হাসপাতালে ঢুকতে নিষেধ করেছে। নির্দেশ অমান্য করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।